শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ ৮৫০ প্রতিষ্ঠান বন্ধ

দেশে অবৈধ ও অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকগুলো বন্ধে দ্বিতীয় দফার চলমান অভিযানে আরো ৮৫০টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অভিযান শুরুর প্রথম ৯৬ ঘণ্টায় এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই সময়ে দুজনকে গ্রেপ্তার এবং ১৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই অভিযানে সবচেয়ে বেশি ১৯৪টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে।

গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গত সোমবার অভিযান শুরু হয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৮৫০টি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করা হয়েছে। শুক্র ও শনিবারের অভিযানে এ সংখ্যা আরো বেড়েছে। এর আগে গত মে মাসের শেষ দিকে প্রথম দফার অভিযানে সর্বমোট এক হাজার ৬৪১টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। জরিমানা করা হয় ২৫ কোটি ১৮ লাখ ৫২ হাজার ৮৬৭ টাকা।

গতবারের মতো এবারের অভিযানেও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে অব্যবস্থাপনার নানা তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। গতকাল কুমিল্লার একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কক্ষের যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সংরক্ষণের ফ্রিজে গরুর মাংস পাওয়া যায়।

এবারের এ অভিযান কত দিন চলবে—প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গতকাল বলেন, ‘অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ আমাদের নিয়মিত কাজের একটি অংশ। করোনা মহামারির কারণে এ কাজ তেমনভাবে করা যায়নি। এ কারণে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। এটা নিয়মিত কাজ হিসেবেই চলমান থাকবে। ’

গত বুধবার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) তাদের এক গবেষণার ফল থেকে জানায়, দেশে মাত্র ৬ শতাংশ বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের লাইসেন্স আছে। এ ধরনের ৩৫ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চলছে নিবন্ধন ছাড়াই, এমনকি তারা নিবন্ধনের আবেদনই করেনি। বাকি ৫৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নবায়ন করেনি অথবা নিবন্ধনের জন্য নতুন করে আবেদন করেছে

অস্ত্রোপচার কক্ষের ফ্রিজে গরুর মাংস, নেই ডাক্তার-নার্স :

গতকাল কুমিল্লা নগরীর তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান চালায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি দল। এর মধ্যে নগরীর চকবাজারের তেলিকোনা এলাকায় অবস্থিত নিবেদিতা হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষের যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সংরক্ষণের ফ্রিজে গরুর মাংস দেখতে পাওয়া যায়। অভিযানকালে কোনো চিকিৎসক বা নার্সকে এ হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালটিতে ভর্তি ছিলেন সদ্য অস্ত্রোপচার হওয়া একজন রোগী। তবে তাঁকে ২৪ ঘণ্টায়ও দেখতে আসেননি কোনো চিকিৎসক বা নার্স। হাসপাতালটির অবস্থাও ছিল নাজুক। ছিল না বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও তারা পায় না চাহিদা অনুযায়ী সেবা। এমন অব্যবস্থাপনার কারণে নিবেদিতা হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল দুপুরে ওই হাসপাতালটিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার (সমন্বয়ক) আবদুল্লাহ আল সাকী। তিনি বলেন, ‘আমরা শনিবার নগরীর তিনটি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছি। দুটি হাসপাতালে সামান্য ত্রুটি ছিল, তাদের সতর্ক করা হয়েছে। তবে নিবেদিতা হাসপাতালের অবস্থা খুবই করুণ। রোগীরা অভিযোগ করেছে, হাসপাতালটিতে একজন ম্যানেজার আছেন। ওই ম্যানেজারই ডাক্তার আবার তিনিই নার্স। অপারেশনও করেন তিনি। 

অভিযানকালে উপস্থিত থাকা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার ডা. কেয়া রানী বলেন, ‘ওই হাসপাতালের ফ্রিজে গরুর মাংস দেখেছি। ফ্রিজটি যদিও থিয়েটারের বাইরে; কিন্তু অপারেশনের সময় সেটি ভেতরে নেওয়া হতো। ওই ফ্রিজেই অপারেশনের ওষুধ ও যন্ত্রপাতি রাখা ছিল। ফ্রিজটির নিচের অংশে যন্ত্রপাতি ও ওপরের অংশে মাংস ছিল। এতে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। তাই আমরা হাসপাতালটি পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ ৮৫০ প্রতিষ্ঠান বন্ধ

