মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘যে ভাইকে জামিনে বাহির কইরা থাকতে দিছি, সেই আমার স্ত্রী-সন্তানরে মারল’

“যে ভাইকে জেল থেকে জামিনে বাহির কইরা নিজের ঘরে থাকতে দিছি, সেই ভাই আমার স্ত্রী-সন্তানকে মারল; আমি কেমনে মাইনা নেই। তারা তো কোনো দোষ করেনি। কেন আমাকে নিঃস্ব করে দিলি ভাই? আমি কাদের নিয়ে বাঁচব।”এভাবেই আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন সন্তান ও স্ত্রী হারানো রফিকুল ইসলাম।

সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে ময়মনসিংহের ভালুকা পৌর শহরের পনাশাইল এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না আক্তার (২৫) এবং এই দম্পতির দুই সন্তান রাইসা আক্তার (৭) ও নীরব হোসেনের (২) গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ভাড়া বাসার দুইটি কক্ষে স্ত্রী সন্তান ও অভিযুক্ত ছোট ভাই নজরুল ইসলামকে নিয়ে বসবাস করতেন রফিকুল ইসলাম।

নিহত ময়না ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের পায়লাবর চৌরাস্তা গ্রামের আফতাব উদ্দিনের মেয়ে।

ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার সেনের বাজার গ্রামের সন্তু মিয়ার ছেলে। তিনি ভালুকার রাসেল স্পিনিং মিলে শ্রমিকের চাকরি করেন।

রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমার ভাই একটি হত্যা মামলার আসামি। তাকে আড়াই মাস আগে ৪০ হাজার টাকা দেনা করে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছি। তারপর সে আমার সাথেই থেকে অটোরিকশা চালাত। এক রুমের বাসায় থাকতে কষ্ট হত, তাই দেড় মাস আগে পনাশাইল এলাকায় দুই রুমের ভাড়া বাসা নেই। একটি কক্ষ আমি পরিবার নিয়ে আর অন্য কক্ষে সে থাকত।”

তিনি বলেন, “মাঝে মধ্যে খাবার নিয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে তার (নজরুল ইসলাম) ঝগড়া হত। আর কোন সমস্যা ছিল না। গতকাল রাত ৮টার সময় আমি ডিউটিতে যাই, পরে সাড়ে ১০টার দিকে বাসায় কল দিলে ময়নার নম্বর বন্ধ পাই। তারপর নজরুলের নম্বরে কল দিয়ে ময়নার সঙ্গে কথা বলি।”

রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, “আজ সকালে বাসায় এসে দরজা বন্ধ পাই এবং গেটও তালাবদ্ধ ছিল। পরে বাসার মালিক নিয়ে তালা ভেঙে আমার স্ত্রী ও সন্তানদের রক্তাক্ত লাশ দেখি। আমার ভাইয়ের খোঁজে পাইনি। তার মোবাইলও বন্ধ। এমন করবে জানলে ভাইকে জেল থেকে আমি বের করতাম না। কেন আমার এমন ক্ষতি করলি ভাই?”

নিহত ময়নার বোন আছমা আক্তার বলেন, “এসে দেখি, আমার বোন ও তার দুই সন্তানের লাশ খাটের ওপর পড়ে আছে। আমার বোন জামাই খুবই ভালো মানুষ। ৯-১০ বছর আগে তাদের বিয়ে হলেও কোনদিন ঝগড়া হয়নি। নজরুল আমার বোন, ভাগ্নে ও ভাগ্নিকে মেরেছে। তা না হলে সে পলাতক কেন?”

বাসাটির মালিক হৃদয় হাসান হাইয়ুম বলেন, “দেড় মাস আগে রফিকুল বাসা ভাড়া নিয়েছেন। একটি কক্ষে তিনি ও তার পরিবার এবং অন্য কক্ষে তার ভাই নজরুল ইসলাম থাকত। তাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য দেখিনি। কেন এমন ঘটনা তা বলতে পারছি না।”

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, “প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদনে নিহত নারী ও দুই সন্তানের গলায় কাটা দাগ ছাড়া অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যার আগে তাদের অচেতন করা হয়েছিলো কিনা তা ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা পরীক্ষার পর জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। তদন্ত চলছে। নজরুলকে ধরার চেষ্টা করছি।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু, ঝুলন্ত  লাশ উদ্ধার

‘যে ভাইকে জামিনে বাহির কইরা থাকতে দিছি, সেই আমার স্ত্রী-সন্তানরে মারল’

প্রকাশিত সময় : ১০:৫৫:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

“যে ভাইকে জেল থেকে জামিনে বাহির কইরা নিজের ঘরে থাকতে দিছি, সেই ভাই আমার স্ত্রী-সন্তানকে মারল; আমি কেমনে মাইনা নেই। তারা তো কোনো দোষ করেনি। কেন আমাকে নিঃস্ব করে দিলি ভাই? আমি কাদের নিয়ে বাঁচব।”এভাবেই আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন সন্তান ও স্ত্রী হারানো রফিকুল ইসলাম।

সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে ময়মনসিংহের ভালুকা পৌর শহরের পনাশাইল এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না আক্তার (২৫) এবং এই দম্পতির দুই সন্তান রাইসা আক্তার (৭) ও নীরব হোসেনের (২) গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ভাড়া বাসার দুইটি কক্ষে স্ত্রী সন্তান ও অভিযুক্ত ছোট ভাই নজরুল ইসলামকে নিয়ে বসবাস করতেন রফিকুল ইসলাম।

নিহত ময়না ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের পায়লাবর চৌরাস্তা গ্রামের আফতাব উদ্দিনের মেয়ে।

ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার সেনের বাজার গ্রামের সন্তু মিয়ার ছেলে। তিনি ভালুকার রাসেল স্পিনিং মিলে শ্রমিকের চাকরি করেন।

রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমার ভাই একটি হত্যা মামলার আসামি। তাকে আড়াই মাস আগে ৪০ হাজার টাকা দেনা করে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছি। তারপর সে আমার সাথেই থেকে অটোরিকশা চালাত। এক রুমের বাসায় থাকতে কষ্ট হত, তাই দেড় মাস আগে পনাশাইল এলাকায় দুই রুমের ভাড়া বাসা নেই। একটি কক্ষ আমি পরিবার নিয়ে আর অন্য কক্ষে সে থাকত।”

তিনি বলেন, “মাঝে মধ্যে খাবার নিয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে তার (নজরুল ইসলাম) ঝগড়া হত। আর কোন সমস্যা ছিল না। গতকাল রাত ৮টার সময় আমি ডিউটিতে যাই, পরে সাড়ে ১০টার দিকে বাসায় কল দিলে ময়নার নম্বর বন্ধ পাই। তারপর নজরুলের নম্বরে কল দিয়ে ময়নার সঙ্গে কথা বলি।”

রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, “আজ সকালে বাসায় এসে দরজা বন্ধ পাই এবং গেটও তালাবদ্ধ ছিল। পরে বাসার মালিক নিয়ে তালা ভেঙে আমার স্ত্রী ও সন্তানদের রক্তাক্ত লাশ দেখি। আমার ভাইয়ের খোঁজে পাইনি। তার মোবাইলও বন্ধ। এমন করবে জানলে ভাইকে জেল থেকে আমি বের করতাম না। কেন আমার এমন ক্ষতি করলি ভাই?”

নিহত ময়নার বোন আছমা আক্তার বলেন, “এসে দেখি, আমার বোন ও তার দুই সন্তানের লাশ খাটের ওপর পড়ে আছে। আমার বোন জামাই খুবই ভালো মানুষ। ৯-১০ বছর আগে তাদের বিয়ে হলেও কোনদিন ঝগড়া হয়নি। নজরুল আমার বোন, ভাগ্নে ও ভাগ্নিকে মেরেছে। তা না হলে সে পলাতক কেন?”

বাসাটির মালিক হৃদয় হাসান হাইয়ুম বলেন, “দেড় মাস আগে রফিকুল বাসা ভাড়া নিয়েছেন। একটি কক্ষে তিনি ও তার পরিবার এবং অন্য কক্ষে তার ভাই নজরুল ইসলাম থাকত। তাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য দেখিনি। কেন এমন ঘটনা তা বলতে পারছি না।”

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, “প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদনে নিহত নারী ও দুই সন্তানের গলায় কাটা দাগ ছাড়া অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যার আগে তাদের অচেতন করা হয়েছিলো কিনা তা ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা পরীক্ষার পর জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। তদন্ত চলছে। নজরুলকে ধরার চেষ্টা করছি।”