ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন পেয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল রবিবার এ বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আবু তালেব স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দেওয়া হয়।
হাদি হত্যায় করা মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হাদিকে হত্যা করা হতে পারে। গতকাল রবিবার রাত ৮টা পর্যন্ত হাদি হত্যার মূল অভিযুক্ত ‘শ্যুটার’ ফয়সাল করিম মাসুদকে গ্রেপ্তার করা যায়নি
এই ‘শ্যুটার’ এখন দেশে না বিদেশে পালিয়ে আছেন, তা নিয়েও সঠিক তথ্য নেই তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে। তবে গতকাল তাঁর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। আদালত ও পুলিশ সূত্র বলছে, শরিফ ওসমান হাদি হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদকে পালাতে সহযোগিতার অভিযোগ ওঠা সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমের দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর তাঁদের প্রথম দফায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছিল।
যা বলছে সিআইডি : হাদি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে উঠে আসা ফয়সাল করিম মাসুদ ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাব লেনদেন বিশ্লেষণে ১২৭ কোটি টাকার অধিক অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি। এ বিষয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন (২০১২) অনুযায়ী অর্থপাচারসংক্রান্ত অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইডি। সিআইডি বলছে, হাদিকে গুলির পরপরই সিআইডি এ ঘটনার নানা দিক নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত ব্যাংক হিসাবের তথ্য নিয়ে মানি লন্ডারিং অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে সিআইডি।
সিআইডি বলছে, হাদি হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ওরফে রাহুল এখনো গ্রেপ্তার না হলেও মামলার আলামত গোপন ও অভিযুক্তকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে তাঁর পরিবারের সদস্যসহ একাধিক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
সিআইডি সূত্র বলছে, চূড়ান্ত লেনদেন সম্পন্ন না হওয়া এসব রেকর্ডের সমষ্টিগত মূল্য প্রায় ২১৮ কোটি টাকা। তবে সিআইডির প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, অভিযুক্ত ও তাঁর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেন সংঘটিত হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং, সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমসংক্রান্ত অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। পাশাপাশি এসব অর্থের মূল সরবরাহকারী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করার জন্য সিআইডির অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।
যা বলছে ডিবি : মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হাদি হত্যাকাণ্ডে ব্যক্তিগত কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে হয়নি।
ঘটনার শুরু থেকে আমরা মাঠে ছিলাম। সব এজেন্সি সমন্বিতভাবে কাজ করেছি। প্রধান সন্দেহভাজন আসামির সঠিক অবস্থান জানতে তদন্ত চলছে।’
হান্নানের অব্যাহতি : পুলিশ ও আদালত সূত্র বলছে, হাদিকে গুলি করতে ব্যবহৃত মোটরসাইকলের মালিক সন্দেহে গ্রেপ্তার আব্দুল হান্নান অব্যাহতি পেয়েছেন। গতকাল রবিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসান শাহাদাত শুনানি শেষে তাকে অব্যাহতি দেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, হাদিকে গুলি করার পর গত ১৩ ডিসেম্বর র্যাব-২ সন্দেহভাজন হিসেবে আব্দুল হান্নানকে আটক করে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে পল্টন মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়। পরে ১৪ ডিসেম্বর তাঁকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়।
ফয়সাল করিমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা : হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। রবিবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদের আদালত এ আদেশ দেন। ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের ডিসি মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছান এ তথ্য জানান। এদিন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ এ আবেদন করেন।
হাদির সমাধিস্থলের ছড়িয়ে পড়া ছবিটি ভুয়া : পুলিশ বলছে, হাদির সমাধিস্থল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে একটি ছবি। ছবিটি বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল রবিবার ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য দেন।

রিপোর্টারের নাম 























