সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধানমন্ডি ৩২-এ কড়া নিরাপত্তা, কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না

১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কার্যক্রমে নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী যাতে সমবেত হতে না পারে সেজন্য কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ, র‌্যাব, আনসার এমনকি কোথাও কোথাও যৌথবাহিনীর সদস্যরা পাহারায় রয়েছেন।

এই দিনটি সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিলে পতন ঘটে আওয়ামী স্বৈরশাসনের। এরপর গত বছর ১৫ আগস্ট দলটির নেতাকর্মীরা মাঠে না নামলেও এবারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোর প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে।

শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় গতকাল ১৩ আগস্ট ফেসবুকে আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) নেতাকর্মীদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাড়ি ভেঙেছে তো কি হয়েছে। সেখানে তো জায়গাটা রয়েছে। জায়গা তো আর কেউ নিয়ে যায়নি।’

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ১ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত গোপন স্থান থেকে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য নানাভাবে অস্থিরতা তৈরি করেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়। ১৫ আগস্ট ঘিরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে জানান দিতে চায় যে, তারা আছেন এবং থাকবেন। মূলত এর পরিপ্রেক্ষিতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর।

পুলিশ বলছে, সরকারের নির্দেশনা রয়েছে ১৫ আগস্ট উপলক্ষ্যে নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ সমবেত হতে পারবে না। এরই মধ্যে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গত কয়েকমাসে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করেছে। কাজেই কোনোরকম ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। যারা সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা হরণ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ঘুরে দেখা যায়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পুরো ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকা ঘিরে রেখেছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশের এপিসি কার ও রায়ট কার মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। রাতে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ফুল নিয়ে আসতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ। তবে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না ও কেউ প্রবেশের চেষ্টা করলেও তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আসেনি। পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

ধানমন্ডিতে দায়িত্বে রয়েছেন ডিএমপির এসআই লতিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিকেল ৪টায় এখানে ডিউটিতে এসেছি। এখনো কোনো সমস্যা হয়নি। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কেউ আসেনি। এলেও পুলিশ সতর্ক রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করা হবে।’

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। রাতেও থাকবে। পুরো ধানমন্ডি ৩২ নম্বর পুলিশের কর্ডনে রয়েছে। সেখানে কাউকে কোনো অনুষ্ঠান বা অনুষ্ঠানের নামে অরাজকতা করতে দেওয়া হবে না।’

কয়েকদিন আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে যারা অরাজকতা করবে, বিশেষ করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নাশকতামূলক কার্যক্রম ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ নেবে।’

এদিকে, শুধু ধানমন্ডি ৩২ নয়, রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও যৌথবাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তায় কাজ করছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ধানমন্ডি ৩২-এ কড়া নিরাপত্তা, কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না

প্রকাশিত সময় : ১১:০৭:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫

১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কার্যক্রমে নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী যাতে সমবেত হতে না পারে সেজন্য কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ, র‌্যাব, আনসার এমনকি কোথাও কোথাও যৌথবাহিনীর সদস্যরা পাহারায় রয়েছেন।

এই দিনটি সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিলে পতন ঘটে আওয়ামী স্বৈরশাসনের। এরপর গত বছর ১৫ আগস্ট দলটির নেতাকর্মীরা মাঠে না নামলেও এবারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোর প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে।

শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় গতকাল ১৩ আগস্ট ফেসবুকে আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) নেতাকর্মীদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাড়ি ভেঙেছে তো কি হয়েছে। সেখানে তো জায়গাটা রয়েছে। জায়গা তো আর কেউ নিয়ে যায়নি।’

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ১ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত গোপন স্থান থেকে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য নানাভাবে অস্থিরতা তৈরি করেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়। ১৫ আগস্ট ঘিরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে জানান দিতে চায় যে, তারা আছেন এবং থাকবেন। মূলত এর পরিপ্রেক্ষিতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর।

পুলিশ বলছে, সরকারের নির্দেশনা রয়েছে ১৫ আগস্ট উপলক্ষ্যে নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ সমবেত হতে পারবে না। এরই মধ্যে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গত কয়েকমাসে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করেছে। কাজেই কোনোরকম ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। যারা সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা হরণ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ঘুরে দেখা যায়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পুরো ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকা ঘিরে রেখেছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশের এপিসি কার ও রায়ট কার মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। রাতে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ফুল নিয়ে আসতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ। তবে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না ও কেউ প্রবেশের চেষ্টা করলেও তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আসেনি। পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

ধানমন্ডিতে দায়িত্বে রয়েছেন ডিএমপির এসআই লতিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিকেল ৪টায় এখানে ডিউটিতে এসেছি। এখনো কোনো সমস্যা হয়নি। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কেউ আসেনি। এলেও পুলিশ সতর্ক রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করা হবে।’

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। রাতেও থাকবে। পুরো ধানমন্ডি ৩২ নম্বর পুলিশের কর্ডনে রয়েছে। সেখানে কাউকে কোনো অনুষ্ঠান বা অনুষ্ঠানের নামে অরাজকতা করতে দেওয়া হবে না।’

কয়েকদিন আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে যারা অরাজকতা করবে, বিশেষ করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নাশকতামূলক কার্যক্রম ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ নেবে।’

এদিকে, শুধু ধানমন্ডি ৩২ নয়, রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও যৌথবাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তায় কাজ করছে।