রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না ইউক্রেন, ক্রিমিয়াও ফেরত পাবে না: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ‘চাইলেই’ রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে পারেন। তবে শান্তিচুক্তির শর্ত হিসেবে ইউক্রেন ‘ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না’। খবর সিএনএনের।

হোয়াইট হাউজে আজ সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প আরো বলেন, “২০১৪ সালে মস্কো যে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ অবৈধভাবে দখল করেছিল, সেটি আর ফেরত পাওয়া যাবে না।”

আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পরই এ মন্তব্য করলেন ট্রাম্প। তিনি ইউক্রেনকে যুদ্ধবিরতির দাবি বাদ দিয়ে শান্তিচুক্তির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

সিএনএন বলছে, ট্রাম্পের এই অবস্থান বিস্ময়কর। কারণ একদিন আগেই ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছিলেন যে, মস্কো আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোকে ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো-ধাঁচের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার অনুমতি দিতে রাজি হয়েছে।

তবে ট্রাম্প নিজের দূতের বক্তব্যকেই উড়িয়ে দিলেন। রবিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, “ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চাইলেই যুদ্ধ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শেষ করতে পারেন। অথবা লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন। মনে রাখুন, কীভাবে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ওবামা তখন ক্রিমিয়া দিয়ে দিয়েছিলেন (১২ বছর আগে, কোনো গুলি ছাড়াই!) আর ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। কিছু জিনিস কখনো বদলায় না!”

ট্রাম্পের এই মন্তব্যে ইঙ্গিত মেলে যে, সোমবার হোয়াইট হাউজে বৈঠকে জেলেনস্কি প্রবল চাপের মুখে পড়তে পারেন। ট্রাম্প যে দুইটি শর্ত উল্লেখ করেছেন তা হলো-ইউক্রেনকে ক্রিমিয়া ছেড়ে দিতে হবে এবং ন্যাটোতে না যোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। সেগুলোই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মূল দাবি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই অবস্থান ইউক্রেনের পক্ষে এক বড় ধাক্কা। কারণ, যুদ্ধবিরতির জন্য কিয়েভ ও ইউরোপীয় মিত্ররা যেখানে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে, সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই কড়া বার্তা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে।

ইউরোপীয় নেতারা আশঙ্কা করছেন, হোয়াইট হাউজের বৈঠকে ট্রাম্প মূলত জেলেনস্কিকে পুতিনের শর্ত মানতে রাজি করানোর চেষ্টা করবেন। তবে তারা একই সঙ্গে জানতে চান, সম্ভাব্য শান্তি চুক্তিতে রাশিয়া কী ধরনের ছাড় দিতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে।

এদিকে, রবিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন জেলেনস্কি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ট্রাম্পের আমন্ত্রণের জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। জেলেনস্কি বলেন, “আমাদের সবার লক্ষ্য হলো দ্রুত ও নির্ভরযোগ্যভাবে এই যুদ্ধের অবসান ঘটানো।” তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “ইউক্রেনকে কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে হবে মিত্রদের। আগের মতো নয়… ১৯৯৪ সালে ইউক্রেনকে তথাকথিত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তা কাজ করেনি।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না ইউক্রেন, ক্রিমিয়াও ফেরত পাবে না: ট্রাম্প

প্রকাশিত সময় : ০৩:০৯:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ‘চাইলেই’ রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে পারেন। তবে শান্তিচুক্তির শর্ত হিসেবে ইউক্রেন ‘ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না’। খবর সিএনএনের।

হোয়াইট হাউজে আজ সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প আরো বলেন, “২০১৪ সালে মস্কো যে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ অবৈধভাবে দখল করেছিল, সেটি আর ফেরত পাওয়া যাবে না।”

আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পরই এ মন্তব্য করলেন ট্রাম্প। তিনি ইউক্রেনকে যুদ্ধবিরতির দাবি বাদ দিয়ে শান্তিচুক্তির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

সিএনএন বলছে, ট্রাম্পের এই অবস্থান বিস্ময়কর। কারণ একদিন আগেই ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছিলেন যে, মস্কো আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোকে ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো-ধাঁচের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার অনুমতি দিতে রাজি হয়েছে।

তবে ট্রাম্প নিজের দূতের বক্তব্যকেই উড়িয়ে দিলেন। রবিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, “ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চাইলেই যুদ্ধ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শেষ করতে পারেন। অথবা লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন। মনে রাখুন, কীভাবে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ওবামা তখন ক্রিমিয়া দিয়ে দিয়েছিলেন (১২ বছর আগে, কোনো গুলি ছাড়াই!) আর ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। কিছু জিনিস কখনো বদলায় না!”

ট্রাম্পের এই মন্তব্যে ইঙ্গিত মেলে যে, সোমবার হোয়াইট হাউজে বৈঠকে জেলেনস্কি প্রবল চাপের মুখে পড়তে পারেন। ট্রাম্প যে দুইটি শর্ত উল্লেখ করেছেন তা হলো-ইউক্রেনকে ক্রিমিয়া ছেড়ে দিতে হবে এবং ন্যাটোতে না যোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। সেগুলোই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মূল দাবি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই অবস্থান ইউক্রেনের পক্ষে এক বড় ধাক্কা। কারণ, যুদ্ধবিরতির জন্য কিয়েভ ও ইউরোপীয় মিত্ররা যেখানে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে, সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই কড়া বার্তা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে।

ইউরোপীয় নেতারা আশঙ্কা করছেন, হোয়াইট হাউজের বৈঠকে ট্রাম্প মূলত জেলেনস্কিকে পুতিনের শর্ত মানতে রাজি করানোর চেষ্টা করবেন। তবে তারা একই সঙ্গে জানতে চান, সম্ভাব্য শান্তি চুক্তিতে রাশিয়া কী ধরনের ছাড় দিতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে।

এদিকে, রবিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন জেলেনস্কি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ট্রাম্পের আমন্ত্রণের জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। জেলেনস্কি বলেন, “আমাদের সবার লক্ষ্য হলো দ্রুত ও নির্ভরযোগ্যভাবে এই যুদ্ধের অবসান ঘটানো।” তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “ইউক্রেনকে কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে হবে মিত্রদের। আগের মতো নয়… ১৯৯৪ সালে ইউক্রেনকে তথাকথিত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তা কাজ করেনি।”