শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ঘরে স্ত্রীর লাশ, অভিযোগ হত্যা

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কমলাপুরে নিজ বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

ওই গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বলছেন, এটি আত্মহত্যা।

নিহতের নাম নূরজাহান পারভীন (৪২)। তার স্বামী নজরুল ইসলাম কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাদের পরিবারে ১৩ বছরের এক মেয়ে ও ৪ বছরের এক ছেলে রয়েছে।

স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নজরুল ইসলামের সঙ্গে পারিবারিকভাবে ১৭ বছর আগে নূরজাহানের বিয়ে হয়। কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের পেছনে গীর্জানাথ মজুমদার সড়কে নিজেদের দোতলা বাড়ির নিচতলায় থাকতেন ওই দম্পতি। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ চলে আসছিল। সম্প্রতি স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ চরম আকার ধারণ করে।

দুই সন্তানের বরাত দিয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম বলেন, গত রোববার দিবাগত রাতে তাদের ঝগড়ার একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ছেলের খেলার প্লাস্টিকের ব্যাট দিয়ে স্ত্রীর পায়ে ও হাতে আঘাত করেন নজরুল ইসলাম। এ নিয়ে গতকাল সোমবার সারা দিন দুজনের মনোমালিন্য চলছিল। রাগ ভাঙানোর অনেক চেষ্টাও করেন নজরুল ইসলাম।

ওসি বলেন, গতকাল রাতে দোতলা বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষের ভেতর চিৎকার–চেচামেচি শোনা যায়। কিছুক্ষণ পর আর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি। আজ সকালে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

নূরজাহানের ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি গতকাল রাত ৮টার দিকে খবর পান নূরজাহানের কিছু একটা হয়েছে। রাত ১০টার দিকে বাসায় গিয়ে দেখতে পান, কক্ষের দরজা বন্ধ। দরজা ভেঙে দেখতে পান সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না টাঙানো। লাশ নিচে পড়ে আছে। তবে ওই কক্ষের পেছনের দিকে আরও একটি দরজা আছে। সেটা বন্ধ ছিল কি না, তা বলতে পারছেন না।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘নূরজাহানের শরীরের বেশ কয়েক জায়গায় আঘাতের চিহ্নও দেখা যায়। আমার বোনকে অত্যাচার করা হতো। নজরুল ইসলাম মাদকও সেবন করেন। মারধর করে নূরজাহানকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ দাফনের পর মামলা করা হবে।’

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘তিন সদস্যের একটি বোর্ড লাশের ময়নাতদন্ত করেছে। শরীরে আঘাতের কিছু চিহ্ন দেখা গেছে। বিস্তারিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সংসারে ঝগড়া-বিবাদ হতেই পারে। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আত্মহত্যা করে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে, এটা ভাবতে পারছি না। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন।’ তার স্ত্রীর ভাইয়ের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ঘরে স্ত্রীর লাশ, অভিযোগ হত্যা

প্রকাশিত সময় : ১১:০১:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ মে ২০২২

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কমলাপুরে নিজ বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

ওই গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বলছেন, এটি আত্মহত্যা।

নিহতের নাম নূরজাহান পারভীন (৪২)। তার স্বামী নজরুল ইসলাম কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাদের পরিবারে ১৩ বছরের এক মেয়ে ও ৪ বছরের এক ছেলে রয়েছে।

স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নজরুল ইসলামের সঙ্গে পারিবারিকভাবে ১৭ বছর আগে নূরজাহানের বিয়ে হয়। কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের পেছনে গীর্জানাথ মজুমদার সড়কে নিজেদের দোতলা বাড়ির নিচতলায় থাকতেন ওই দম্পতি। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ চলে আসছিল। সম্প্রতি স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ চরম আকার ধারণ করে।

দুই সন্তানের বরাত দিয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম বলেন, গত রোববার দিবাগত রাতে তাদের ঝগড়ার একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ছেলের খেলার প্লাস্টিকের ব্যাট দিয়ে স্ত্রীর পায়ে ও হাতে আঘাত করেন নজরুল ইসলাম। এ নিয়ে গতকাল সোমবার সারা দিন দুজনের মনোমালিন্য চলছিল। রাগ ভাঙানোর অনেক চেষ্টাও করেন নজরুল ইসলাম।

ওসি বলেন, গতকাল রাতে দোতলা বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষের ভেতর চিৎকার–চেচামেচি শোনা যায়। কিছুক্ষণ পর আর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি। আজ সকালে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

নূরজাহানের ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি গতকাল রাত ৮টার দিকে খবর পান নূরজাহানের কিছু একটা হয়েছে। রাত ১০টার দিকে বাসায় গিয়ে দেখতে পান, কক্ষের দরজা বন্ধ। দরজা ভেঙে দেখতে পান সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না টাঙানো। লাশ নিচে পড়ে আছে। তবে ওই কক্ষের পেছনের দিকে আরও একটি দরজা আছে। সেটা বন্ধ ছিল কি না, তা বলতে পারছেন না।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘নূরজাহানের শরীরের বেশ কয়েক জায়গায় আঘাতের চিহ্নও দেখা যায়। আমার বোনকে অত্যাচার করা হতো। নজরুল ইসলাম মাদকও সেবন করেন। মারধর করে নূরজাহানকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ দাফনের পর মামলা করা হবে।’

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘তিন সদস্যের একটি বোর্ড লাশের ময়নাতদন্ত করেছে। শরীরে আঘাতের কিছু চিহ্ন দেখা গেছে। বিস্তারিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সংসারে ঝগড়া-বিবাদ হতেই পারে। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আত্মহত্যা করে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে, এটা ভাবতে পারছি না। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন।’ তার স্ত্রীর ভাইয়ের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।