মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

২ শিক্ষকের তুমুল মারামারি, ভিডিও ভাইরাল

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের চান্দপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ৮ ডিসেম্বর দুপুরে ওই বিদ্যালয়টির অফিস কক্ষে মারামারির এ ঘটনা ঘটে।

৩৩ সেকেন্ডের ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষক চেয়ারের সঙ্গে চেপে ধরে আছেন।

এসময় এক নারী শিক্ষককে বলতে শোনা যায়, ‘আল্লাহ রহম করো, আল্লাহ রহম করো। জুনায়েদ সাহেব আপনারা এডি কাজ করতাছেন, আপনারা এডি কাজ করতাছেন? মারামারি করন লাগে দুজনে, কাইজ্জা করন লাগে?’
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, চান্দপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদুল হাসান জুনায়েদ ও সহকারী শিক্ষক মো. মহিউদ্দিনের মধ্যে এ হাতাহাতির ঘটনাটি ঘটে। বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা হতো। গত ৮ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ওই দুই শিক্ষকের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় মাহমুদুল হাসান জুনায়েদ অফিসে থাকা একটি বঁটি (ধারালো অস্ত্র) নিয়ে সহকারী শিক্ষক মো. মহিউদ্দিনের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। এ সময় সহকারী শিক্ষিকা ঝর্না আক্তার দ্রুত এগিয়ে গিয়ে জুনায়েদের কাছ থেকে বঁটিটি কেড়ে নেন। পরে দুই শিক্ষকের মধ্যে পুনরায় হাতাহাতি শুরু হয়।

এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক মাহমুদুল হাসান জুনায়েদ বলেন, যেই ভিডিও ফেসবুকে ছাড়া হয়েছে, সেটি ঘটনার শেষাংশ। প্রথম দিকে আমাকে তিনি দুইবার ধাক্কা দেন এবং দিয়ে চেয়ারে ফেলে দিয়ে আমার শার্টের কলার ধরেন। আমি আত্মরক্ষার জন্য তাকে ধাক্কা দিলে তিনিও চেয়ারে পড়ে যান।

আমি আত্মরক্ষার জন্য তার হাতে ও পায়ে হাত দিয়ে ধরে রাখি। তবে বঁটি দিয়ে আঘাতের চেষ্টার বিষয়টি মিথ্যা।

সহকারী শিক্ষক মো. মহিউদ্দিন বলেন, জুনায়েদ সাহেব সবসময় জোরজবরদস্তি ও ক্ষমতা দেখান। কেউ তার কথা না শুনলেই রাগান্বিত হয়ে যান তিনি। এর আগেও তিনি আমাকে হাতুড়ি দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন। সেদিন তিনি অফিস কক্ষে বসে আমাকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছিলেন। আমি প্রতিবাদ করায় আমার ওপর চড়াও হন তিনি। পরে আমাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। হঠাৎ করেই তিনি অফিসে রান্নাবান্নার জন্য রাখা দা দিয়ে আমাকে মারতে তেড়ে আসেন। ঝর্না ম্যাডাম তার হাত থেকে দা কেড়ে নেন। পরে তিনি আমাকে চেয়ারে ফেলে আমার গলা চেপে ধরেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সহকারী শিক্ষিকা ঝর্না আক্তার বলেন, আমি সেসময় অফিস কক্ষে কাজ করছিলাম। জুনায়েদ স্যার নিজে নিজেই কথা বলছিলেন। একসময় মহিউদ্দিন স্যার কথার জবাব দিলে তাদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। পরে ঝগড়া লেগে যায়। এর পর জুনায়েদ সাহেব অফিসের বঁটি-দা হাতে নিলে আমি তা কেড়ে নিই। এর পরেও দুজনের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তি হয়।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাইলী আক্তার জানান, গত ৮ ডিসেম্বর অফিসকক্ষে দুই শিক্ষকের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসকে অবহিত করেছেন। পরে সহকারী শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমান আমাদের স্কুল পরিদর্শন করেন। তিনি ঘটনার বিস্তারিত তথ্য নিয়ে গেছেন। বাকিটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবেন বলেও জানান তিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হালিমা পারভীন জানান, ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি সহকারী শিক্ষা অফিসারকে ওই বিদ্যালয়ে পাঠাই। এ ঘটনায় রিপোর্ট তৈরি করে আমরা জেলায় পাঠিয়েছি। জেলা শিক্ষা অফিস এ ঘটনার ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

২ শিক্ষকের তুমুল মারামারি, ভিডিও ভাইরাল

প্রকাশিত সময় : ০৩:৪৩:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের চান্দপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ৮ ডিসেম্বর দুপুরে ওই বিদ্যালয়টির অফিস কক্ষে মারামারির এ ঘটনা ঘটে।

৩৩ সেকেন্ডের ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষক চেয়ারের সঙ্গে চেপে ধরে আছেন।

এসময় এক নারী শিক্ষককে বলতে শোনা যায়, ‘আল্লাহ রহম করো, আল্লাহ রহম করো। জুনায়েদ সাহেব আপনারা এডি কাজ করতাছেন, আপনারা এডি কাজ করতাছেন? মারামারি করন লাগে দুজনে, কাইজ্জা করন লাগে?’
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, চান্দপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদুল হাসান জুনায়েদ ও সহকারী শিক্ষক মো. মহিউদ্দিনের মধ্যে এ হাতাহাতির ঘটনাটি ঘটে। বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা হতো। গত ৮ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ওই দুই শিক্ষকের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় মাহমুদুল হাসান জুনায়েদ অফিসে থাকা একটি বঁটি (ধারালো অস্ত্র) নিয়ে সহকারী শিক্ষক মো. মহিউদ্দিনের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। এ সময় সহকারী শিক্ষিকা ঝর্না আক্তার দ্রুত এগিয়ে গিয়ে জুনায়েদের কাছ থেকে বঁটিটি কেড়ে নেন। পরে দুই শিক্ষকের মধ্যে পুনরায় হাতাহাতি শুরু হয়।

এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক মাহমুদুল হাসান জুনায়েদ বলেন, যেই ভিডিও ফেসবুকে ছাড়া হয়েছে, সেটি ঘটনার শেষাংশ। প্রথম দিকে আমাকে তিনি দুইবার ধাক্কা দেন এবং দিয়ে চেয়ারে ফেলে দিয়ে আমার শার্টের কলার ধরেন। আমি আত্মরক্ষার জন্য তাকে ধাক্কা দিলে তিনিও চেয়ারে পড়ে যান।

আমি আত্মরক্ষার জন্য তার হাতে ও পায়ে হাত দিয়ে ধরে রাখি। তবে বঁটি দিয়ে আঘাতের চেষ্টার বিষয়টি মিথ্যা।

সহকারী শিক্ষক মো. মহিউদ্দিন বলেন, জুনায়েদ সাহেব সবসময় জোরজবরদস্তি ও ক্ষমতা দেখান। কেউ তার কথা না শুনলেই রাগান্বিত হয়ে যান তিনি। এর আগেও তিনি আমাকে হাতুড়ি দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন। সেদিন তিনি অফিস কক্ষে বসে আমাকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছিলেন। আমি প্রতিবাদ করায় আমার ওপর চড়াও হন তিনি। পরে আমাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। হঠাৎ করেই তিনি অফিসে রান্নাবান্নার জন্য রাখা দা দিয়ে আমাকে মারতে তেড়ে আসেন। ঝর্না ম্যাডাম তার হাত থেকে দা কেড়ে নেন। পরে তিনি আমাকে চেয়ারে ফেলে আমার গলা চেপে ধরেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সহকারী শিক্ষিকা ঝর্না আক্তার বলেন, আমি সেসময় অফিস কক্ষে কাজ করছিলাম। জুনায়েদ স্যার নিজে নিজেই কথা বলছিলেন। একসময় মহিউদ্দিন স্যার কথার জবাব দিলে তাদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। পরে ঝগড়া লেগে যায়। এর পর জুনায়েদ সাহেব অফিসের বঁটি-দা হাতে নিলে আমি তা কেড়ে নিই। এর পরেও দুজনের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তি হয়।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাইলী আক্তার জানান, গত ৮ ডিসেম্বর অফিসকক্ষে দুই শিক্ষকের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসকে অবহিত করেছেন। পরে সহকারী শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমান আমাদের স্কুল পরিদর্শন করেন। তিনি ঘটনার বিস্তারিত তথ্য নিয়ে গেছেন। বাকিটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবেন বলেও জানান তিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হালিমা পারভীন জানান, ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি সহকারী শিক্ষা অফিসারকে ওই বিদ্যালয়ে পাঠাই। এ ঘটনায় রিপোর্ট তৈরি করে আমরা জেলায় পাঠিয়েছি। জেলা শিক্ষা অফিস এ ঘটনার ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।