মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রানা প্লাজা ছিল আ.লীগের তৈরি ট্র্যাজেডি: প্রেস সচিব

রানা প্লাজা ধসের ঘটনাকে ‘আওয়ামী লীগের তৈরি ট্র্যাজেডি’ বলে বর্ণনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ শিল্প-দুর্ঘটনায় অন্তত ১,১৩০ জন নিহত হন। যাদের বেশিরভাগই নারী পোশাকশ্রমিক।এ ঘটনার মূল কারণ ছিল ভবনটির মালিক সোহেল রানা এবং তার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে নিয়ম ভাঙা ও সতর্কবার্তা উপেক্ষা করা।’

বুধবার (১২ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা বলেন প্রেস সচিব।

পোস্টে তিনি বলেন, ‘ভবন ধসের এক দিন আগে প্রকৌশলীরা স্পষ্টভাবে ভবনটিকে ‘অপরিচালনাযোগ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু দলের (আ.লীগ) আশ্রয়ে সাহসী হয়ে ওঠা সোহেল রানা কর্মীদের জোর করে আবার ভবনে ফিরিয়ে আনেন’।

‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস–এর দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরোপ্রধান জিম ইয়ার্ডলি তার প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে রানা ও তার রাজনৈতিক অভিভাবক তৎকালীন সাভারের আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য মুরাদ জং-এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু রানার দলীয় পরিচয় যেন আড়ালে থাকে— বাংলাদেশের ভেতরে আওয়ামী লীগের প্রচারযন্ত্র তা নিশ্চিত করেছিল। স্থানীয় পত্রিকাগুলোকে নীরবে চাপ দেওয়া হয় যেন তারা কেবল উদ্ধার অভিযান ও মৃতের সংখ্যা নিয়েই লেখে। সোহেল রানা যে একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন, যার রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পর্যন্ত তাকে ভয় পেত— সেটা সতর্কভাবেই এড়িয়ে যেতে বলা হয়’, যোগ করেন শফিকুল আলম।

প্রেস সচিব বলেন, ‘কিন্তু রানা একা কোনো ব্যতিক্রম অংশ ছিলেন না; তিনি ছিলেন তখনকার চলমান ব্যবস্থারই এক স্বাভাবিক ফল।

শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসন নিয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের শাসন শুধু একনায়কতন্ত্রকেই পাকাপোক্ত করেনি—দেশজুড়ে অসংখ্য ‘স্থানীয় দানব’ তৈরি করেছে। সোহেল রানা ছিলেন তাদের একজন। নিজাম হাজারী ও শামীম ওসমান তাদের নিজ নিজ এলাকায় ছিলেন ‘দানবপ্রধান’—দলের ছায়াতলে গড়ে ওঠে তাদের অবাধ ক্ষমতার প্রতীক। এমনকি শিক্ষিত সমাজেও দেখা গেছে একই বিষাক্ত আনুগত্য: ‘আওয়ামী চেতনা রক্ষার’ নামে বুয়েটের তরুণ, তথাকথিত মেধাবী ছাত্ররা পিটিয়ে হত্যা করেছিল আবরার ফাহাদকে।

প্রেস সচিবের মতে, ‘এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—বরং ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব ও দায়মুক্তির সংস্কৃতির এক অনিবার্য পরিণতি’।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু, ঝুলন্ত  লাশ উদ্ধার

রানা প্লাজা ছিল আ.লীগের তৈরি ট্র্যাজেডি: প্রেস সচিব

প্রকাশিত সময় : ০৩:২০:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

রানা প্লাজা ধসের ঘটনাকে ‘আওয়ামী লীগের তৈরি ট্র্যাজেডি’ বলে বর্ণনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ শিল্প-দুর্ঘটনায় অন্তত ১,১৩০ জন নিহত হন। যাদের বেশিরভাগই নারী পোশাকশ্রমিক।এ ঘটনার মূল কারণ ছিল ভবনটির মালিক সোহেল রানা এবং তার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে নিয়ম ভাঙা ও সতর্কবার্তা উপেক্ষা করা।’

বুধবার (১২ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা বলেন প্রেস সচিব।

পোস্টে তিনি বলেন, ‘ভবন ধসের এক দিন আগে প্রকৌশলীরা স্পষ্টভাবে ভবনটিকে ‘অপরিচালনাযোগ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু দলের (আ.লীগ) আশ্রয়ে সাহসী হয়ে ওঠা সোহেল রানা কর্মীদের জোর করে আবার ভবনে ফিরিয়ে আনেন’।

‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস–এর দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরোপ্রধান জিম ইয়ার্ডলি তার প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে রানা ও তার রাজনৈতিক অভিভাবক তৎকালীন সাভারের আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য মুরাদ জং-এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু রানার দলীয় পরিচয় যেন আড়ালে থাকে— বাংলাদেশের ভেতরে আওয়ামী লীগের প্রচারযন্ত্র তা নিশ্চিত করেছিল। স্থানীয় পত্রিকাগুলোকে নীরবে চাপ দেওয়া হয় যেন তারা কেবল উদ্ধার অভিযান ও মৃতের সংখ্যা নিয়েই লেখে। সোহেল রানা যে একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন, যার রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পর্যন্ত তাকে ভয় পেত— সেটা সতর্কভাবেই এড়িয়ে যেতে বলা হয়’, যোগ করেন শফিকুল আলম।

প্রেস সচিব বলেন, ‘কিন্তু রানা একা কোনো ব্যতিক্রম অংশ ছিলেন না; তিনি ছিলেন তখনকার চলমান ব্যবস্থারই এক স্বাভাবিক ফল।

শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসন নিয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের শাসন শুধু একনায়কতন্ত্রকেই পাকাপোক্ত করেনি—দেশজুড়ে অসংখ্য ‘স্থানীয় দানব’ তৈরি করেছে। সোহেল রানা ছিলেন তাদের একজন। নিজাম হাজারী ও শামীম ওসমান তাদের নিজ নিজ এলাকায় ছিলেন ‘দানবপ্রধান’—দলের ছায়াতলে গড়ে ওঠে তাদের অবাধ ক্ষমতার প্রতীক। এমনকি শিক্ষিত সমাজেও দেখা গেছে একই বিষাক্ত আনুগত্য: ‘আওয়ামী চেতনা রক্ষার’ নামে বুয়েটের তরুণ, তথাকথিত মেধাবী ছাত্ররা পিটিয়ে হত্যা করেছিল আবরার ফাহাদকে।

প্রেস সচিবের মতে, ‘এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—বরং ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব ও দায়মুক্তির সংস্কৃতির এক অনিবার্য পরিণতি’।