রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্তে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে: আইজিপি

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম বলেছেন, ‘আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সবচাইতে বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। কারণ এটাই আমাদের ল্যান্ডমার্ক কেস। এটা যেন কোনোভাবে বিচার ফেল না করে সেজন্য সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের হলরুমে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

বিগত সরকার আমলের দুঃশাসনের প্রসঙ্গ তুলে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, দেশে এমন পরিস্থিতি ছিল বাবা তার সন্তান শহিদ হওয়ার বিষয়টিও বলতে পারেননি। কারণ বলতে গেলে তার ওপর অত্যাচার নেমে আসবে। তাকে জবাব দিতে হবে কেন সন্তান আন্দোলনে গিয়েছিল। মানুষ প্রাণ খুলে শোকে-দুঃখে কাঁদতেও পারেনি, কাঁদার স্বাধীনতাও ছিল না। লুকিয়ে কবর দিতে হয়েছে প্রিয়জনকে। সেখানে হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা অকল্পনীয়। নিশ্চয়ই সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।

জুলাই আন্দোলনে যেসব শহিদদের পোস্টমর্টেম করা হয়নি সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক মামলা হয়েছে যেখানে ৫ আগস্টের পরে যথাযথভাবে মামলা রুজু হয়নি। একই ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে, আবার শহিদের ঘটনায় আমরা পোস্টমর্টেম করতে পারিনি। এমন একটি ঘটনা আমাকে নাড়া দিয়েছে একজন বলছিলেন যে, জুলাই বিপ্লবের সময় শহিদদের উন্মুক্তভাবে কবর দেওয়া কঠিন ছিল। অনেক মা তার সন্তানকে ঝোপ-ঝাড়ে, জঙ্গলে কবর দিয়েছেন। তিনি তার ছেলে শহিদ হওয়ার বিষয়টিও বলতে পারেননি। কারণ বলতে গেলে তার ওপর অত্যাচার নেমে আসবে যে কেন তোমার ছেলে আন্দোলনে গিয়েছিল। কাঁদতেও পারেনি, কাঁদার স্বাধীনতাও ছিল না। যেখানে কবর দিতেই পারছে না সেখানে হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা অকল্পনীয়। এখন এসব মৃত্যুর সুবিচার ও ন্যায়বিচার দিতে হলে আমরা যদি আইনের প্রতি অক্ষরের দিকে চিন্তা করি যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নেই তাহলে এ জাতির প্রতি, আন্দোলনের প্রতি, শহিদদের প্রতি আমরা হয়তোবা ন্যায়বিচার করতে পারব না।

বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় মিলনায়তনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণির সভাপতিত্বে কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটরিয়াল অ্যাডভাইজর অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজি, অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

কর্মশালায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহবুবুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলীসহ রংপুর বিভাগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তারা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। সূত্র: যুগান্তর

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্তে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে: আইজিপি

প্রকাশিত সময় : ১০:০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম বলেছেন, ‘আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সবচাইতে বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। কারণ এটাই আমাদের ল্যান্ডমার্ক কেস। এটা যেন কোনোভাবে বিচার ফেল না করে সেজন্য সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের হলরুমে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

বিগত সরকার আমলের দুঃশাসনের প্রসঙ্গ তুলে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, দেশে এমন পরিস্থিতি ছিল বাবা তার সন্তান শহিদ হওয়ার বিষয়টিও বলতে পারেননি। কারণ বলতে গেলে তার ওপর অত্যাচার নেমে আসবে। তাকে জবাব দিতে হবে কেন সন্তান আন্দোলনে গিয়েছিল। মানুষ প্রাণ খুলে শোকে-দুঃখে কাঁদতেও পারেনি, কাঁদার স্বাধীনতাও ছিল না। লুকিয়ে কবর দিতে হয়েছে প্রিয়জনকে। সেখানে হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা অকল্পনীয়। নিশ্চয়ই সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।

জুলাই আন্দোলনে যেসব শহিদদের পোস্টমর্টেম করা হয়নি সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক মামলা হয়েছে যেখানে ৫ আগস্টের পরে যথাযথভাবে মামলা রুজু হয়নি। একই ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে, আবার শহিদের ঘটনায় আমরা পোস্টমর্টেম করতে পারিনি। এমন একটি ঘটনা আমাকে নাড়া দিয়েছে একজন বলছিলেন যে, জুলাই বিপ্লবের সময় শহিদদের উন্মুক্তভাবে কবর দেওয়া কঠিন ছিল। অনেক মা তার সন্তানকে ঝোপ-ঝাড়ে, জঙ্গলে কবর দিয়েছেন। তিনি তার ছেলে শহিদ হওয়ার বিষয়টিও বলতে পারেননি। কারণ বলতে গেলে তার ওপর অত্যাচার নেমে আসবে যে কেন তোমার ছেলে আন্দোলনে গিয়েছিল। কাঁদতেও পারেনি, কাঁদার স্বাধীনতাও ছিল না। যেখানে কবর দিতেই পারছে না সেখানে হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা অকল্পনীয়। এখন এসব মৃত্যুর সুবিচার ও ন্যায়বিচার দিতে হলে আমরা যদি আইনের প্রতি অক্ষরের দিকে চিন্তা করি যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নেই তাহলে এ জাতির প্রতি, আন্দোলনের প্রতি, শহিদদের প্রতি আমরা হয়তোবা ন্যায়বিচার করতে পারব না।

বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় মিলনায়তনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণির সভাপতিত্বে কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটরিয়াল অ্যাডভাইজর অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজি, অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

কর্মশালায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহবুবুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলীসহ রংপুর বিভাগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তারা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। সূত্র: যুগান্তর