শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পশ্চিমবঙ্গে খোশমেজাজে পি কে হালদার, কড়া প্রতিক্রিয়া দিল বিজেপি

বহুল চর্চিত পি কে হালদারকে নিয়ে মুখ খুলল পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। এরআগে গত রবিবার পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক এবং রাজ্যটির প্রভাবশালী মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক পি কে কাণ্ডে কথা বলেছেন।

সোমবার (১৬ মে) পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধীদল বিজেপির মুখপাত্র শমিক ভট্টাচার্য্য জানান, পি কে হালদার নামে যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনি বাংলাদেশের আর্থিক খাতের জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত। সে কলকাতার অশোকনগর এর মতো একটি জায়গায় বাড়ি করেছে, ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে। আর সেই খবর প্রশাসন জানে না, এটা হতে পারে না। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের মদদ ছাড়া এভাবে ব্যবসা বাড়ানো যায় না। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বড় বিপদ।

তিনি বলেন, আমরা চাই তদন্ত হোক এবং সত্য ঘটনা সামনে আসুক। তার অভিযোগ, অতীতে সিপিআইএম এদের মদদ দিয়ে বিষবৃক্ষ তৈরি করেছে, আর এখন তৃণমূল কংগ্রেস এই বিষবৃক্ষকে আরো জড়িয়ে ধরেছে। শমিকের অভিমত, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকেও বিষয়টি জানাতে হবে। কারণ এখানে বসে শেখ হাসিনা সরকারকে খুনের চক্রান্ত করা হচ্ছে, মুজিব হত্যার আসামিদের এখান থেকে ধরা হচ্ছে, বহু অপরাধী বাংলাদেশ থেকে অপরাধ করে এখানে নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে বসে আছে। এটা চলতে পারে না।

এদিকে, গত শনিবার গ্রেপ্তার হওয়া পি কে হালদার ও তার সহযোগিরা বর্তমানে ইডির জেরার মুখে রয়েছেন। সোমবার (১৬ মে) ইডি কার্যালয়ে জেরার একফাঁকে পি কে হালদার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি দেশে ফিরতে চান এবং ফাঁস করতে চান রাঘববোয়ালদের নাম। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ ঠিক নয়। ইডি সূত্রের খবর, রবিবার রাতের পর সোমবার দিনভর পি কে হালদার ও তার ভাই প্রানেশকে জেরা করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, হাওয়ালার মাধ্যমে কত টাকা কবে থেকে আনা হয় ভারতে। কোন কোন দেশে কোথায় কোথায় কোন কোন ক্ষেত্রে এই টাকা বিনিয়োগ করেছে সে। জেরায় পিকে জানিয়েছে, টাকা তছরুপ কাণ্ডে তাকে যেভাবে ফাঁসানো হয়েছে তা ঠিক নয়। এ ঘটনায় শুধু তিনি নয়, মূল নায়ক অন্য অনেকেই। বাংলাদেশে ফিরে সরকারকে সব সত্যিটা তিনি জানাবেন।

ইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দু’দিনের তুলনায় সোমবার অনেকটাই খোশমেজাজে ছিলেন পি কে হালদার। দিনে তিন বেলায় তাদের বাইরে থেকে খাবার এনে দেয়া হয়েছে। তাদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেদিকটিও মাথায় রাখছেন ইডির কর্মকর্তারা। এরইমধ্যে তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব মোবাইলের লক খুলে তদন্ত করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। প্রত্যেকের কাছ থেকেই মোবাইলে রাখা তথ্য/ডেটা সংগ্রহ করছেন তারা। মোবাইল ডিভাইস থেকে মিলেছে বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য। যার সূত্র ধরে এদেশে বিনিয়োগ করা ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ শুরু করেছে ইডি। ভারতে নানা স্থানে সম্পত্তি, ব্যবসা আর ব্যাঙ্কে টাকা রাখার ক্ষেত্রে যারা জড়িত তাদের ওপর নজরদারি শুরু করেছে ইডি। সূত্রের খবর, ছোটো ছোটো একাধিক টিমে ভাগ হয়ে পি কে হালদারের হাওয়ালার চক্র ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদেরও এবার নিজেদের আয়ত্তে আনতে সক্ষম হবেন ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি।

এরআগে, গত শুক্র ও শনিবার পশ্চিমবঙ্গের ১১টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০২ সালের ‘প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (পিএমএলএ)’ এর অধীনে ৩ ও ৪ ধারায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া পি কে হালদার ছাড়াও অন্যরা হলেন প্রাণেশ কুমার হালদার, স্বপন মিত্র ওরফে স্বপন মিস্ত্রি, উত্তম মৈত্র ওরফে উত্তম মিস্ত্রি, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শারমিন হালদার। গ্রেপ্তার ৬ জনকেই শনিবার কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে (স্পেশাল সিবিআই-১) তোলা হলে ৫ জনকে ইডির রিমান্ডে নেয়া হয় এবং একজনকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার (১৭ মে) অভিযুক্ত সবাইকে ফের আদালতে তোলা হবে। এদিন সকালে প্রথমে সিজিও কম্প্লেক্স থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে মেডিকেল চেকআপ করিয়ে তোলা হবে আদালতে। সেক্ষেত্রে ফের নিজেদের হেফাজতে চাইতে আদালতে আবেদন জানাতে পারে ইডি। কারণ ইডি সূত্রে খবর এখনো বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর তাদের অজানা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদার এর বিরুদ্ধে এবং সেই টাকা বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ভারতে এই বিষয়টি পিএমএল আইনে একটি গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত করা হয়েছে। এই পি. কে হালদার নিজের আসল নাম বদল করে শিবশংকর হালদার নামে ভারতে বসবাস করছিল। পি কে এবং তার সহযোগিরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে ইস্যু করা রেশন কার্ড এবং ভারত সরকারের ইস্যু করা আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড বানিয়ে ফেলে। প্রাথমিক তদন্তে ইডি জানতে পেরেছে বাংলাদেশ এবং ভারতীয় পাসপোর্ট এর পাশাপাশি পিকে হালদারের ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ গ্রেনেডার পাসপোর্ট ছিল এবং তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশও ছিল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

পশ্চিমবঙ্গে খোশমেজাজে পি কে হালদার, কড়া প্রতিক্রিয়া দিল বিজেপি

প্রকাশিত সময় : ১০:১৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ মে ২০২২

বহুল চর্চিত পি কে হালদারকে নিয়ে মুখ খুলল পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। এরআগে গত রবিবার পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক এবং রাজ্যটির প্রভাবশালী মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক পি কে কাণ্ডে কথা বলেছেন।

সোমবার (১৬ মে) পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধীদল বিজেপির মুখপাত্র শমিক ভট্টাচার্য্য জানান, পি কে হালদার নামে যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনি বাংলাদেশের আর্থিক খাতের জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত। সে কলকাতার অশোকনগর এর মতো একটি জায়গায় বাড়ি করেছে, ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে। আর সেই খবর প্রশাসন জানে না, এটা হতে পারে না। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের মদদ ছাড়া এভাবে ব্যবসা বাড়ানো যায় না। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বড় বিপদ।

তিনি বলেন, আমরা চাই তদন্ত হোক এবং সত্য ঘটনা সামনে আসুক। তার অভিযোগ, অতীতে সিপিআইএম এদের মদদ দিয়ে বিষবৃক্ষ তৈরি করেছে, আর এখন তৃণমূল কংগ্রেস এই বিষবৃক্ষকে আরো জড়িয়ে ধরেছে। শমিকের অভিমত, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকেও বিষয়টি জানাতে হবে। কারণ এখানে বসে শেখ হাসিনা সরকারকে খুনের চক্রান্ত করা হচ্ছে, মুজিব হত্যার আসামিদের এখান থেকে ধরা হচ্ছে, বহু অপরাধী বাংলাদেশ থেকে অপরাধ করে এখানে নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে বসে আছে। এটা চলতে পারে না।

