নারীদের মতো পুরুষদের মধ্যেও হরমোনের ভারসাম্যহীনতা একটি বাস্তব ও গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা। তবে দুঃখজনকভাবে বিষয়টি তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত হওয়ায় অনেক পুরুষই এর লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দেন না কিংবা স্বাভাবিক ক্লান্তি বা বয়সজনিত সমস্যা বলে এড়িয়ে যান।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের মধ্যে হরমোনজনিত সমস্যা—বিশেষ করে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যাওয়ার প্রবণতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে কম বয়সেই টেস্টোস্টেরন হ্রাস, প্রজননক্ষমতা কমে যাওয়া, যৌন আগ্রহ হ্রাস এবং দৈনন্দিন কর্মশক্তি কমে যাওয়া।
এই কারণেই টেস্টোস্টেরন ভারসাম্যহীনতার প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা এবং সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
টেস্টোস্টেরনের ঘাটতির ৫ লক্ষণ
১. যৌন আগ্রহ কমে যাওয়া
পুরুষদের যৌন আকাঙ্ক্ষা ও সক্ষমতার সঙ্গে টেস্টোস্টেরনের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। এই হরমোনের মাত্রা কমে গেলে যৌন আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে। যৌন সম্পর্কে অনীহা, আগের মতো আগ্রহ না থাকা কিংবা ইরেকশন ধরে রাখতে সমস্যায় পড়া—এসবই টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হতে পারে।
২. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও শক্তির অভাব
টেস্টোস্টেরন পুরুষদের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই হরমোনের ঘাটতি হলে পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রামের পরও সারাদিন ক্লান্ত অনুভূত হতে পারে। অল্প কাজেই অবসন্ন লাগা বা সবসময় শক্তিহীন মনে হওয়াও এর একটি সাধারণ লক্ষণ।
৩. পেশি কমে যাওয়া ও শারীরিক শক্তি হ্রাস
শরীরের পেশি গঠন ও তা ধরে রাখতে টেস্টোস্টেরন অপরিহার্য। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে পেশি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শারীরিক শক্তি কমতে শুরু করে। নিয়মিত কাজ বা ব্যায়ামে আগের মতো শক্তি না পাওয়া কিংবা পেশির আকার ছোট হয়ে যাওয়াও সতর্কবার্তা হতে পারে।
৪. মেজাজের অস্বাভাবিক পরিবর্তন
টেস্টোস্টেরন শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এই হরমোন কমে গেলে মুড সুইং, অতিরিক্ত বিরক্তি, অস্থিরতা বা হতাশা দেখা দিতে পারে। অকারণে রেগে যাওয়া, দীর্ঘ সময় মন খারাপ থাকা কিংবা বিষণ্নতায় ভোগাও টেস্টোস্টেরন ঘাটতির লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত।
৫. শরীরে চর্বি বৃদ্ধি
টেস্টোস্টেরন শরীরের চর্বি বণ্টন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর ঘাটতি হলে বিশেষ করে পেটের চারপাশে অতিরিক্ত মেদ জমতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও নিয়মিত ব্যায়াম করার পরও যদি পেটের চর্বি বাড়তে থাকে, তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন।
টেস্টোস্টেরন কমে গেলে করণীয় কী?
এসব উপসর্গ শুধুমাত্র টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়ার কারণেই দেখা দেয়—এমন নয়। অন্য শারীরিক বা মানসিক সমস্যার কারণেও এগুলো হতে পারে। তাই সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যার ধরন ও মাত্রা নির্ধারণ করে চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করা হয়।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যাপ্ত ঘুম টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক। সুস্থ জীবনের ভিত্তি গড়ে ওঠে স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইলের মাধ্যমেই—যা আমরা অনেক সময় অবহেলা করি।
ওষুধ
কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে এমন ওষুধ দেওয়া হতে পারে, যা শরীরে স্বাভাবিকভাবে টেস্টোস্টেরন উৎপাদন বাড়াতে বা টেস্টোস্টেরন থেকে ইস্ট্রোজেনে রূপান্তর কমাতে সাহায্য করে।
সাপ্লিমেন্ট
ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং শিলাজিৎ, অশ্বগন্ধা, সাফেদ মুসলি, মেথি (ফেনুগ্রীক)–জাতীয় ভেষজ উপাদানসমৃদ্ধ কিছু সাপ্লিমেন্ট টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে বৈজ্ঞানিকভাবে কার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে এসব সাপ্লিমেন্ট নিয়মিত প্রতিদিন অন্তত ৩–৪ মাস গ্রহণ করতে হয় এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদে চালিয়ে যেতে হয়।
হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা অত্যন্ত কমে গেলে বিশেষ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি দেওয়া হয়। ইনজেকশন, জেল, প্যাচ বা পেলেটের মাধ্যমে শরীরে টেস্টোস্টেরন সরবরাহ করা হয়। তবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি কেবল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানেই গ্রহণযোগ্য।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের হরমোনজনিত সমস্যার চিকিৎসা অবশ্যই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হওয়া উচিত। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা বাঞ্ছনীয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— পুরুষদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া, খোলামেলা আলোচনা করা এবং প্রয়োজনে সময়মতো চিকিৎসা ও পরামর্শ গ্রহণ করা।
সূত্র : দ্য হেলথ সাইট

ডেইলি দেশ নিউজ ডটকম ডেস্ক 
























