রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অ্যাসাঞ্জকে হাতে পেতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ‘প্রহসন’ বললেন বাগদত্তা

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়ার ব্যাপারে রায় দিয়েছে যুক্তরাজ্যের আদালত। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকের প্রত্যার্পণ মামলার সর্বশেষ ধাপে জয় লাভ করেছে মার্কিন সরকার। তবে এ রায়কে ‘বিচারের নামে প্রহসন’ উল্লেখ করে আইনজীবীরা রায়ের বিরুদ্ধে ‘যত দ্রুত সম্ভব আপিল করবে’ বলেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অ্যাসাঞ্জের বাগদত্তা স্টেলা মরিস।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্রিটিশ আদালতের এক রায়ে বলা হয়, ৫০ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ থাকায় তাঁর ওপর অপরাধের দায় চাপানো যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়া যাবে না।

তবে আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে মার্কিন সরকার। যে আপিলের শুনানি শেষে শুক্রবার ব্রিটিশ আদালত এই বলে রায় দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের আশ্বাসের কারণে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাদ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে জোরালো আশ্বাস দেয় আদালতে। মূলত, ২০১০ ও ২০১১ সালে হাজার হাজার মার্কিন গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে বিচারের মুখোমুখি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়া হলে তাকে কঠোর নিয়ন্ত্রিত কারাগারে রাখা হবে- এমন ঝুঁকির ভিত্তিতেই নিম্ন আদালতের বিচারকেরা জানুয়ারিতে রায় দিয়েছিলেন বলে মনে করছেন যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ বিচারকেরা।

পরে মার্কিন কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেয় যে, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ওইসব কঠোর পদক্ষেপের মুখোমুখি হবেন না। তবে ভবিষ্যতে তিনি কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো কোনও কাজ করলে তাকে ওইসবের আওতায় পড়তে হতে পারে।

যুক্তরাজ্যের লর্ড চিফ জাস্টিস লর্ড বার্নেট তাঁর রায়ে বলেন, যে আশ্বাসের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার ভিত্তিতে ওই ঝুঁকি আমাদের বিচার থেকে বাদ দেওয়া হলো।

এদিকে, ব্রিটিশ আদালতের এই রায়কে ‘বিচারের নামে প্রহসন’ উল্লেখ করেছেন  অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা এই ‘রায়ের বিরুদ্ধে যত দ্রুত সম্ভব আপিল করবে’ বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অ্যাসাঞ্জের বাগদত্তা তথা দুই সন্তানের জননী স্টেলা মরিস। শুক্রবার উইকিলিকসের অফিসিয়াল টুইটার ফিডে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এমন কথাই জানান স্টেলা।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের এপ্রিলে ইকুয়েডর থেকে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। এর আগে ইকুয়েডরেই তিনি সাত বছর ধরে আটকে ছিলেন।

মূলত, অ্যাসাঞ্জ প্রতিষ্ঠিত উইকিলিকস ২০১০ সালে হাজার হাজার শ্রেণীবদ্ধ ফাইল এবং কূটনৈতিক গোপন তথ্য ফাঁস করে দেয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ১৮টি ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে পরোয়ানা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

যদিও তাঁকে এখনও লন্ডনের বেলমার্শ কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে। যেখান থেকে নিজেদের হেফাজতে নিতে এক ধাপ দূরে আছে মার্কিন প্রশাসন। আর সেখানে গিয়ে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে ১৭৫ বছর কারাদণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে। সূত্র- রয়টার্স, সিএনএন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

অ্যাসাঞ্জকে হাতে পেতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ‘প্রহসন’ বললেন বাগদত্তা

প্রকাশিত সময় : ১১:২০:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২১

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়ার ব্যাপারে রায় দিয়েছে যুক্তরাজ্যের আদালত। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকের প্রত্যার্পণ মামলার সর্বশেষ ধাপে জয় লাভ করেছে মার্কিন সরকার। তবে এ রায়কে ‘বিচারের নামে প্রহসন’ উল্লেখ করে আইনজীবীরা রায়ের বিরুদ্ধে ‘যত দ্রুত সম্ভব আপিল করবে’ বলেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অ্যাসাঞ্জের বাগদত্তা স্টেলা মরিস।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্রিটিশ আদালতের এক রায়ে বলা হয়, ৫০ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ থাকায় তাঁর ওপর অপরাধের দায় চাপানো যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়া যাবে না।

তবে আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে মার্কিন সরকার। যে আপিলের শুনানি শেষে শুক্রবার ব্রিটিশ আদালত এই বলে রায় দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের আশ্বাসের কারণে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাদ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে জোরালো আশ্বাস দেয় আদালতে। মূলত, ২০১০ ও ২০১১ সালে হাজার হাজার মার্কিন গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে বিচারের মুখোমুখি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়া হলে তাকে কঠোর নিয়ন্ত্রিত কারাগারে রাখা হবে- এমন ঝুঁকির ভিত্তিতেই নিম্ন আদালতের বিচারকেরা জানুয়ারিতে রায় দিয়েছিলেন বলে মনে করছেন যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ বিচারকেরা।

পরে মার্কিন কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেয় যে, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ওইসব কঠোর পদক্ষেপের মুখোমুখি হবেন না। তবে ভবিষ্যতে তিনি কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো কোনও কাজ করলে তাকে ওইসবের আওতায় পড়তে হতে পারে।

যুক্তরাজ্যের লর্ড চিফ জাস্টিস লর্ড বার্নেট তাঁর রায়ে বলেন, যে আশ্বাসের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার ভিত্তিতে ওই ঝুঁকি আমাদের বিচার থেকে বাদ দেওয়া হলো।

এদিকে, ব্রিটিশ আদালতের এই রায়কে ‘বিচারের নামে প্রহসন’ উল্লেখ করেছেন  অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা এই ‘রায়ের বিরুদ্ধে যত দ্রুত সম্ভব আপিল করবে’ বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অ্যাসাঞ্জের বাগদত্তা তথা দুই সন্তানের জননী স্টেলা মরিস। শুক্রবার উইকিলিকসের অফিসিয়াল টুইটার ফিডে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এমন কথাই জানান স্টেলা।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের এপ্রিলে ইকুয়েডর থেকে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। এর আগে ইকুয়েডরেই তিনি সাত বছর ধরে আটকে ছিলেন।

মূলত, অ্যাসাঞ্জ প্রতিষ্ঠিত উইকিলিকস ২০১০ সালে হাজার হাজার শ্রেণীবদ্ধ ফাইল এবং কূটনৈতিক গোপন তথ্য ফাঁস করে দেয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ১৮টি ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে পরোয়ানা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

যদিও তাঁকে এখনও লন্ডনের বেলমার্শ কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে। যেখান থেকে নিজেদের হেফাজতে নিতে এক ধাপ দূরে আছে মার্কিন প্রশাসন। আর সেখানে গিয়ে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে ১৭৫ বছর কারাদণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে। সূত্র- রয়টার্স, সিএনএন।