সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় ২০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল: মিডিয়া অফিস

গত দুই দিনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের উত্তরাঞ্চলে ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং প্রায় ৩ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক গাজা শহরের দিকে সরিয়ে দিয়েছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এই তথ্য জানিয়েছে।

শনিবার (১৭ মে) দেওয়া এক বিবৃতিতে গাজার মিডিয়া অফিস বলেছে, “ইসরায়েলের রক্তাক্ত রেকর্ডে আরো একটি অপরাধ যোগ হয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় উত্তর গাজা গভর্নরেটে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন, ইসরায়েলের ধারাবাহিক গণহত্যায়।”

তুরস্কের বার্তাসংস্থা আনাদোলু রবিবার (১৮ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

মিডিয়া অফিস আরো উল্লেখ করেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী উত্তর গাজায় এক হাজারের বেশি বাড়িঘর সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করেছে। একইসঙ্গে, তিন লাখেরও বেশি বেসামরিক মানুষকে জোরপূর্বক গাজা শহরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে, যেখানে তাদের আশ্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যাম্বুলেন্স ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের বোমা হামলার স্থানে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে, যার ফলে প্রায় ১৪০ জনের মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলি ড্রোনগুলো উত্তর গাজার জাবালিয়া ক্যাম্পের তেল আল-জাতার এলাকা, বাইত লাহিয়া শহর ও এর আশপাশের শরণার্থী শিবিরে স্থাপন করা শত শত তাঁবু পুড়িয়ে দিয়েছে।

গাজার মিডিয়া অফিস এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা ও সমর্থনকে গভীর উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছে।

গাজা শহরের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে মিডিয়া অফিস বলেছে, “শহরে তাঁবু বা পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব রয়েছে, যার ফলে হাজার হাজার পরিবার রাস্তায় বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে, বিশেষ করে আল-জালা স্ট্রিট ও আল-সাফতাউই এলাকায়। খাদ্য, পানি ও ওষুধের অভাব এবং একটানা অবরোধ ও বিমান হামলার মধ্যে তারা চরম মানবিক সংকটে দিন কাটাচ্ছে।”

গাজার মিডিয়া অফিস ‘গণহত্যা’ বন্ধ করার জন্য তাৎক্ষণিক ও কার্যকর আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ, মরদেহ উদ্ধার ও আহতদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক দল পাঠানো, মানবিক, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রবেশের জন্য অবিলম্বে সীমান্ত ক্রসিংগুলো খুলে দেওয়া এবং ইসরায়েলি নেতাদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক চার দিনের উপসাগরীয় সফরের সময় ইসরায়েলি বাহিনী ৩৭৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর আগের চার দিনে নিহতের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০০ জন, যা ট্রাম্পের সফরকালে প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য, পানি ও ওষুধসহ সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় ২০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল: মিডিয়া অফিস

প্রকাশিত সময় : ১০:৫২:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

গত দুই দিনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের উত্তরাঞ্চলে ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং প্রায় ৩ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক গাজা শহরের দিকে সরিয়ে দিয়েছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এই তথ্য জানিয়েছে।

শনিবার (১৭ মে) দেওয়া এক বিবৃতিতে গাজার মিডিয়া অফিস বলেছে, “ইসরায়েলের রক্তাক্ত রেকর্ডে আরো একটি অপরাধ যোগ হয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় উত্তর গাজা গভর্নরেটে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন, ইসরায়েলের ধারাবাহিক গণহত্যায়।”

তুরস্কের বার্তাসংস্থা আনাদোলু রবিবার (১৮ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

মিডিয়া অফিস আরো উল্লেখ করেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী উত্তর গাজায় এক হাজারের বেশি বাড়িঘর সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করেছে। একইসঙ্গে, তিন লাখেরও বেশি বেসামরিক মানুষকে জোরপূর্বক গাজা শহরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে, যেখানে তাদের আশ্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যাম্বুলেন্স ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের বোমা হামলার স্থানে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে, যার ফলে প্রায় ১৪০ জনের মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলি ড্রোনগুলো উত্তর গাজার জাবালিয়া ক্যাম্পের তেল আল-জাতার এলাকা, বাইত লাহিয়া শহর ও এর আশপাশের শরণার্থী শিবিরে স্থাপন করা শত শত তাঁবু পুড়িয়ে দিয়েছে।

গাজার মিডিয়া অফিস এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা ও সমর্থনকে গভীর উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছে।

গাজা শহরের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে মিডিয়া অফিস বলেছে, “শহরে তাঁবু বা পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব রয়েছে, যার ফলে হাজার হাজার পরিবার রাস্তায় বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে, বিশেষ করে আল-জালা স্ট্রিট ও আল-সাফতাউই এলাকায়। খাদ্য, পানি ও ওষুধের অভাব এবং একটানা অবরোধ ও বিমান হামলার মধ্যে তারা চরম মানবিক সংকটে দিন কাটাচ্ছে।”

গাজার মিডিয়া অফিস ‘গণহত্যা’ বন্ধ করার জন্য তাৎক্ষণিক ও কার্যকর আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ, মরদেহ উদ্ধার ও আহতদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক দল পাঠানো, মানবিক, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রবেশের জন্য অবিলম্বে সীমান্ত ক্রসিংগুলো খুলে দেওয়া এবং ইসরায়েলি নেতাদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক চার দিনের উপসাগরীয় সফরের সময় ইসরায়েলি বাহিনী ৩৭৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর আগের চার দিনে নিহতের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০০ জন, যা ট্রাম্পের সফরকালে প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য, পানি ও ওষুধসহ সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।