এদিকে, গত শনিবার গ্রেপ্তার হওয়া পি কে হালদার ও তার সহযোগিরা বর্তমানে ইডির জেরার মুখে রয়েছেন। সোমবার (১৬ মে) ইডি কার্যালয়ে জেরার একফাঁকে পি কে হালদার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি দেশে ফিরতে চান এবং ফাঁস করতে চান রাঘববোয়ালদের নাম। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ ঠিক নয়। ইডি সূত্রের খবর, রবিবার রাতের পর সোমবার দিনভর পি কে হালদার ও তার ভাই প্রানেশকে জেরা করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, হাওয়ালার মাধ্যমে কত টাকা কবে থেকে আনা হয় ভারতে। কোন কোন দেশে কোথায় কোথায় কোন কোন ক্ষেত্রে এই টাকা বিনিয়োগ করেছে সে। জেরায় পিকে জানিয়েছে, টাকা তছরুপ কাণ্ডে তাকে যেভাবে ফাঁসানো হয়েছে তা ঠিক নয়। এ ঘটনায় শুধু তিনি নয়, মূল নায়ক অন্য অনেকেই। বাংলাদেশে ফিরে সরকারকে সব সত্যিটা তিনি জানাবেন।

ইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দু’দিনের তুলনায় সোমবার অনেকটাই খোশমেজাজে ছিলেন পি কে হালদার। দিনে তিন বেলায় তাদের বাইরে থেকে খাবার এনে দেয়া হয়েছে। তাদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেদিকটিও মাথায় রাখছেন ইডির কর্মকর্তারা। এরইমধ্যে তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব মোবাইলের লক খুলে তদন্ত করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। প্রত্যেকের কাছ থেকেই মোবাইলে রাখা তথ্য/ডেটা সংগ্রহ করছেন তারা। মোবাইল ডিভাইস থেকে মিলেছে বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য। যার সূত্র ধরে এদেশে বিনিয়োগ করা ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ শুরু করেছে ইডি। ভারতে নানা স্থানে সম্পত্তি, ব্যবসা আর ব্যাঙ্কে টাকা রাখার ক্ষেত্রে যারা জড়িত তাদের ওপর নজরদারি শুরু করেছে ইডি। সূত্রের খবর, ছোটো ছোটো একাধিক টিমে ভাগ হয়ে পি কে হালদারের হাওয়ালার চক্র ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদেরও এবার নিজেদের আয়ত্তে আনতে সক্ষম হবেন ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি।

এরআগে, গত শুক্র ও শনিবার পশ্চিমবঙ্গের ১১টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০২ সালের ‘প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (পিএমএলএ)’ এর অধীনে ৩ ও ৪ ধারায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া পি কে হালদার ছাড়াও অন্যরা হলেন প্রাণেশ কুমার হালদার, স্বপন মিত্র ওরফে স্বপন মিস্ত্রি, উত্তম মৈত্র ওরফে উত্তম মিস্ত্রি, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শারমিন হালদার। গ্রেপ্তার ৬ জনকেই শনিবার কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে (স্পেশাল সিবিআই-১) তোলা হলে ৫ জনকে ইডির রিমান্ডে নেয়া হয় এবং একজনকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার (১৭ মে) অভিযুক্ত সবাইকে ফের আদালতে তোলা হবে। এদিন সকালে প্রথমে সিজিও কম্প্লেক্স থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে মেডিকেল চেকআপ করিয়ে তোলা হবে আদালতে। সেক্ষেত্রে ফের নিজেদের হেফাজতে চাইতে আদালতে আবেদন জানাতে পারে ইডি। কারণ ইডি সূত্রে খবর এখনো বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর তাদের অজানা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদার এর বিরুদ্ধে এবং সেই টাকা বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ভারতে এই বিষয়টি পিএমএল আইনে একটি গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত করা হয়েছে। এই পি. কে হালদার নিজের আসল নাম বদল করে শিবশংকর হালদার নামে ভারতে বসবাস করছিল। পি কে এবং তার সহযোগিরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে ইস্যু করা রেশন কার্ড এবং ভারত সরকারের ইস্যু করা আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড বানিয়ে ফেলে। প্রাথমিক তদন্তে ইডি জানতে পেরেছে বাংলাদেশ এবং ভারতীয় পাসপোর্ট এর পাশাপাশি পিকে হালদারের ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ গ্রেনেডার পাসপোর্ট ছিল এবং তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশও ছিল।