শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধানমণ্ডিতে ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ করে ওসি পেলেন বিশেষ পুরস্কার

রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সোমবার গভীর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মব’ নিয়ন্ত্রণের সফলতায় ধানমণ্ডি থানার ওসিকে পুরস্কৃত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

ঢাকা পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বুধবার নিজ কার্যালয়ে ওসি ক্যশৈন্যু মারমাকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেন

ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পেশাদারিত্ব ও ধৈর্য্যের সঙ্গে মব নিয়ন্ত্রণে অনুকরণীয় উদাহরণ স্থাপনের স্বীকৃতিস্বরূপ ধানমণ্ডি থানার ওসিকে বিশেষ পুরস্কৃত করা হয়েছে।’

ডিএমপি কমিশনার ওই সময় ওসির কাজের প্রশংসা করে বলেন, জনতার উত্তেজিত মুহূর্তে পরিস্থিতি বুঝে শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টি সামলানো সকল পুলিশের জন্য অনুকরণীয়।

ঘটনাটি ঘটে সোমবার রাত ধানমণ্ডি থানার এলাকায়। ওই দিন একদল যুবক হাক্কানী পাবলিশার্সের মালিক গোলাম মোস্তফার বাসার সামনে জড়ো হয়ে হইচই শুরু করে এবং বাসায় প্রবেশের চেষ্টা চালায়।

তারা ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ থাকার অভিযোগে স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ আসার পর ওই ‘দোসর’ গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে তারা।

যুবকরা নিজেদের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা’ হিসেবে পরিচয় দেয়। এ ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওসির সঙ্গে ওই ‘নেতাদের’ বাগবিতণ্ডা হয়।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ধানমণ্ডি থানার পুলিশ ওই যুবকদের মধ্যে তিনজনকে জামার কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে থানা নিয়ে যায়। বাকিরা ভয়ে ছুটে পালায়।পরের দিন মঙ্গলবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ তাদের ছাড়িয়ে আনেন। মুচলেকা দিয়ে মুক্ত করায় তিনি কিছুটা বিব্রতবোধ করেন।

তিনজন যুবকের নাম- পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বী (২৬); সংগঠনটির ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ফারহান সরকার দীনা (২৬); এবং মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের ছাত্র মোহাম্মাদউল্লাহ জিসান (২৪), যিনি একই সংগঠনের কর্মী ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে সহায়ক হিসেবে কাজ করেন।

এই তিন নেতাকে মুক্ত করানোর ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েন হান্নান মাসউদ। বুধবার তাকে নিজ দলের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বীকে নৈতিকতা লঙ্ঘনের কারণে অব্যাহতি দিয়েছে। তারপরও আপনি সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে আটককৃত তিনজনের মুক্তির জন্য মুচলেকা প্রদান করে তাদের জামিন করিয়েছেন।’

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী তিন দিনের মধ্যে শৃঙ্খলা কমিটির প্রধানের নিকট ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানাতে বলা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ধানমণ্ডিতে ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ করে ওসি পেলেন বিশেষ পুরস্কার

প্রকাশিত সময় : ১২:২০:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সোমবার গভীর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মব’ নিয়ন্ত্রণের সফলতায় ধানমণ্ডি থানার ওসিকে পুরস্কৃত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

ঢাকা পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বুধবার নিজ কার্যালয়ে ওসি ক্যশৈন্যু মারমাকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেন

ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পেশাদারিত্ব ও ধৈর্য্যের সঙ্গে মব নিয়ন্ত্রণে অনুকরণীয় উদাহরণ স্থাপনের স্বীকৃতিস্বরূপ ধানমণ্ডি থানার ওসিকে বিশেষ পুরস্কৃত করা হয়েছে।’

ডিএমপি কমিশনার ওই সময় ওসির কাজের প্রশংসা করে বলেন, জনতার উত্তেজিত মুহূর্তে পরিস্থিতি বুঝে শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টি সামলানো সকল পুলিশের জন্য অনুকরণীয়।

ঘটনাটি ঘটে সোমবার রাত ধানমণ্ডি থানার এলাকায়। ওই দিন একদল যুবক হাক্কানী পাবলিশার্সের মালিক গোলাম মোস্তফার বাসার সামনে জড়ো হয়ে হইচই শুরু করে এবং বাসায় প্রবেশের চেষ্টা চালায়।

তারা ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ থাকার অভিযোগে স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ আসার পর ওই ‘দোসর’ গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে তারা।

যুবকরা নিজেদের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা’ হিসেবে পরিচয় দেয়। এ ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওসির সঙ্গে ওই ‘নেতাদের’ বাগবিতণ্ডা হয়।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ধানমণ্ডি থানার পুলিশ ওই যুবকদের মধ্যে তিনজনকে জামার কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে থানা নিয়ে যায়। বাকিরা ভয়ে ছুটে পালায়।পরের দিন মঙ্গলবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ তাদের ছাড়িয়ে আনেন। মুচলেকা দিয়ে মুক্ত করায় তিনি কিছুটা বিব্রতবোধ করেন।

তিনজন যুবকের নাম- পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বী (২৬); সংগঠনটির ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ফারহান সরকার দীনা (২৬); এবং মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের ছাত্র মোহাম্মাদউল্লাহ জিসান (২৪), যিনি একই সংগঠনের কর্মী ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে সহায়ক হিসেবে কাজ করেন।

এই তিন নেতাকে মুক্ত করানোর ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েন হান্নান মাসউদ। বুধবার তাকে নিজ দলের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বীকে নৈতিকতা লঙ্ঘনের কারণে অব্যাহতি দিয়েছে। তারপরও আপনি সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে আটককৃত তিনজনের মুক্তির জন্য মুচলেকা প্রদান করে তাদের জামিন করিয়েছেন।’

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী তিন দিনের মধ্যে শৃঙ্খলা কমিটির প্রধানের নিকট ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানাতে বলা হয়েছে।