রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ডাইনিংয়ের খাবারে ‘কটন বাড’ পাওয়ার অজুহাতে হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১ থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত হল গেটে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। পরে বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসন ছাত্রলীগের সাথে আলোচনায় বসেও কোনো সমাধান আসেনি।

এর আগে দুপুর ১টায় দিকে হলের ডাইনিংয়ের খাবারে কটন বাড পাওয়ার অভিযোগে হলের গেটে তালা লাগিয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করে। পরে সেখানে অন্যান্য হলের নেতাকর্মীদের উপস্থিত হতে দেখা যায়। এসময় তারা হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন। তবে সেখানে খাবারে কটন বাড পাওয়ার অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এদিকে ডাইনিংয়ের একাধিক কর্মচারী দাবি করেছেন খাবারে এরকম কিছু পাওয়া যায়নি। এদিকে এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা পড়েছেন চরম বিপদে। তারা জরুরী কোনো প্রয়োজনে হল থেকে বের হতে পারছেন। এমতাবস্থায় অনেকে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশ বেয়ে নামছেন হলের ছাদ থেকে ।

এ ঘটনায় বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসনের সাথে আলোচনায় বসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা মো. তারেক নূর, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ সুজন সেন, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন।

পরে আগামী রোববার প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বৈঠক থেকে বের হয়েছেন। এর প্রায় ১০ মিনিট পর ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টরসহ প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরা বের হয়ে আসেন।

শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, অবৈধ শিক্ষার্থীদের ছাঁটাই করে বৈধ শিক্ষার্থীদের হলে তুলে দিচ্ছেন জিয়া হল প্রাধ্যক্ষ ড. সুজন সেন। এদিকে যাদেরকে হল থেকে ছাটাই করা হয়েছে তারা অধিকাংশই ছাত্রলীগের মাধ্যমে অবৈধভাবে হলের সিটে থাকতেন বলে জানা যায়।

আলোচনা শেষে প্রাধ্যক্ষ সুজন সেন বলেন, হলের শিক্ষার্থীরা বেশকিছু অভিযোগ করেছে। এগুলো সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগামী রোববার আমাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছেন। সেদিন বসে এই অভিযোগগুলোর সমাধান করা হবে।

এসময় প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো জানিয়েছে। আমরা এই নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করবো। ছাত্রলীগের সিট বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, সিট বরাদ্দ নিয়ে কিছু ঝামেলা হয়েছে। এগুলো রিভাইসড করে ঠিক করা হবে। ছাত্রলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আগামী রোববার বৈঠক হবে। সেখানে বিষয়টি সমাধান করা হবে।

ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ছাত্ররা হলের ডাইনিংয়ে খাবার মান বৃদ্ধি, ওয়াইফাই প্রবলেম, খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আন্দোলন করছিলেন বিষয়টি জানতে পেরে জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগ তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে। সেখানে আমাকে ডাকলে আমি বৈঠকে বসি। বৈঠকের বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়। আমি বলি যদি দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন না হয় তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যদি গেইটে তালা লাগিয়ে দেয় তবে ছাত্রলীগ যৌক্তিক আন্দোলন হিসেবে তার সাথে সংহতি প্রকাশ করবে।

হলের সিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এটি নিয়ে পরে আলোচনা করেছি। তবে কোনো সমাধান হয়নি। আগামী রোববার বৈঠক হবে প্রশাসনের সঙ্গে। সুযোগ সুবিধার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। সার্বিক বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ সুজন সেন বলেন, তারা বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে। আগামী রোববার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে সেখানে বিষয়টি সমাধান হবে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জিয়া হলে সিট বরাদ্দ নিয়ে নোটিশ প্রকাশ করেছে হল প্রশাসন। এতে অনেক ছাত্রলীগ নেতার (অনাবাসিক) কক্ষে নতুন করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।