অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডি বিচে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স মানুষকে রক্তদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার সন্ধ্যায় ইহুদি ধর্মীয় উৎসব হানুকার প্রথম রাত উদযাপন উপলক্ষে জড়ো হওয়া জনতার ওপর বন্দুকধারীদের গুলিতে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এক যৌথ বিবৃতিতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) এবং ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) জানায়, ‘গত সন্ধ্যায় বন্ডি বিচে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের সবাই গভীরভাবে শোকাহত। এই দুঃখজনক সময়ে আমাদের সব চিন্তা নিহতদের, তাদের পরিবার-পরিজন, বন্ধুদের, ইহুদি সম্প্রদায় এবং অস্ট্রেলিয়ার জনগণের সঙ্গে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা আপনাদের পাশে আছি।’
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে প্যাট কামিন্স লেখেন, ‘বন্ডিতে গত রাতের সেই ভয়াবহ ঘটনায় আমি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত। নিহতদের পরিবার, বন্ডির মানুষজন এবং আমাদের ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি আমার হৃদয়ের গভীর সমবেদনা। যদি সম্ভব হয়, অনুগ্রহ করে রক্তদানের জন্য যোগাযোগ করুন।’
সোমবার অ্যাডিলেড ওভালে-যেখানে তৃতীয় টেস্টের প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই দল, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার প্রিমিয়ার পিটার মালিনাউস্কাস জানান, আসন্ন অ্যাশেজ টেস্টকে ঘিরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বুধবার থেকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় একটি বড় আয়োজন শুরু হচ্ছে অ্যাডিলেড ওভালে অ্যাশেজ টেস্ট। বড় যেকোনো ইভেন্টের মতোই ঝুঁকি মূল্যায়ন চলমান থাকে। সিডনিতে গতকালের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাডিলেড ওভালে অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রোটোকল চালু করা হবে। এটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা, তবে এই মুহূর্তে বাড়তি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।’
তিনি এ বিষয়ে অ্যাডিলেড ওভাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করার জন্য দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।
সিডনিতে বসবাসকারী অস্ট্রেলিয়ার অফস্পিনার নাথান লায়ন বলেন, ‘এটি সবার জন্যই একটি ভয়াবহ দিন। আমরা তাদের পাশে আছি, আমাদের চিন্তা ও প্রার্থনা তাদের সঙ্গে রয়েছে। এই মুহূর্তে আমি যা বলব, তা হয়তো কারও কষ্ট লাঘব করবে না, তবু আমরা তাদের কথা ভাবছি এবং আশা করছি তারা এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবে।’
অ্যাশেজ ধারাভাষ্য দিতে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন জানান, হামলার সময় তিনি পরিবারের সঙ্গে বন্ডির একটি রেস্তোরাঁয় ছিলেন, যা পরে লকডাউনে চলে যায়।
যুক্তরাজ্যের ডেইলি টেলিগ্রাফ-এ লেখা এক কলামে ভন বলেন, ‘রেস্তোরাঁয় টেবিলের অপেক্ষায় আমরা পাশের রয়্যাল পাব-এ পানীয় নিচ্ছিলাম। আমি বাইরে ফোনে কথা বলছিলাম, তখন এক বাউন্সার এসে বন্দুকের ইশারা করে আমাকে দ্রুত ভেতরে যেতে বলেন। কিছুক্ষণ পরই বুঝতে পারি, হামলা হয়েছে। রেস্তোরাঁর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং জানানো হয়, নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউ বের হতে পারবে না। সন্ধ্যা ৭টা থেকে প্রায় রাত ৯টা পর্যন্ত আমরা সেখানে আটকে ছিলাম। জীবনে এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়নি-চারপাশে কী ঘটছে তা জানলেও বিশ্বাস করতে চাইছিলাম না।’
এদিকে পার্থে বিগ ব্যাশ লিগের উদ্বোধনী ম্যাচের আগে সিডনি সিক্সার্সের খেলোয়াড়দের বিশেষ অনুমতিতে ফোন ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়, যাতে তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সাধারণত দুর্নীতিবিরোধী নিয়মের কারণে তাদের ফোন জমা রাখতে হয়।
সিক্সার্সের পেসার চার্লি স্টোবো বলেন, ‘আমাদের ফোনগুলো লক করে রাখা হয়েছিল। তবে পরিবার ও বন্ধুদের খোঁজ নিতে আমাদের ফোন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। সবকিছু খুব দ্রুত ঘটে গেছে।’
বুধবার এসসিজিতে অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে মৌসুমের প্রথম ঘরের মাঠের ম্যাচ খেলবে সিডনি সিক্সার্স। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ম্যাচেও অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক / ডেইলি দেশ নিউজ ডটকম 























