রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি, বেরিয়ে এলো ছাত্রলীগ নেতার নাম! 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে আসা চারজন এবং একজন ক্যান্ডিডেটসহ মোট পাঁচ জনকে কারাদণ্ড দিয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় প্রক্সিদাতাদের একজন বায়জিদ খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তিনি রাবি ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময়ের নির্দেশে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনে অনুষ্ঠিত ‘এ’ ইউনিটের গ্রুপ-২ এর ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে ধরা পড়েন বায়জিদ খান। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরে নেন।

প্রক্টর দপ্তরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বায়জিদ জানান, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তারা বাসা টাঙ্গাইলের মধুপুরে।

জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বায়জিদ বলেন, একই বিভাগের তার বন্ধু ও রাবি ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময় তাকে প্রক্সির কাজ দিয়েছেন। তিনি প্রক্সি দিতে সকালে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। প্রক্সি দেয়ার পূর্বে তিনি তার ব্যক্তিগত ফোন তন্ময়ের কাছে জমা রেখেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের এই ভিডিওটি গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুশফিক তাহমিদ তন্ময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ্ মখদুম হলে থাকেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্য, সিট বাণিজ্যসহ রাবি ও রুয়েট ক্যাম্পাসে ইয়াবা ও মাদক পাচারের সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে একাধিকবার ফোন করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সির সঙ্গে ‘সম্পৃক্ততা’ থাকায় তন্ময়ের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, বিষয়টি আমরা গতকাল শুনেছি। আমরা খুব দ্রুতই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে এ ঘটনায় প্রমাণসাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মেহেদী হাসান তাপস বলেন, এই বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। তবে সে যদি সত্যি এমনটা করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, জালিয়াতির ঘটনায় অভিযুক্তদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের একজন তন্ময় নামের একজনের কথা বলেছে। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনকে তদন্ত করতে অনুরোধ জানিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে তন্ময়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা, এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আইন সব সময় আইনের গতিতেই চলবে। ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে যে বা যারা জড়িত, তাদের পরিচয় যতই শক্ত হোক না কেন, অপরাধ প্রমাণ হলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং গোয়ান্দা সংস্থা সর্বদা তৎপর রয়েছেন। আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত প্রমাণসাপেক্ষ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

রাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি, বেরিয়ে এলো ছাত্রলীগ নেতার নাম! 

প্রকাশিত সময় : ০৩:১৫:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ জুলাই ২০২২

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে আসা চারজন এবং একজন ক্যান্ডিডেটসহ মোট পাঁচ জনকে কারাদণ্ড দিয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় প্রক্সিদাতাদের একজন বায়জিদ খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তিনি রাবি ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময়ের নির্দেশে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনে অনুষ্ঠিত ‘এ’ ইউনিটের গ্রুপ-২ এর ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে ধরা পড়েন বায়জিদ খান। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরে নেন।

প্রক্টর দপ্তরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বায়জিদ জানান, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তারা বাসা টাঙ্গাইলের মধুপুরে।

জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বায়জিদ বলেন, একই বিভাগের তার বন্ধু ও রাবি ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময় তাকে প্রক্সির কাজ দিয়েছেন। তিনি প্রক্সি দিতে সকালে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। প্রক্সি দেয়ার পূর্বে তিনি তার ব্যক্তিগত ফোন তন্ময়ের কাছে জমা রেখেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের এই ভিডিওটি গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুশফিক তাহমিদ তন্ময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ্ মখদুম হলে থাকেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্য, সিট বাণিজ্যসহ রাবি ও রুয়েট ক্যাম্পাসে ইয়াবা ও মাদক পাচারের সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে একাধিকবার ফোন করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সির সঙ্গে ‘সম্পৃক্ততা’ থাকায় তন্ময়ের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, বিষয়টি আমরা গতকাল শুনেছি। আমরা খুব দ্রুতই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে এ ঘটনায় প্রমাণসাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মেহেদী হাসান তাপস বলেন, এই বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। তবে সে যদি সত্যি এমনটা করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, জালিয়াতির ঘটনায় অভিযুক্তদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের একজন তন্ময় নামের একজনের কথা বলেছে। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনকে তদন্ত করতে অনুরোধ জানিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে তন্ময়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা, এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আইন সব সময় আইনের গতিতেই চলবে। ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে যে বা যারা জড়িত, তাদের পরিচয় যতই শক্ত হোক না কেন, অপরাধ প্রমাণ হলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং গোয়ান্দা সংস্থা সর্বদা তৎপর রয়েছেন। আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত প্রমাণসাপেক্ষ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারব।