বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বুকে আবু সাঈদ হাতে বাংলাদেশ, গাজার পথে শহিদুল আলম

ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় ধ্বংসস্তূপ ও মৃত্যুপুরীতে রূপ নেওয়া অবরুদ্ধ গাজার পথে রয়েছেন বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী ড. শহিদুল আলম।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ইতালি থেকে রওনা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’ বৃহত্তম জাহাজ ‘কনসায়েন্স’ এর অভিযাত্রী হয়েছেন শহিদুল আলম। তার পরনে জুলাই শহীদ আবু সাঈদের ছবি খচিত পাঞ্জাবি ও হাতে রয়েছে বাংলাদেশের পতাকা।

বুধবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে শহিদুল আলম বলেন, “আজ আমার বড় ভাইয়ের জন্মদিন। সে একজন বিদ্রোহী ছিলেন, যিনি সমাজের প্রত্যাশা পূরণ না পারায় আত্মত্যাগ করেছিলেন। তার মৃত্যু আমার জন্য দরজা খুলে দিয়েছে। আমি আমার বুকে আবু সাঈদকে পরিধান করেছি, যিনি সশস্ত্র পুলিশের সামনে তার বুক উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই তাকে হত্যা করা হয়, কিন্তু এটি শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।”

শহিদুল আলম আরো বলেন, “ইতিহাসে যারা স্থিতাবস্থাকে (স্ট্যাটাস কো) চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন, তারাই সবকিছু বদলে দিয়েছেন। আজ ফ্লোটিলা ‘কনসায়েন্সে’ থাকা ব্যক্তিরা, ঢেউয়ের মধ্যে অগ্রভাগে থাকা নৌকার অন্যরা এবং বিশেষ করে যারা ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের জন্য গাজায় তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন, তারাই ইসরায়েল এবং তার মিত্রদের গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।”

গাজার পথে শহিদুল। ছবি : শহিদুল আলমের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

“কিন্তু আমরা একা নই। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তাদের সম্মিলিত ক্ষোভের প্রতিনিধিত্ব করি। ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার জন্য আমরা যা কিছু করতে পারি, তা করব। ফিলিস্তিন স্বাধীন হবেই।”

‘এখনো বিপজ্জনক কিছু ঘটেনি’
গাজা থেকে আর মাত্র ১০০ মাইল দূরে আছে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’। এবারের যাত্রায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মীদের এ নৌবহরটি এখনো বড় ধরনের কোনো আক্রমণ বা বাধার সম্মুখীন হয়নি। ইসরায়েলি হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেই এগিয়ে যাচ্ছে তারা।

এই বহরে থাকা একমাত্র বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, “আমার ‘ড্রোন ওয়াচ’ দেখাচ্ছে- আরো এক ঘণ্টা যেতে হবে, যেখানে আমরা সাধারণত সম্ভাব্য আক্রমণের প্রতি নজর রাখি। আমার ওয়াচে এর আগে একটি তুর্কি জাহাজ দেখা গেছে, তবে এখন পর্যন্ত বিপজ্জনক কিছু ঘটেনি।”

শহিদুল আলমের ফেসবুক পোস্ট

বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর তথ্য বলছে, ৪০টিরও বেশি নৌকা ও জাহাজ নিয়ে গঠিত এই ফ্লোটিলায় প্রায় ৫০০ জন নাগরিক রয়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন সংসদ সদস্য, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বুকে আবু সাঈদ হাতে বাংলাদেশ, গাজার পথে শহিদুল আলম

প্রকাশিত সময় : ১০:৪১:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় ধ্বংসস্তূপ ও মৃত্যুপুরীতে রূপ নেওয়া অবরুদ্ধ গাজার পথে রয়েছেন বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী ড. শহিদুল আলম।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ইতালি থেকে রওনা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’ বৃহত্তম জাহাজ ‘কনসায়েন্স’ এর অভিযাত্রী হয়েছেন শহিদুল আলম। তার পরনে জুলাই শহীদ আবু সাঈদের ছবি খচিত পাঞ্জাবি ও হাতে রয়েছে বাংলাদেশের পতাকা।

বুধবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে শহিদুল আলম বলেন, “আজ আমার বড় ভাইয়ের জন্মদিন। সে একজন বিদ্রোহী ছিলেন, যিনি সমাজের প্রত্যাশা পূরণ না পারায় আত্মত্যাগ করেছিলেন। তার মৃত্যু আমার জন্য দরজা খুলে দিয়েছে। আমি আমার বুকে আবু সাঈদকে পরিধান করেছি, যিনি সশস্ত্র পুলিশের সামনে তার বুক উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই তাকে হত্যা করা হয়, কিন্তু এটি শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।”

শহিদুল আলম আরো বলেন, “ইতিহাসে যারা স্থিতাবস্থাকে (স্ট্যাটাস কো) চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন, তারাই সবকিছু বদলে দিয়েছেন। আজ ফ্লোটিলা ‘কনসায়েন্সে’ থাকা ব্যক্তিরা, ঢেউয়ের মধ্যে অগ্রভাগে থাকা নৌকার অন্যরা এবং বিশেষ করে যারা ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের জন্য গাজায় তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন, তারাই ইসরায়েল এবং তার মিত্রদের গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।”

গাজার পথে শহিদুল। ছবি : শহিদুল আলমের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

“কিন্তু আমরা একা নই। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তাদের সম্মিলিত ক্ষোভের প্রতিনিধিত্ব করি। ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার জন্য আমরা যা কিছু করতে পারি, তা করব। ফিলিস্তিন স্বাধীন হবেই।”

‘এখনো বিপজ্জনক কিছু ঘটেনি’
গাজা থেকে আর মাত্র ১০০ মাইল দূরে আছে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’। এবারের যাত্রায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মীদের এ নৌবহরটি এখনো বড় ধরনের কোনো আক্রমণ বা বাধার সম্মুখীন হয়নি। ইসরায়েলি হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেই এগিয়ে যাচ্ছে তারা।

এই বহরে থাকা একমাত্র বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, “আমার ‘ড্রোন ওয়াচ’ দেখাচ্ছে- আরো এক ঘণ্টা যেতে হবে, যেখানে আমরা সাধারণত সম্ভাব্য আক্রমণের প্রতি নজর রাখি। আমার ওয়াচে এর আগে একটি তুর্কি জাহাজ দেখা গেছে, তবে এখন পর্যন্ত বিপজ্জনক কিছু ঘটেনি।”

শহিদুল আলমের ফেসবুক পোস্ট

বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর তথ্য বলছে, ৪০টিরও বেশি নৌকা ও জাহাজ নিয়ে গঠিত এই ফ্লোটিলায় প্রায় ৫০০ জন নাগরিক রয়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন সংসদ সদস্য, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ।