মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হিজাব বিতর্কে চাকরি ছাড়লেন প্রভাষক, বললেন এটা ’অগণতান্ত্রিক’

হিজাব বিতর্ক নিয়ে প্রতিদিনই উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে ভারতের কর্নাটকে। এর মধ্যে হিজাব বিতর্কে শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজ্যের তুমাকুরুর জৈন পিইউ কলেজের চাঁদনী নামের এক ইংরেজি প্রভাষক চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। পদত্যাগের বিষয়টি তিনি চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, তাকে হিজাব খুলতে বলেছেন কলেজের অধ্যক্ষ। যা তার আত্মমর্যাদায় আঘাত হেনেছে। এ সিদ্ধান্তকে তিনি ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন বছর ধরে কলেজটিতে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করছিলেন চাঁদনী। কিন্তু কখনোই তার হিজাব পরা নিয়ে আপত্তি জানায়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এবারই প্রথম তকে হিজাব খুলতে বলা হয়েছে।

চাঁদনী চিঠিতে উল্লেখ করেন, আমি গত তিন বছর ধরে জৈন পিইউ কলেজে শিক্ষকতা করছি। হিজাব পরার কারণে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি আমি। কিন্তু গতকাল অধ্যক্ষ আমাকে বলেন যে, আমি পড়াতে গিয়ে হিজাব বা কোনো ধর্মীয় প্রতীক পরতে পারবো না। আমি গত তিন বছর অন্যদের হিজাব পরা শিখিয়েছি। নতুন এই সিদ্ধান্ত আমার আত্মসম্মানে আঘাত হেনেছে। এ কারণেই আমি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এদিকে, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ কে টি মঞ্জুনাথ বলেন, ওই নারী প্রভাষককে কখনো হিজাব খুলতে বলা হয়নি।

এক মাস আগে উদুপির গভর্নমেন্ট গার্লস পিইউ কলেজে থেকে হিজাব ইস্যুতে শুরু হয় প্রতিবাদ।হিজাব পরে আসার কারণে সেখানে ছয় ছাত্রীকে ক্লাসে ঢুকতে দেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকেই আন্দোলন অন্যান্য কলেজেও ছড়িয়ে পড়ে। উদুপি এবং চিক্কামাগালুরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরে কলেজে প্রবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। গেরুয়া উত্তরীয় পরে একদল পডুয়া কলেজে প্রবেশের চেষ্টা করেন। একটি কলেজে দু’পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষও হয়। মঙ্গলবারও সেই বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।

এদিকে কর্ণাটক সরকার জানিয়েছে, শিক্ষানীতি অনুযায়ী সকল শিক্ষার্থীকে স্কুল কর্তৃক নির্ধারিত একই পোশাক পরে শ্রেণিকক্ষে আসতে হবে। কারণ তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, শিক্ষার্থীরা কেমন পোশাক পড়বে তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করবে। জিও টিভির তথ্য অনুযায়ী ক্ষমতাসীন বিজেপি বলেছে, ভারতের স্কুল-কলেজগুলোকে তালেবানি হতে দেবে না। অন্যদিকে মুসলিম ছাত্রীদের এ আন্দোলনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস।

এর আগে ৩ ফেব্রুয়ারি কিছু ছাত্রী হিজাব পরে কর্ণাটকের একটি কলেজে আসলে এটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ছাত্রীরা হিজাব পরে আসায় কলেজের শতাধিক ছাত্র গেরুয়া চাদর পরে কলেজে আসে। এ সময় ছাত্রীদের কলেজ গেটেই আটকে দেওয়া হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

হিজাব বিতর্কে চাকরি ছাড়লেন প্রভাষক, বললেন এটা ’অগণতান্ত্রিক’

প্রকাশিত সময় : ১২:৫৪:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২

হিজাব বিতর্ক নিয়ে প্রতিদিনই উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে ভারতের কর্নাটকে। এর মধ্যে হিজাব বিতর্কে শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজ্যের তুমাকুরুর জৈন পিইউ কলেজের চাঁদনী নামের এক ইংরেজি প্রভাষক চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। পদত্যাগের বিষয়টি তিনি চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, তাকে হিজাব খুলতে বলেছেন কলেজের অধ্যক্ষ। যা তার আত্মমর্যাদায় আঘাত হেনেছে। এ সিদ্ধান্তকে তিনি ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন বছর ধরে কলেজটিতে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করছিলেন চাঁদনী। কিন্তু কখনোই তার হিজাব পরা নিয়ে আপত্তি জানায়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এবারই প্রথম তকে হিজাব খুলতে বলা হয়েছে।

চাঁদনী চিঠিতে উল্লেখ করেন, আমি গত তিন বছর ধরে জৈন পিইউ কলেজে শিক্ষকতা করছি। হিজাব পরার কারণে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি আমি। কিন্তু গতকাল অধ্যক্ষ আমাকে বলেন যে, আমি পড়াতে গিয়ে হিজাব বা কোনো ধর্মীয় প্রতীক পরতে পারবো না। আমি গত তিন বছর অন্যদের হিজাব পরা শিখিয়েছি। নতুন এই সিদ্ধান্ত আমার আত্মসম্মানে আঘাত হেনেছে। এ কারণেই আমি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এদিকে, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ কে টি মঞ্জুনাথ বলেন, ওই নারী প্রভাষককে কখনো হিজাব খুলতে বলা হয়নি।

এক মাস আগে উদুপির গভর্নমেন্ট গার্লস পিইউ কলেজে থেকে হিজাব ইস্যুতে শুরু হয় প্রতিবাদ।হিজাব পরে আসার কারণে সেখানে ছয় ছাত্রীকে ক্লাসে ঢুকতে দেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকেই আন্দোলন অন্যান্য কলেজেও ছড়িয়ে পড়ে। উদুপি এবং চিক্কামাগালুরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরে কলেজে প্রবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। গেরুয়া উত্তরীয় পরে একদল পডুয়া কলেজে প্রবেশের চেষ্টা করেন। একটি কলেজে দু’পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষও হয়। মঙ্গলবারও সেই বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।

এদিকে কর্ণাটক সরকার জানিয়েছে, শিক্ষানীতি অনুযায়ী সকল শিক্ষার্থীকে স্কুল কর্তৃক নির্ধারিত একই পোশাক পরে শ্রেণিকক্ষে আসতে হবে। কারণ তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, শিক্ষার্থীরা কেমন পোশাক পড়বে তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করবে। জিও টিভির তথ্য অনুযায়ী ক্ষমতাসীন বিজেপি বলেছে, ভারতের স্কুল-কলেজগুলোকে তালেবানি হতে দেবে না। অন্যদিকে মুসলিম ছাত্রীদের এ আন্দোলনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস।

এর আগে ৩ ফেব্রুয়ারি কিছু ছাত্রী হিজাব পরে কর্ণাটকের একটি কলেজে আসলে এটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ছাত্রীরা হিজাব পরে আসায় কলেজের শতাধিক ছাত্র গেরুয়া চাদর পরে কলেজে আসে। এ সময় ছাত্রীদের কলেজ গেটেই আটকে দেওয়া হয়।