শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিদ্যুৎ ও পানির জন্য ইউক্রেনে হাহাকার

সোমবার ইউক্রেনে একযোগে চালানো রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেশটির ৮০ শতাংশ অধিবাসী বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। বন্ধ হয়ে গেছে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। রাজধানী কিয়েভে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। হাজারো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করছেন।

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো জানিয়েছেন, রাজধানী শহরের ৪০ শতাংশ লোক এখন পানির সংকটে আছে এবং প্রায় পৌনে তিন লাখ পরিবারে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন হয়নি। ফলে পানি রেশনিং করতে হচ্ছে। লাইনে দাঁড়িয়ে পানি নিতে হচ্ছে।

এদিকে ক্রিমিয়ায় মস্কোর নৌবহরে ড্রোন হামলার জবাবে ইউক্রেনের অবকাঠামোর ওপর রুশ হামলা এবং কৃষ্ণসাগরের শস্য রপ্তানি কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

এছাড়া, মস্কোর জাহাজে হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছেন রুশ নেতা। পুতিন আরও জানান, তার দেশ খাদ্যশস্য রফতানি সংক্রান্ত চুক্তি থেকে সরে যায়নি, বরং সাময়িকভাবে এটি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসাবে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

সবশেষ মিসাইল হামলা সম্পর্কে রাশিয়া জানিয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনা এবং জ্বালানি ব্যবস্থা ছিলো তাদের হামলার লক্ষ্য, এবং সব লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। পুতিন জানিয়েছেন, বন্দর নগরী সেভাস্টোপোলে ড্রোন হামলার জবাবেই এই হামলা চালানো হয়েছে।

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাসমূহ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিরাপত্তাজনিত কারণে তা বাকি বিশ্বের সামনে প্রকাশ করেনি বলে জানাচ্ছে দেশটি। ভবিষ্যতে আরো হামলার লক্ষ্যবস্তু হওয়ার আশংকা এড়াতেই এটি করা হয়েছে।

সোমবারের হামলার চিহ্ন ছড়িয়ে আছে ইউক্রেনের সবখানে। কয়েকটি অঞ্চলে এখনো বিদ্যুতের সংযোগ ফেরেনি। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বিদ্যুৎ ব্যবহারে ইউক্রেনীয় নাগরিকদের ‘অত্যন্ত মিতব্যয়ী’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

কিয়েভে সড়কের বাতিগুলো নিভিয়ে রাখা হয়েছে, এবং ট্রলি বাসের পরিবর্তে প্রচলিত বাস সার্ভিস চালানো হচ্ছে। বাড়িতে পানি না পেয়ে সড়কে থাকা পাম্পগুলো থেকে পানি সংগ্রহের জন্য হাজারো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ স্থাপনের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাজধানী কিয়েভ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য এলাকার মধ্যে রয়েছে লাভিভ, খারকিভ, জাপোরিশা এবং দনিপ্রপেট্রোভস্ক।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শীতের আগে কৌশলগত হামলার অংশ হিসাবে সবশেষ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী পাল্টা হামলা চালিয়ে দেশটির অনেক অঞ্চল রুশদের কাছ থেকে পুনর্দখল করেছে, সেই সামরিক পরাজয়ের জবাব এর মাধ্যমে দিচ্ছে রাশিয়া।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বিদ্যুৎ ও পানির জন্য ইউক্রেনে হাহাকার

প্রকাশিত সময় : ০৫:২৮:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর ২০২২

সোমবার ইউক্রেনে একযোগে চালানো রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেশটির ৮০ শতাংশ অধিবাসী বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। বন্ধ হয়ে গেছে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। রাজধানী কিয়েভে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। হাজারো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করছেন।

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো জানিয়েছেন, রাজধানী শহরের ৪০ শতাংশ লোক এখন পানির সংকটে আছে এবং প্রায় পৌনে তিন লাখ পরিবারে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন হয়নি। ফলে পানি রেশনিং করতে হচ্ছে। লাইনে দাঁড়িয়ে পানি নিতে হচ্ছে।

এদিকে ক্রিমিয়ায় মস্কোর নৌবহরে ড্রোন হামলার জবাবে ইউক্রেনের অবকাঠামোর ওপর রুশ হামলা এবং কৃষ্ণসাগরের শস্য রপ্তানি কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

এছাড়া, মস্কোর জাহাজে হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছেন রুশ নেতা। পুতিন আরও জানান, তার দেশ খাদ্যশস্য রফতানি সংক্রান্ত চুক্তি থেকে সরে যায়নি, বরং সাময়িকভাবে এটি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসাবে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

সবশেষ মিসাইল হামলা সম্পর্কে রাশিয়া জানিয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনা এবং জ্বালানি ব্যবস্থা ছিলো তাদের হামলার লক্ষ্য, এবং সব লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। পুতিন জানিয়েছেন, বন্দর নগরী সেভাস্টোপোলে ড্রোন হামলার জবাবেই এই হামলা চালানো হয়েছে।

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাসমূহ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিরাপত্তাজনিত কারণে তা বাকি বিশ্বের সামনে প্রকাশ করেনি বলে জানাচ্ছে দেশটি। ভবিষ্যতে আরো হামলার লক্ষ্যবস্তু হওয়ার আশংকা এড়াতেই এটি করা হয়েছে।

সোমবারের হামলার চিহ্ন ছড়িয়ে আছে ইউক্রেনের সবখানে। কয়েকটি অঞ্চলে এখনো বিদ্যুতের সংযোগ ফেরেনি। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বিদ্যুৎ ব্যবহারে ইউক্রেনীয় নাগরিকদের ‘অত্যন্ত মিতব্যয়ী’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

কিয়েভে সড়কের বাতিগুলো নিভিয়ে রাখা হয়েছে, এবং ট্রলি বাসের পরিবর্তে প্রচলিত বাস সার্ভিস চালানো হচ্ছে। বাড়িতে পানি না পেয়ে সড়কে থাকা পাম্পগুলো থেকে পানি সংগ্রহের জন্য হাজারো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ স্থাপনের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাজধানী কিয়েভ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য এলাকার মধ্যে রয়েছে লাভিভ, খারকিভ, জাপোরিশা এবং দনিপ্রপেট্রোভস্ক।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শীতের আগে কৌশলগত হামলার অংশ হিসাবে সবশেষ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী পাল্টা হামলা চালিয়ে দেশটির অনেক অঞ্চল রুশদের কাছ থেকে পুনর্দখল করেছে, সেই সামরিক পরাজয়ের জবাব এর মাধ্যমে দিচ্ছে রাশিয়া।