বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফের ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত লুলা, বিশ্বনেতাদের অভিনন্দন

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে ফের জনগনের প্রতিনিধি নির্বাচিত হলেন বামপন্থী প্রার্থী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। এ নির্বাচনি লড়াইয়ে তিনি পরাজিত করেছেন ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকে। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, শেষ ধাপের ভোট গণনা শেষে লুলা দা সিলভা পেয়েছেন ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট আর ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বলসোনারো। এর আগে ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন লুলা।

সমালোচকেরা বলসোনারোর বিরদ্ধে করোনা মহামারির সময় অব্যবস্থাপনা এবং আমাজন বন উজাড় করার করার বিষয়ে কথা বলে আসছেন।

লুলা দা সিলভা ও বলসোনারো দুজন দুই মেরুর রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। লুলা দা সিলভা বামপন্থী রাজনীতিবদ আর বলসোনারোকে কট্টর ডানপন্থী বলে মনে করা হয়। বলসোনারো আগে সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন ছিলেন।

ব্রাজিলের দ্বিতীয় দফার নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা চলছিল। দুই পক্ষ থেকে পরস্পরকে দোষারোপ ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় ২ অক্টোবর। ওই ভোটে লুলা পান ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট। বলসোনারো পান ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ায়।

দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণের আগে ডেটাফোলহা ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ জরিপে লুলা এগিয়ে ছিলেন। তবে ব্যবধান অনেক কম ছিল। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫২ শতাংশ লুলাকে ও ৪৮ শতাংশ বলসোনারোকে সমর্থন দিয়েছিলেন। জরিপের চেয়েও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা গেছে ভোটের মাঠে।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইতিমধ্যে লুলার সমর্থকেরা আনন্দ মিছিল করছেন। এর আগে ৬৫ শতাংশ ভোট গণণা পর্যন্ত দুজন সমান সমান ছিলেন। ৭০ শতাংশ ভোট গণনা পর্যন্ত লুলা এগিয়ে যান। এরপর গার্ডিয়ানের তথ্য অনুযায়ী, লুলা শেষ রাউন্ডে বলসোনারোকে ছাপিয়ে যান। ৯০ শতাংশের বেশি ভোট গণনা পর্যন্ত ব্যবধান ধরে রাখেন লুলা। ইতিমধ্যে বলসোনারোর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা কমে আসতে দেখা গেছে। এরপর ধীরে আরও ব্যবধান বাড়িয়ে নেন লুলা।

ব্লুমবার্গের লাইভ রেজাল্ট গণনাতেও লুলাকে এগিয়ে থাকতে দেখা যায়। বিবিসির খবরেও বলা হয়, বলসোনারোকে হারিয়ে দিয়েছেন লুলা।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জানুয়ারিতে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ব্রাজিলের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নেবেন লুলা। তবে তাঁকে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। নতুন প্রেসিডেন্টের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ করোনা-পরবর্তী সময়ে বিপর্যস্ত অর্থনীতির গতি ফেরানো, নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘব করা। নির্বাচনে জয় পাওয়ার পরপরই লুলা দা সিলভাকে অভিনন্দন জানান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। টুইটারে এক পোস্টে তিনি বলেন, দুই নেতা দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নতুন করে ঠিক করবেন।

নির্বাচনে ফল ঘোষণার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লুলাকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, মুক্ত ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও লুলাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি নির্বাচনের পরিবেশের কথা তুলে ধরেন। এদিকে সাও পাওলোতে দেওয়া বিজয়ী ভাষণে লুলা বর্ণবাদ, কুসংস্কার এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিরলস লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ফের ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত লুলা, বিশ্বনেতাদের অভিনন্দন

প্রকাশিত সময় : ০৮:১৩:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ অক্টোবর ২০২২

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে ফের জনগনের প্রতিনিধি নির্বাচিত হলেন বামপন্থী প্রার্থী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। এ নির্বাচনি লড়াইয়ে তিনি পরাজিত করেছেন ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকে। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, শেষ ধাপের ভোট গণনা শেষে লুলা দা সিলভা পেয়েছেন ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট আর ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বলসোনারো। এর আগে ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন লুলা।

সমালোচকেরা বলসোনারোর বিরদ্ধে করোনা মহামারির সময় অব্যবস্থাপনা এবং আমাজন বন উজাড় করার করার বিষয়ে কথা বলে আসছেন।

লুলা দা সিলভা ও বলসোনারো দুজন দুই মেরুর রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। লুলা দা সিলভা বামপন্থী রাজনীতিবদ আর বলসোনারোকে কট্টর ডানপন্থী বলে মনে করা হয়। বলসোনারো আগে সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন ছিলেন।

ব্রাজিলের দ্বিতীয় দফার নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা চলছিল। দুই পক্ষ থেকে পরস্পরকে দোষারোপ ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় ২ অক্টোবর। ওই ভোটে লুলা পান ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট। বলসোনারো পান ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ায়।

দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণের আগে ডেটাফোলহা ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ জরিপে লুলা এগিয়ে ছিলেন। তবে ব্যবধান অনেক কম ছিল। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫২ শতাংশ লুলাকে ও ৪৮ শতাংশ বলসোনারোকে সমর্থন দিয়েছিলেন। জরিপের চেয়েও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা গেছে ভোটের মাঠে।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইতিমধ্যে লুলার সমর্থকেরা আনন্দ মিছিল করছেন। এর আগে ৬৫ শতাংশ ভোট গণণা পর্যন্ত দুজন সমান সমান ছিলেন। ৭০ শতাংশ ভোট গণনা পর্যন্ত লুলা এগিয়ে যান। এরপর গার্ডিয়ানের তথ্য অনুযায়ী, লুলা শেষ রাউন্ডে বলসোনারোকে ছাপিয়ে যান। ৯০ শতাংশের বেশি ভোট গণনা পর্যন্ত ব্যবধান ধরে রাখেন লুলা। ইতিমধ্যে বলসোনারোর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা কমে আসতে দেখা গেছে। এরপর ধীরে আরও ব্যবধান বাড়িয়ে নেন লুলা।

ব্লুমবার্গের লাইভ রেজাল্ট গণনাতেও লুলাকে এগিয়ে থাকতে দেখা যায়। বিবিসির খবরেও বলা হয়, বলসোনারোকে হারিয়ে দিয়েছেন লুলা।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জানুয়ারিতে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ব্রাজিলের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নেবেন লুলা। তবে তাঁকে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। নতুন প্রেসিডেন্টের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ করোনা-পরবর্তী সময়ে বিপর্যস্ত অর্থনীতির গতি ফেরানো, নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘব করা। নির্বাচনে জয় পাওয়ার পরপরই লুলা দা সিলভাকে অভিনন্দন জানান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। টুইটারে এক পোস্টে তিনি বলেন, দুই নেতা দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নতুন করে ঠিক করবেন।

নির্বাচনে ফল ঘোষণার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লুলাকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, মুক্ত ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও লুলাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি নির্বাচনের পরিবেশের কথা তুলে ধরেন। এদিকে সাও পাওলোতে দেওয়া বিজয়ী ভাষণে লুলা বর্ণবাদ, কুসংস্কার এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিরলস লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।