মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফেনীতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম, আশ্রয়ে ৫ হাজারের বেশি মানুষ

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবল স্রোতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও তা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পরশুরামে ১২টি এবং ফুলগাজীতে ৮টিসহ তিনটি নদীর তীরবর্তী অন্তত ২০টি বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মুহুরী নদীর ১০টি, কহুয়া নদীর ৬টি এবং সিলোনিয়া নদীর ৪টি অংশে ভাঙনের ফলে অন্তত ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে বহু মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত জেলার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার ৫৯৩টি পরিবারের ৫ হাজার ৭৭৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ১৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলাজুড়ে মোট ১৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে।

বন্যায় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল। বন্ধ হয়ে গেছে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল। তবুও অনেক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে যাতায়াত করছেন।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ১২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। জেলাজুড়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২ হাজার ৫৪৭ জন দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক এবং চালু হয়েছে একটি কন্ট্রোল রুম।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ছিল ৪৪১ মিলিমিটার। আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কমার সম্ভাবনা রয়েছে এবং নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, হালদা নদীর পানিও আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু, ঝুলন্ত  লাশ উদ্ধার

ফেনীতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম, আশ্রয়ে ৫ হাজারের বেশি মানুষ

প্রকাশিত সময় : ১১:৫৩:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবল স্রোতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও তা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পরশুরামে ১২টি এবং ফুলগাজীতে ৮টিসহ তিনটি নদীর তীরবর্তী অন্তত ২০টি বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মুহুরী নদীর ১০টি, কহুয়া নদীর ৬টি এবং সিলোনিয়া নদীর ৪টি অংশে ভাঙনের ফলে অন্তত ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে বহু মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত জেলার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার ৫৯৩টি পরিবারের ৫ হাজার ৭৭৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ১৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলাজুড়ে মোট ১৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে।

বন্যায় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল। বন্ধ হয়ে গেছে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল। তবুও অনেক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে যাতায়াত করছেন।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ১২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। জেলাজুড়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২ হাজার ৫৪৭ জন দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক এবং চালু হয়েছে একটি কন্ট্রোল রুম।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ছিল ৪৪১ মিলিমিটার। আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কমার সম্ভাবনা রয়েছে এবং নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, হালদা নদীর পানিও আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।