প্রকাশিত সময় : ১১:৩০:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

দেশে অবৈধ ও অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকগুলো বন্ধে দ্বিতীয় দফার চলমান অভিযানে আরো ৮৫০টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অভিযান শুরুর প্রথম ৯৬ ঘণ্টায় এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই সময়ে দুজনকে গ্রেপ্তার এবং ১৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই অভিযানে সবচেয়ে বেশি ১৯৪টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে।

গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গত সোমবার অভিযান শুরু হয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৮৫০টি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করা হয়েছে। শুক্র ও শনিবারের অভিযানে এ সংখ্যা আরো বেড়েছে। এর আগে গত মে মাসের শেষ দিকে প্রথম দফার অভিযানে সর্বমোট এক হাজার ৬৪১টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। জরিমানা করা হয় ২৫ কোটি ১৮ লাখ ৫২ হাজার ৮৬৭ টাকা।

গতবারের মতো এবারের অভিযানেও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে অব্যবস্থাপনার নানা তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। গতকাল কুমিল্লার একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কক্ষের যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সংরক্ষণের ফ্রিজে গরুর মাংস পাওয়া যায়।

এবারের এ অভিযান কত দিন চলবে—প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গতকাল বলেন, ‘অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ আমাদের নিয়মিত কাজের একটি অংশ। করোনা মহামারির কারণে এ কাজ তেমনভাবে করা যায়নি। এ কারণে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। এটা নিয়মিত কাজ হিসেবেই চলমান থাকবে। ’

গত বুধবার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) তাদের এক গবেষণার ফল থেকে জানায়, দেশে মাত্র ৬ শতাংশ বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের লাইসেন্স আছে। এ ধরনের ৩৫ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চলছে নিবন্ধন ছাড়াই, এমনকি তারা নিবন্ধনের আবেদনই করেনি। বাকি ৫৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নবায়ন করেনি অথবা নিবন্ধনের জন্য নতুন করে আবেদন করেছে

অস্ত্রোপচার কক্ষের ফ্রিজে গরুর মাংস, নেই ডাক্তার-নার্স :

গতকাল কুমিল্লা নগরীর তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান চালায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি দল। এর মধ্যে নগরীর চকবাজারের তেলিকোনা এলাকায় অবস্থিত নিবেদিতা হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষের যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সংরক্ষণের ফ্রিজে গরুর মাংস দেখতে পাওয়া যায়। অভিযানকালে কোনো চিকিৎসক বা নার্সকে এ হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালটিতে ভর্তি ছিলেন সদ্য অস্ত্রোপচার হওয়া একজন রোগী। তবে তাঁকে ২৪ ঘণ্টায়ও দেখতে আসেননি কোনো চিকিৎসক বা নার্স। হাসপাতালটির অবস্থাও ছিল নাজুক। ছিল না বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও তারা পায় না চাহিদা অনুযায়ী সেবা। এমন অব্যবস্থাপনার কারণে নিবেদিতা হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল দুপুরে ওই হাসপাতালটিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার (সমন্বয়ক) আবদুল্লাহ আল সাকী। তিনি বলেন, ‘আমরা শনিবার নগরীর তিনটি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছি। দুটি হাসপাতালে সামান্য ত্রুটি ছিল, তাদের সতর্ক করা হয়েছে। তবে নিবেদিতা হাসপাতালের অবস্থা খুবই করুণ। রোগীরা অভিযোগ করেছে, হাসপাতালটিতে একজন ম্যানেজার আছেন। ওই ম্যানেজারই ডাক্তার আবার তিনিই নার্স। অপারেশনও করেন তিনি। 

অভিযানকালে উপস্থিত থাকা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার ডা. কেয়া রানী বলেন, ‘ওই হাসপাতালের ফ্রিজে গরুর মাংস দেখেছি। ফ্রিজটি যদিও থিয়েটারের বাইরে; কিন্তু অপারেশনের সময় সেটি ভেতরে নেওয়া হতো। ওই ফ্রিজেই অপারেশনের ওষুধ ও যন্ত্রপাতি রাখা ছিল। ফ্রিজটির নিচের অংশে যন্ত্রপাতি ও ওপরের অংশে মাংস ছিল। এতে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। তাই আমরা হাসপাতালটি পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