রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রিটার্ন না দিলে আয়-ব্যয়-সম্পদ তদন্তের নির্দেশ

ই-টিআইএন থাকা সত্ত্বেও যেসব করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন না, তাঁদের সবাইকে রিটার্ন দাখিলের জন্য কর কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। একই সঙ্গে তাঁদের আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য সরেজমিন তদন্ত করে আইন অনুযায়ী আয়কর আরোপ করে তা আদায় করার নির্দেশ দেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও রাজস্ব ভবনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসের রাজস্ব আহরণ পর্যালোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান এই নির্দেশনা দেন বলে আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় আয়কর আইন অনুযায়ী সব কার্যক্রম গ্রহণ করে প্রতি মাসের রাজস্ব সভায় তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের জন্য কমিশনারদের নির্দেশ দেন আবদুর রহমান খান। রাজস্ব আদায় বাড়াতে প্রতিটি কর অঞ্চলকে গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে কর ফাঁকি উদ্‌ঘাটন করার ওপর জোর দেন তিনি।

দাখিল করা আয়কর রিটার্নগুলো আয়কর আইনের বিধান অনুসারে প্রসেসিং করার মাধ্যমে কর আদায় কার্যক্রম বেগবান করার জন্য নির্দেশ দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

কর কমিশনারদের কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা এনবিআরের সব মনিটরিং সদস্যকে প্রতি সপ্তাহে একজন কমিশনারের সঙ্গে সভা করে নন-ফাইলারদের বিরুদ্ধে গৃহীত কার্যক্রম, কর ফাঁকি উদ্‌ঘাটন কার্যক্রম, ২০২৪-২৫ কর বছরের রিটার্ন প্রসেসিং কার্যক্রম, পেন্ডিং অডিট মামলাগুলো নিষ্পত্তি কার্যক্রম তদারকি করে তা একটি পৃথক ব্রিফিং সেশনের মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে অবহিত করার জন্য সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

এ ছাড়া বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো এবং অনলাইন আয়কর রিটার্ন দাখিলের মতো বন্ডের সব কার্যক্রম অনলাইনে আগামী এক মাসের মধ্যে সম্পাদন বাধ্যতামূলক করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বন্ডের কার্যক্রম অনলাইনে সম্পাদন করার ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি সেবার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দিতে পরামর্শ দেন।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জবাবদিহির আওতায় আনার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য নির্দেশনা দেন। বন্ড সুবিধার আওতায় আনা কাঁচামাল ও পণ্য বাজারে বিক্রয়ের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকের বন্ড লাইসেন্স বাতিল করার জন্য কমিশনারদের নির্দেশনা দেন তিনি।

চেয়ারম্যান বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের সঙ্গে রাজস্ব বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।

বন্ডের অপব্যবহার রোধে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কমিশনারদের কাছে জানতে চান এবং এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় না দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন তিনি।

বন্ড অডিট কার্যক্রম থেকে অর্জিত ফলাফল সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিটি রাজস্ব সভায় উপস্থাপনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। কাস্টম হাউসগুলোতে নিলাম কার্যক্রম জোরদার করে কনটেইনার জট কমাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। যেসব কনটেইনার অনেক দিন ধরে বন্দরে পড়ে আছে, সেগুলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দ্রুত নিলামে বিক্রয় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সভায় কাস্টমস কমিশনারদের নির্দেশনা দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের মূল ফোকাস হতে হবে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন নিশ্চিত করে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা।’

সন্দেহের বশবর্তী হয়ে আমদানি বা রপ্তানিকারকের বিন লক না করে অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে রক্ষিত অতীত রেকর্ডের ভিত্তিতে রাজস্ব ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণের জন্য কমিশনারদের পরামর্শ দেন তিনি।

চেয়ারম্যান বলেন, ‘অহেতুক বিন লক করে সৎ ও কমপ্লায়েন্ট আমদানি-রপ্তানিকারকদের কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। প্রতিটি কাস্টমস হাউস এবং গোয়েন্দা দপ্তরগুলোকে আমদানি-রপ্তানিকারকদের বিন কী কারণে লক করা হয়েছে এবং গৃহীত প্রতিটি কার্যক্রম থেকে কী পরিমাণ অতিরিক্ত কর আদায় হয়েছে, প্রতিটি মাসিক রাজস্ব সভায় এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।’

ভ্যাট কমিশনারদের নির্দেশনা দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাটের আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করে আইনানুগভাবে প্রযোজ্য কর আদায় করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের আদায়ের প্রবৃদ্ধির ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘যাঁরা সৎভাবে নিয়মকানুন মেনে ভ্যাট প্রদান করেন, তাঁদের ওপর অহেতুক বাড়তি চাপ প্রয়োগ করা সমীচীন নয়। ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে যাঁরা মোটেও ভ্যাট পরিশোধ করেন না, তাঁদের ভ্যাট নেটে আনা এবং যাঁরা ভ্যাট ফাঁকি দেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে ভ্যাট আদায় বাড়াতে হবে।’

ভ্যাটের আওতা বাড়াতে আইন অনুযায়ী যাঁদের ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক, তাঁদের সকলের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করার জন্য সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

রিটার্ন না দিলে আয়-ব্যয়-সম্পদ তদন্তের নির্দেশ

প্রকাশিত সময় : ০৩:৩৬:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫

ই-টিআইএন থাকা সত্ত্বেও যেসব করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন না, তাঁদের সবাইকে রিটার্ন দাখিলের জন্য কর কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। একই সঙ্গে তাঁদের আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য সরেজমিন তদন্ত করে আইন অনুযায়ী আয়কর আরোপ করে তা আদায় করার নির্দেশ দেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও রাজস্ব ভবনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসের রাজস্ব আহরণ পর্যালোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান এই নির্দেশনা দেন বলে আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় আয়কর আইন অনুযায়ী সব কার্যক্রম গ্রহণ করে প্রতি মাসের রাজস্ব সভায় তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের জন্য কমিশনারদের নির্দেশ দেন আবদুর রহমান খান। রাজস্ব আদায় বাড়াতে প্রতিটি কর অঞ্চলকে গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে কর ফাঁকি উদ্‌ঘাটন করার ওপর জোর দেন তিনি।

দাখিল করা আয়কর রিটার্নগুলো আয়কর আইনের বিধান অনুসারে প্রসেসিং করার মাধ্যমে কর আদায় কার্যক্রম বেগবান করার জন্য নির্দেশ দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

কর কমিশনারদের কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা এনবিআরের সব মনিটরিং সদস্যকে প্রতি সপ্তাহে একজন কমিশনারের সঙ্গে সভা করে নন-ফাইলারদের বিরুদ্ধে গৃহীত কার্যক্রম, কর ফাঁকি উদ্‌ঘাটন কার্যক্রম, ২০২৪-২৫ কর বছরের রিটার্ন প্রসেসিং কার্যক্রম, পেন্ডিং অডিট মামলাগুলো নিষ্পত্তি কার্যক্রম তদারকি করে তা একটি পৃথক ব্রিফিং সেশনের মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে অবহিত করার জন্য সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

এ ছাড়া বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো এবং অনলাইন আয়কর রিটার্ন দাখিলের মতো বন্ডের সব কার্যক্রম অনলাইনে আগামী এক মাসের মধ্যে সম্পাদন বাধ্যতামূলক করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বন্ডের কার্যক্রম অনলাইনে সম্পাদন করার ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি সেবার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দিতে পরামর্শ দেন।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জবাবদিহির আওতায় আনার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য নির্দেশনা দেন। বন্ড সুবিধার আওতায় আনা কাঁচামাল ও পণ্য বাজারে বিক্রয়ের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকের বন্ড লাইসেন্স বাতিল করার জন্য কমিশনারদের নির্দেশনা দেন তিনি।

চেয়ারম্যান বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের সঙ্গে রাজস্ব বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।

বন্ডের অপব্যবহার রোধে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কমিশনারদের কাছে জানতে চান এবং এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় না দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন তিনি।

বন্ড অডিট কার্যক্রম থেকে অর্জিত ফলাফল সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিটি রাজস্ব সভায় উপস্থাপনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। কাস্টম হাউসগুলোতে নিলাম কার্যক্রম জোরদার করে কনটেইনার জট কমাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। যেসব কনটেইনার অনেক দিন ধরে বন্দরে পড়ে আছে, সেগুলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দ্রুত নিলামে বিক্রয় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সভায় কাস্টমস কমিশনারদের নির্দেশনা দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের মূল ফোকাস হতে হবে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন নিশ্চিত করে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা।’

সন্দেহের বশবর্তী হয়ে আমদানি বা রপ্তানিকারকের বিন লক না করে অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে রক্ষিত অতীত রেকর্ডের ভিত্তিতে রাজস্ব ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণের জন্য কমিশনারদের পরামর্শ দেন তিনি।

চেয়ারম্যান বলেন, ‘অহেতুক বিন লক করে সৎ ও কমপ্লায়েন্ট আমদানি-রপ্তানিকারকদের কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। প্রতিটি কাস্টমস হাউস এবং গোয়েন্দা দপ্তরগুলোকে আমদানি-রপ্তানিকারকদের বিন কী কারণে লক করা হয়েছে এবং গৃহীত প্রতিটি কার্যক্রম থেকে কী পরিমাণ অতিরিক্ত কর আদায় হয়েছে, প্রতিটি মাসিক রাজস্ব সভায় এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।’

ভ্যাট কমিশনারদের নির্দেশনা দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাটের আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করে আইনানুগভাবে প্রযোজ্য কর আদায় করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের আদায়ের প্রবৃদ্ধির ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘যাঁরা সৎভাবে নিয়মকানুন মেনে ভ্যাট প্রদান করেন, তাঁদের ওপর অহেতুক বাড়তি চাপ প্রয়োগ করা সমীচীন নয়। ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে যাঁরা মোটেও ভ্যাট পরিশোধ করেন না, তাঁদের ভ্যাট নেটে আনা এবং যাঁরা ভ্যাট ফাঁকি দেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে ভ্যাট আদায় বাড়াতে হবে।’

ভ্যাটের আওতা বাড়াতে আইন অনুযায়ী যাঁদের ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক, তাঁদের সকলের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করার জন্য সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়।