শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মন্দের ভালোয়’ শেষ হল জলবায়ু সম্মেলন

কয়লার ব্যবহার বন্ধ এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্যে এবারের জলবায়ু সম্মেলনে এক হয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। তবে প্রায় দুই সপ্তাহের সম্মেলনেও একমত হতে পারেননি কেউ। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময় পেরোনোর পর শনিবার রাতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। আর এর মধ্যদিয়েই শেষ হল এবারের সম্মেলন। যদিও পরিস্থিতি বিবেচনায় চুক্তিটিকে নামমাত্র হিসাবেই দেখছেন পরিবেশবাদীরা।

নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী প্রায় ২০০টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রেও অনেক দেশের মধ্যেই রয়েছে অসন্তোষ।

চুক্তিতে বিশ্বেনেতাদের কার্বন নির্গমন রোধে শক্তিশালী পরিকল্পনা নিয়ে আগামী বছর ফিরে আসতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ২০২৫ সালের মধ্যে ধনী দেশগুলোকে অন্তত দ্বিগুণ তহবিল দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো সহায়তা পাবে।

তবে এই চুক্তির মধ্যদিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতার সমস্যা সমাধান করা যায়নি। কারণ পরবর্তী দশকে প্রতিটি জাতিকে কতটা এবং কত দ্রুত কার্বন নির্গমন কমাতে হবে সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটিই অমীমাংসিত রাখা হয়েছে চুক্তিতে।

কয়লার ব্যবহার বন্ধ এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা পূরণে এই চুক্তি মোটেও কার্যকর নয় বলেই মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। চুক্তির খসড়ায় প্রথমে এ বিষয়ে বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ থাকলেও পরে বিভিন্ন দেশের আপত্তিতে তা পরিবর্তন করা হয়।

তবে চুক্তিটি একটি সুস্পষ্ট ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করেছে যে সব দেশকে অবিলম্বে, বৈশ্বিক তাপমাত্রার বিপর্যয়কর বৃদ্ধি রোধ করতে আরও অনেক কিছু করতে হবে।

চুক্তিতে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন প্রায় অর্ধেকে কমিয়ে আনা থেকে শুরু করে আরেকটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, মিথেন নির্গমন রোধ করার জন্য বিশ্বের যে নির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত তার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে৷ এ ছাড়া লক্ষ্যে পৌঁছাতে অগ্রগতি বা ব্যর্থতার জন্য নির্দিষ্ট দেশকে দায়বদ্ধতা দেখাতে নতুন নিয়ম ঠিক করা হয়েছে।

চূড়ান্ত চুক্তিতে কয়লার ব্যবহার কমানোর কথা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে সেখানে বন্ধ করার কথা ছিল। ভারতের পক্ষ থেকেই মূলত এই পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয়েছিল।

সুইজারল্যান্ডের প্রতিনিধি সিমোনেটা সোমারুগা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে চুক্তিপত্রের এই ভাষা পরিবর্তনের বিষয়টির নিন্দা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ফেজ ডাউন প্রয়োজন নয়, আমাদের প্রয়োজন ফেজ আউট করা।’ অর্থাৎ, কয়লার ব্যবহার কমানো নয়, বন্ধ করা প্রয়োজন।

সুইজারল্যান্ডের এই প্রতিনিধি অভিযোগ করেন, “শেষ মুহুর্তে কয়লার বিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। অন্যান্য দেশ থেকে কোন মতামত ছাড়াই পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ পরিবর্তন বিষয়ে আর মতামতের সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমরা প্রক্রিয়া এবং শেষ মুহূর্তের পরিবর্তন উভয় বিষয়েই হতাশ। এতে আমরা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রাখতে পারব না বরং লক্ষ্যে এটি লক্ষ্যে পৌঁছানো আরও কঠিন করে তুলবে।”

জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসও বলেছেন, “আমাদের ভঙ্গুর এই গ্রহটি একটি সুতোয় ঝুলছে। আমরা এখনও ভয়াবহ জলবায়ু বিপর্যয় আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে।”

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা গেলে তা মানবজাতিকে জলবায়ুর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি এড়াতে সাহায্য করবে।

এজন্যই বিশ্ব নেতারা ২০১৫ সালে ব্যাপক নির্গমন হ্রাসের মাধ্যমে ১.৫ ডিগ্রি থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বিশ্বকে উষ্ণতা বৃদ্ধি থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এবারের জলবায়ু সম্মেলনও অনেকটা অমীমাংসিতভাবেই শেষ হল।

সূত্র: বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

মন্দের ভালোয়’ শেষ হল জলবায়ু সম্মেলন

প্রকাশিত সময় : ১০:৫৮:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১

কয়লার ব্যবহার বন্ধ এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্যে এবারের জলবায়ু সম্মেলনে এক হয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। তবে প্রায় দুই সপ্তাহের সম্মেলনেও একমত হতে পারেননি কেউ। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময় পেরোনোর পর শনিবার রাতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। আর এর মধ্যদিয়েই শেষ হল এবারের সম্মেলন। যদিও পরিস্থিতি বিবেচনায় চুক্তিটিকে নামমাত্র হিসাবেই দেখছেন পরিবেশবাদীরা।

নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী প্রায় ২০০টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রেও অনেক দেশের মধ্যেই রয়েছে অসন্তোষ।

চুক্তিতে বিশ্বেনেতাদের কার্বন নির্গমন রোধে শক্তিশালী পরিকল্পনা নিয়ে আগামী বছর ফিরে আসতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ২০২৫ সালের মধ্যে ধনী দেশগুলোকে অন্তত দ্বিগুণ তহবিল দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো সহায়তা পাবে।

তবে এই চুক্তির মধ্যদিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতার সমস্যা সমাধান করা যায়নি। কারণ পরবর্তী দশকে প্রতিটি জাতিকে কতটা এবং কত দ্রুত কার্বন নির্গমন কমাতে হবে সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটিই অমীমাংসিত রাখা হয়েছে চুক্তিতে।

কয়লার ব্যবহার বন্ধ এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা পূরণে এই চুক্তি মোটেও কার্যকর নয় বলেই মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। চুক্তির খসড়ায় প্রথমে এ বিষয়ে বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ থাকলেও পরে বিভিন্ন দেশের আপত্তিতে তা পরিবর্তন করা হয়।

তবে চুক্তিটি একটি সুস্পষ্ট ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করেছে যে সব দেশকে অবিলম্বে, বৈশ্বিক তাপমাত্রার বিপর্যয়কর বৃদ্ধি রোধ করতে আরও অনেক কিছু করতে হবে।

চুক্তিতে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন প্রায় অর্ধেকে কমিয়ে আনা থেকে শুরু করে আরেকটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, মিথেন নির্গমন রোধ করার জন্য বিশ্বের যে নির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত তার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে৷ এ ছাড়া লক্ষ্যে পৌঁছাতে অগ্রগতি বা ব্যর্থতার জন্য নির্দিষ্ট দেশকে দায়বদ্ধতা দেখাতে নতুন নিয়ম ঠিক করা হয়েছে।

চূড়ান্ত চুক্তিতে কয়লার ব্যবহার কমানোর কথা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে সেখানে বন্ধ করার কথা ছিল। ভারতের পক্ষ থেকেই মূলত এই পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয়েছিল।

সুইজারল্যান্ডের প্রতিনিধি সিমোনেটা সোমারুগা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে চুক্তিপত্রের এই ভাষা পরিবর্তনের বিষয়টির নিন্দা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ফেজ ডাউন প্রয়োজন নয়, আমাদের প্রয়োজন ফেজ আউট করা।’ অর্থাৎ, কয়লার ব্যবহার কমানো নয়, বন্ধ করা প্রয়োজন।

সুইজারল্যান্ডের এই প্রতিনিধি অভিযোগ করেন, “শেষ মুহুর্তে কয়লার বিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। অন্যান্য দেশ থেকে কোন মতামত ছাড়াই পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ পরিবর্তন বিষয়ে আর মতামতের সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমরা প্রক্রিয়া এবং শেষ মুহূর্তের পরিবর্তন উভয় বিষয়েই হতাশ। এতে আমরা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রাখতে পারব না বরং লক্ষ্যে এটি লক্ষ্যে পৌঁছানো আরও কঠিন করে তুলবে।”

জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসও বলেছেন, “আমাদের ভঙ্গুর এই গ্রহটি একটি সুতোয় ঝুলছে। আমরা এখনও ভয়াবহ জলবায়ু বিপর্যয় আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে।”

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা গেলে তা মানবজাতিকে জলবায়ুর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি এড়াতে সাহায্য করবে।

এজন্যই বিশ্ব নেতারা ২০১৫ সালে ব্যাপক নির্গমন হ্রাসের মাধ্যমে ১.৫ ডিগ্রি থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বিশ্বকে উষ্ণতা বৃদ্ধি থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এবারের জলবায়ু সম্মেলনও অনেকটা অমীমাংসিতভাবেই শেষ হল।

সূত্র: বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস