শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাল এনআইডি ও জন্মসনদ তৈরি চক্রের ৫ সদস্য আটক

উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১ ডব্লিউ) অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক নকল বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), জন্মসনদ ও পাসপোর্ট তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। এ সময় ওই চক্রের পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার রাতে লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা রোহিঙ্গা মো. আবদুল্লাহর (৩৭) বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এসব সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. কামরান হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এপিবিএন জানিয়েছে, আটক পাঁচজনের মধ্যে চারজন রোহিঙ্গা ও একজন বাংলাদেশি। চক্রটি আশ্রয়শিবিরে যন্ত্রপাতি স্থাপন করে সাধারণ রোহিঙ্গাদের নকল জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট বানিয়ে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত।

আটক ব্যক্তিরা হলেন- লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের ক্যাম্প-১ ডব্লিউ’র এফ-১০ ব্লকের রোহিঙ্গা মো. আবদুল্লাহ (৩৭), আবুল খায়ের (১৮), এফ-১৩ ব্লকের মো. তালহা (৬০) ও মো. হারুন (৩৬) এবং টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ উত্তরপাড়ার সৈয়দ হোসেনের ছেলে মো. ইসমাইল (৪৫)।

কামরান হোসেন বলেন, আটক চক্রটি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয়শিবিরে অবৈধভাবে নকল এনআইডি তৈরি করে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে সরবরাহ করে আসছেন। এ ছাড়া তাদের দালাল চক্র পাসপোর্ট তৈরি করে দেয়। গ্রেপ্তার পাঁচজনকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করে মামলা হয়েছে।

এপিবিএন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবির থেকে ২৮টি অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ, ১১টি জন্মনিবন্ধন তথ্য যাচাই, ৩০টি নকল জন্মসনদ, ২০টি নকল এনআইডি, ২০০টি বিভিন্ন ব্যক্তির এনআইডির ফটোকপি, ৪টি ল্যাপটপ, ৮টি স্মার্টফোন, ৪টি পেনড্রাইভ, ২টি স্ক্যানার ও প্রিন্টার, সোনালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকের চেক ও জমা বই, ৫টি সিল, সমবায় সমিতির একটি নিবন্ধন সনদপত্র, শাহপুরি বাস্তুহারা আদর্শগ্রাম সমবায় সমিতি লিমিটেডের ২০টি সদস্য ফরম, ৩৫টি টাকা জমা দেওয়ার ব্যাংক পাস বই, উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৮টি ট্রেড লাইসেন্স, বিদ্যুৎ বিলের কাগজপত্র, জমির দলিল ও খতিয়ান ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, আশ্রয়শিবিরের ত্রিপলের ছাউনিতে পাঁচ বছর ধরে বসতি করছেন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বিভিন্ন জায়গায় বসতি করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ ও বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাতে চান অনেক রোহিঙ্গা। এর মধ্যে দালাল চক্রকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে অনেক রোহিঙ্গা পাসপোর্ট নিয়ে মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এর আগে বাংলাদেশি পাসপোর্টসহ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরাও পড়েছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাল এনআইডি ও জন্মসনদ তৈরি চক্রের ৫ সদস্য আটক

প্রকাশিত সময় : ০৫:০২:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই ২০২২

উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১ ডব্লিউ) অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক নকল বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), জন্মসনদ ও পাসপোর্ট তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। এ সময় ওই চক্রের পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার রাতে লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা রোহিঙ্গা মো. আবদুল্লাহর (৩৭) বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এসব সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. কামরান হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এপিবিএন জানিয়েছে, আটক পাঁচজনের মধ্যে চারজন রোহিঙ্গা ও একজন বাংলাদেশি। চক্রটি আশ্রয়শিবিরে যন্ত্রপাতি স্থাপন করে সাধারণ রোহিঙ্গাদের নকল জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট বানিয়ে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত।

আটক ব্যক্তিরা হলেন- লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের ক্যাম্প-১ ডব্লিউ’র এফ-১০ ব্লকের রোহিঙ্গা মো. আবদুল্লাহ (৩৭), আবুল খায়ের (১৮), এফ-১৩ ব্লকের মো. তালহা (৬০) ও মো. হারুন (৩৬) এবং টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ উত্তরপাড়ার সৈয়দ হোসেনের ছেলে মো. ইসমাইল (৪৫)।

কামরান হোসেন বলেন, আটক চক্রটি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয়শিবিরে অবৈধভাবে নকল এনআইডি তৈরি করে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে সরবরাহ করে আসছেন। এ ছাড়া তাদের দালাল চক্র পাসপোর্ট তৈরি করে দেয়। গ্রেপ্তার পাঁচজনকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করে মামলা হয়েছে।

এপিবিএন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবির থেকে ২৮টি অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ, ১১টি জন্মনিবন্ধন তথ্য যাচাই, ৩০টি নকল জন্মসনদ, ২০টি নকল এনআইডি, ২০০টি বিভিন্ন ব্যক্তির এনআইডির ফটোকপি, ৪টি ল্যাপটপ, ৮টি স্মার্টফোন, ৪টি পেনড্রাইভ, ২টি স্ক্যানার ও প্রিন্টার, সোনালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকের চেক ও জমা বই, ৫টি সিল, সমবায় সমিতির একটি নিবন্ধন সনদপত্র, শাহপুরি বাস্তুহারা আদর্শগ্রাম সমবায় সমিতি লিমিটেডের ২০টি সদস্য ফরম, ৩৫টি টাকা জমা দেওয়ার ব্যাংক পাস বই, উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৮টি ট্রেড লাইসেন্স, বিদ্যুৎ বিলের কাগজপত্র, জমির দলিল ও খতিয়ান ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, আশ্রয়শিবিরের ত্রিপলের ছাউনিতে পাঁচ বছর ধরে বসতি করছেন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বিভিন্ন জায়গায় বসতি করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ ও বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাতে চান অনেক রোহিঙ্গা। এর মধ্যে দালাল চক্রকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে অনেক রোহিঙ্গা পাসপোর্ট নিয়ে মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এর আগে বাংলাদেশি পাসপোর্টসহ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরাও পড়েছেন।