রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওমিক্রন : যুক্তরাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা

ব্যাপক দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে থাকা মহামারি করোনা ভাইরাসের শক্তিশালী ধরন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে লাগাম টানতে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ব্রিটেন সরকার। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বিবৃতির মাধ্যমে ঘোষণাটি দিয়েছেন।

সেখানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের নতুন রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে আমরা ইংল্যান্ডে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছি। ওমিক্রন সংক্রমণের বড় একটি ঢেউ এখন আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে। সংকটময় এমন পরিস্থিতিতে কেউই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।

জনগণকে কোভিড প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ গ্রহণের তাগিদ দেখিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেছেন, এটি এরই মধ্যে পরিষ্কার যে টিকার দুই ডোজ ওমিক্রনের সংক্রমণ থেকে যথাযথভাবে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। যদিও সুসংবাদ হচ্ছে- আমাদের বিজ্ঞানীরা আত্মবিশ্বাসী যে ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ, কিংবা বুস্টার ডোজ আমাদের সবাইকে এই ধরনটি থেকে কাঙ্ক্ষিত সুরক্ষা দিতে সক্ষম।

এ দিকে সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ মিডিয়া স্কাই নিউজকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে যারা করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে শতকরা ৪০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। সোমবার ব্রিটেনে এই ধরনটিতে আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যুও হয়েছে।

সাজিদ জাভিদ স্কাই নিউজের প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সময়ে দেশে মহামারি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের ৪০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। অভূতপূর্ব গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। প্রতিদিনই এতে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এত ব্যাপক সংক্রামক ভাইরাসটি এর আগে আমরা আর কখনো দেখিনি।

বিশ্লেষকদের মতে, ব্রিটিশ ভূখণ্ডে গেল ২৭ নভেম্বর প্রথম ওমিক্রন সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়। শক্তিশালী এই ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঠেকাতে দেশটিতে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে বরিস জনসনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন।

রবিবার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দেশটিতে করোনা ভাইরাসের বুস্টার ডোজের কর্মসূচি ত্বরান্বিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রিটেনের প্রাপ্তবয়স্ক সকল নাগরিকের জন্য ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়া চলতি মাসের শেষের দিকে চালু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। যুক্তরাজ্যে বর্তমানে দৈনিক ১০ লাখ মানুষকে করোনা প্রতিরোধী টিকার তৃতীয় ডোজ দেওয়ার লক্ষ্য এরই মধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে।

সম্প্রতি কয়েকজন আক্রান্ত হওয়ার পর গেল ২৪ নভেম্বর বিশ্ববাসীকে প্রথম কোভিডের রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনের তথ্য দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। অবশ্য এক গবেষণা থেকে জানা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় শক্তিশালী এই ধরনটির ব্যাপারে বিশ্বকে জানানোর ৫ দিন আগে, নেদারল্যান্ডসে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ৬৩টি দেশে সার্স-কোভ-২ বা করোনা ভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে।

গেল দুই বছরে করোনা মহামারি বিশ্ব থেকে কেড়ে নিয়েছে প্রায় ৫৩ লাখ মানুষের প্রাণ। আর কোটি কোটি মানুষের জীবনযাপনকে করে তুলেছে বিপন্ন। এমনকি বিশ্ব অর্থনীতিরও কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি করেছে।

শ্বাসতন্ত্রের এই প্রাণঘাতী রোগে বিশ্বের যে রাষ্ট্রগুলো ভয়াবহ বিপর্যয় পার করছে, সেসব দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য অন্যতম। ২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে ব্রিটেনে এ পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন মোট এক কোটি আট লাখ ১৯ হাজার ৫১৫ জন। আর রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন মোট এক লাখ ৪৯ হাজার ৪৩৬ জন।

বর্তমানে প্রতিদিন ব্রিটিশ ভূখণ্ডে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। রবিবার যুক্তরাজ্যে করোনায় নতুন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৮৫৪ জন।

ব্রিটেনের জনস্বাস্থ্য ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার যদি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, সে ক্ষেত্রে চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ওমিক্রন : যুক্তরাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা

প্রকাশিত সময় : ১০:০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১

ব্যাপক দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে থাকা মহামারি করোনা ভাইরাসের শক্তিশালী ধরন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে লাগাম টানতে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ব্রিটেন সরকার। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বিবৃতির মাধ্যমে ঘোষণাটি দিয়েছেন।

সেখানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের নতুন রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে আমরা ইংল্যান্ডে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছি। ওমিক্রন সংক্রমণের বড় একটি ঢেউ এখন আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে। সংকটময় এমন পরিস্থিতিতে কেউই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।

জনগণকে কোভিড প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ গ্রহণের তাগিদ দেখিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেছেন, এটি এরই মধ্যে পরিষ্কার যে টিকার দুই ডোজ ওমিক্রনের সংক্রমণ থেকে যথাযথভাবে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। যদিও সুসংবাদ হচ্ছে- আমাদের বিজ্ঞানীরা আত্মবিশ্বাসী যে ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ, কিংবা বুস্টার ডোজ আমাদের সবাইকে এই ধরনটি থেকে কাঙ্ক্ষিত সুরক্ষা দিতে সক্ষম।

এ দিকে সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ মিডিয়া স্কাই নিউজকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে যারা করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে শতকরা ৪০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। সোমবার ব্রিটেনে এই ধরনটিতে আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যুও হয়েছে।

সাজিদ জাভিদ স্কাই নিউজের প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সময়ে দেশে মহামারি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের ৪০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। অভূতপূর্ব গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। প্রতিদিনই এতে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এত ব্যাপক সংক্রামক ভাইরাসটি এর আগে আমরা আর কখনো দেখিনি।

বিশ্লেষকদের মতে, ব্রিটিশ ভূখণ্ডে গেল ২৭ নভেম্বর প্রথম ওমিক্রন সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়। শক্তিশালী এই ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঠেকাতে দেশটিতে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে বরিস জনসনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন।

রবিবার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দেশটিতে করোনা ভাইরাসের বুস্টার ডোজের কর্মসূচি ত্বরান্বিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রিটেনের প্রাপ্তবয়স্ক সকল নাগরিকের জন্য ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়া চলতি মাসের শেষের দিকে চালু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। যুক্তরাজ্যে বর্তমানে দৈনিক ১০ লাখ মানুষকে করোনা প্রতিরোধী টিকার তৃতীয় ডোজ দেওয়ার লক্ষ্য এরই মধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে।

সম্প্রতি কয়েকজন আক্রান্ত হওয়ার পর গেল ২৪ নভেম্বর বিশ্ববাসীকে প্রথম কোভিডের রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনের তথ্য দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। অবশ্য এক গবেষণা থেকে জানা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় শক্তিশালী এই ধরনটির ব্যাপারে বিশ্বকে জানানোর ৫ দিন আগে, নেদারল্যান্ডসে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ৬৩টি দেশে সার্স-কোভ-২ বা করোনা ভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে।

গেল দুই বছরে করোনা মহামারি বিশ্ব থেকে কেড়ে নিয়েছে প্রায় ৫৩ লাখ মানুষের প্রাণ। আর কোটি কোটি মানুষের জীবনযাপনকে করে তুলেছে বিপন্ন। এমনকি বিশ্ব অর্থনীতিরও কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি করেছে।

শ্বাসতন্ত্রের এই প্রাণঘাতী রোগে বিশ্বের যে রাষ্ট্রগুলো ভয়াবহ বিপর্যয় পার করছে, সেসব দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য অন্যতম। ২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে ব্রিটেনে এ পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন মোট এক কোটি আট লাখ ১৯ হাজার ৫১৫ জন। আর রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন মোট এক লাখ ৪৯ হাজার ৪৩৬ জন।

বর্তমানে প্রতিদিন ব্রিটিশ ভূখণ্ডে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। রবিবার যুক্তরাজ্যে করোনায় নতুন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৮৫৪ জন।

ব্রিটেনের জনস্বাস্থ্য ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার যদি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, সে ক্ষেত্রে চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।