মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে যুগান্তকারী রায় কর্ণাটক হাইকোর্টের

স্ত্রী পুরুষের সম্পত্তি নয়। স্বামী কখনো স্ত্রীর হুজুর হতে পারে না। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী তাদের সমানাধিকার। এবং স্বামীকে স্ত্রীর স্বাধীনতা এবং সম্মান রক্ষা করতেই হবে। স্ত্রীর অনিচ্ছায় যৌনতা হলো ধর্ষণেরই সামিল। এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমনই রায় দিয়েছে ভারতের কর্ণাটকের হাইকোর্ট।

বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে আলোচনা চলছে। বহু মানবাধিকার সংগঠন এই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন চালাচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লি হাইকোর্টেও এ বিষয়ে মামলা উঠেছিল। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের এবিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছিল আদালত। তবে কর্ণাটক হাইকোর্ট বুধবার যে রায় দিয়েছে, তা যুগান্তকারী। মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এই রায় তাদের আন্দোলনকে আরো এক ধাপ এগিয়ে দিল।

কর্ণাটক আদালত জানিয়েছে, আইন তৈরি করা আদালতের কাজ নয়। দেশের সংসদ সে কাজ করে। কিন্তু সংবিধান মেনে আদালত বিচার করে। দেশের সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, নারী এবং পুরুষের সমানাধিকার। ফলে নারী কখনো সম্ভোগের বস্তু হতে পারে না। বিয়ের পরেও না। নারীর অমতে তার স্বামী যদি তার সঙ্গে যৌন মিলনের চেষ্টা করে, তাহলে তা ধর্ষণেরই সামিল। একজন ধর্ষণকারীর যে শাস্তি, স্বামীকেও সেই একই শাস্তি দেওয়া উচিত।=

কিছুদিন আগে কর্ণাটক হাইকোর্টে এক নারী একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। তার অভিযোগ, তার স্বামী তার অমতে তার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে যান। সেই মামলার রেশ ধরেই এদিন এই রায় দিয়েছে কর্ণাটক আদালত।

মানবাধিকারকর্মীদের প্রশ্ন, আদালতের এই রায়ের পর বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে কি কেন্দ্রীয় সরকার নতুন আইন প্রণয়নের কথা ভাববে? প্রশ্ন উঠছে কারণ, এর আগে দিল্লি হাইকোর্ট যখন এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মতামত জানতে চেয়েছিল, তখন কেন্দ্রের আইনজীবী বলেছিলেন, সরকার মনে করে এই ধরনের বিষয় অত্যন্ত পারিবারিক। ভারতীয় সংস্কৃতিতে পরিবারের কিছু ঐতিহ্য আছে। সে দিকে নজর রাখা দরকার। এই ধরনের বিষয় সামনে এলে পরিবারের ঐতিহ্য নষ্ট হতে পারে।

এদিন কর্ণাটক হাইকোর্ট বলেছে, ঐতিহ্যের কথা ভেবে এমন অত্যাচার বরদাস্ত করা যায় না। দিনের পর দিন নারীরা আক্রান্ত হয়েছেন। তারা চুপ করে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। সময় হয়েছে, সেই স্তব্ধতা ভাঙার। নিজেদের অসুবিধার কথা জানানোর। নারী-পুরুষের সমানাধিকার সুনিশ্চিত করার।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে যুগান্তকারী রায় কর্ণাটক হাইকোর্টের

প্রকাশিত সময় : ০২:৩১:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ মার্চ ২০২২

স্ত্রী পুরুষের সম্পত্তি নয়। স্বামী কখনো স্ত্রীর হুজুর হতে পারে না। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী তাদের সমানাধিকার। এবং স্বামীকে স্ত্রীর স্বাধীনতা এবং সম্মান রক্ষা করতেই হবে। স্ত্রীর অনিচ্ছায় যৌনতা হলো ধর্ষণেরই সামিল। এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমনই রায় দিয়েছে ভারতের কর্ণাটকের হাইকোর্ট।

বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে আলোচনা চলছে। বহু মানবাধিকার সংগঠন এই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন চালাচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লি হাইকোর্টেও এ বিষয়ে মামলা উঠেছিল। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের এবিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছিল আদালত। তবে কর্ণাটক হাইকোর্ট বুধবার যে রায় দিয়েছে, তা যুগান্তকারী। মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এই রায় তাদের আন্দোলনকে আরো এক ধাপ এগিয়ে দিল।

কর্ণাটক আদালত জানিয়েছে, আইন তৈরি করা আদালতের কাজ নয়। দেশের সংসদ সে কাজ করে। কিন্তু সংবিধান মেনে আদালত বিচার করে। দেশের সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, নারী এবং পুরুষের সমানাধিকার। ফলে নারী কখনো সম্ভোগের বস্তু হতে পারে না। বিয়ের পরেও না। নারীর অমতে তার স্বামী যদি তার সঙ্গে যৌন মিলনের চেষ্টা করে, তাহলে তা ধর্ষণেরই সামিল। একজন ধর্ষণকারীর যে শাস্তি, স্বামীকেও সেই একই শাস্তি দেওয়া উচিত।=

কিছুদিন আগে কর্ণাটক হাইকোর্টে এক নারী একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। তার অভিযোগ, তার স্বামী তার অমতে তার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে যান। সেই মামলার রেশ ধরেই এদিন এই রায় দিয়েছে কর্ণাটক আদালত।

মানবাধিকারকর্মীদের প্রশ্ন, আদালতের এই রায়ের পর বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে কি কেন্দ্রীয় সরকার নতুন আইন প্রণয়নের কথা ভাববে? প্রশ্ন উঠছে কারণ, এর আগে দিল্লি হাইকোর্ট যখন এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মতামত জানতে চেয়েছিল, তখন কেন্দ্রের আইনজীবী বলেছিলেন, সরকার মনে করে এই ধরনের বিষয় অত্যন্ত পারিবারিক। ভারতীয় সংস্কৃতিতে পরিবারের কিছু ঐতিহ্য আছে। সে দিকে নজর রাখা দরকার। এই ধরনের বিষয় সামনে এলে পরিবারের ঐতিহ্য নষ্ট হতে পারে।

এদিন কর্ণাটক হাইকোর্ট বলেছে, ঐতিহ্যের কথা ভেবে এমন অত্যাচার বরদাস্ত করা যায় না। দিনের পর দিন নারীরা আক্রান্ত হয়েছেন। তারা চুপ করে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। সময় হয়েছে, সেই স্তব্ধতা ভাঙার। নিজেদের অসুবিধার কথা জানানোর। নারী-পুরুষের সমানাধিকার সুনিশ্চিত করার।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে