মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তাপমাত্রা প্রত্যক্ষ করছে ইউরোপের দেশগুলো

এবার জানুয়ারির শুরু থেকেই ‘রেকর্ড-ব্রেকিং’ তাপমাত্রা প্রত্যক্ষ করছে ইউরোপের দেশগুলো। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরই মধ্যে জানুয়ারি মাসের উষ্ণতম দিন রেকর্ড করেছে ইউরোপের অন্তত ৮টি দেশ। ইউরোপের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি বলে জানিয়েছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তারা পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে ইউরোপের ৮টি দেশ জানুয়ারির শুরু থেকেই রেকর্ড তাপমাত্রার সম্মুখীন হচ্ছে। তাপমাত্রা নিয়ে গবেষণা করেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ম্যাক্সিমিলিয়ানো হেরেরা। তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে তাপমাত্রার তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পোল্যান্ড, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, বেলারুশ, চেক প্রজাতন্ত্র ও ফ্রান্স রেকর্ড তাপমাত্রার সম্মুখীন হয়েছে। পোল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা কোরবিলোতে সম্প্রতি ১৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই তাপমাত্রা সাধারণত মে মাসে অনুভূত হয়। চেক প্রজাতন্ত্রের জেভরনিকে সাধারণত এই সময়ে তাপমাত্রা থাকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানেও তাপমাত্রা ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারির মধ্যে জার্মানির অন্তত ৯৫০টি তাপমাত্রা পরিমাপ কেন্দ্রের রেকর্ড ভেঙে গেছে। ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর স্পেনের বিলবাও অঞ্চলে এরই মধ্যে তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। বেলারুশে ১৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা আগের রেকর্ডের চেয়ে ৪.৫ ডিগ্রি বেশি। রেকর্ড সব সময়ই ভাঙে, কিন্তু তা কখনো এক ডিগ্রীর চেয়ে বেশি হয় না। সুইজারল্যান্ডে এবার তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে এবং উষ্ণ আবহাওয়ার ফলে আল্পস জুড়ে স্কি রিসোর্টগুলোতেও তুষার ঘাটতি দেখা গেছে। তবে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার কিছু অংশে তীব্র ঠাণ্ডা এবং তুষারপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে এবং মস্কোতে সপ্তাহান্তে তাপমাত্রা -২০ ডিগ্রিতে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাত্র কয়েকদিন আগে, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স এবং স্পেন ২০২২ সালকে তাদের ইতিহাসের উষ্ণতম বছর ঘোষণা করেছিল। যুক্তরাজ্যে গত ডিসেম্বর মাস স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ ছিল। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ হেরেরা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘আমরা এটিকে ইউরোপীয় ইতিহাসের সবচেয়ে চরম ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করতে পারি।’ এই রেকর্ড তাপমাত্রার কারণ কী, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। ব্রিটিশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ অ্যালেক্স বার্কিল গার্ডিয়ানকে বলেছেন, একটি বিশাল অঞ্চলজুড়ে তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ রকম আগে কখনো ঘটেনি। এ নিয়ে তিনি একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। বার্কিল জানান, আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে উষ্ণ বাতাস তৈরি হয়েছিল, যা ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি এমন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে ডেনমার্ক, চেক প্রজাতন্ত্রের পাশাপাশি প্রায় পুরো জার্মানিতেও জানুয়ারিতে তাপমাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তবে আবহাওয়াবিদ স্কট ডানকান উল্লেখ করেছেন, শুধু উষ্ণ বাতাসই বিস্ময়করভাবে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ না-ও হতে পারে। তবে জলবায়ু বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করে বলেছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ আরও প্রকটভাবে এবং আরও চরম হয়ে উঠতে চলেছে। শিল্প বিপ্লবের আগের সময়ের চেয়ে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ইতিমধ্যেই প্রায় ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। অবিলম্বে কার্বন নিঃসরণ না কমালে এই গড় তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকবে এবং ভয়ানক সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

তাপমাত্রা প্রত্যক্ষ করছে ইউরোপের দেশগুলো

প্রকাশিত সময় : ০৬:১৩:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৩

এবার জানুয়ারির শুরু থেকেই ‘রেকর্ড-ব্রেকিং’ তাপমাত্রা প্রত্যক্ষ করছে ইউরোপের দেশগুলো। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরই মধ্যে জানুয়ারি মাসের উষ্ণতম দিন রেকর্ড করেছে ইউরোপের অন্তত ৮টি দেশ। ইউরোপের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি বলে জানিয়েছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তারা পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে ইউরোপের ৮টি দেশ জানুয়ারির শুরু থেকেই রেকর্ড তাপমাত্রার সম্মুখীন হচ্ছে। তাপমাত্রা নিয়ে গবেষণা করেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ম্যাক্সিমিলিয়ানো হেরেরা। তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে তাপমাত্রার তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পোল্যান্ড, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, বেলারুশ, চেক প্রজাতন্ত্র ও ফ্রান্স রেকর্ড তাপমাত্রার সম্মুখীন হয়েছে। পোল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা কোরবিলোতে সম্প্রতি ১৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই তাপমাত্রা সাধারণত মে মাসে অনুভূত হয়। চেক প্রজাতন্ত্রের জেভরনিকে সাধারণত এই সময়ে তাপমাত্রা থাকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানেও তাপমাত্রা ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারির মধ্যে জার্মানির অন্তত ৯৫০টি তাপমাত্রা পরিমাপ কেন্দ্রের রেকর্ড ভেঙে গেছে। ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর স্পেনের বিলবাও অঞ্চলে এরই মধ্যে তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। বেলারুশে ১৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা আগের রেকর্ডের চেয়ে ৪.৫ ডিগ্রি বেশি। রেকর্ড সব সময়ই ভাঙে, কিন্তু তা কখনো এক ডিগ্রীর চেয়ে বেশি হয় না। সুইজারল্যান্ডে এবার তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে এবং উষ্ণ আবহাওয়ার ফলে আল্পস জুড়ে স্কি রিসোর্টগুলোতেও তুষার ঘাটতি দেখা গেছে। তবে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার কিছু অংশে তীব্র ঠাণ্ডা এবং তুষারপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে এবং মস্কোতে সপ্তাহান্তে তাপমাত্রা -২০ ডিগ্রিতে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাত্র কয়েকদিন আগে, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স এবং স্পেন ২০২২ সালকে তাদের ইতিহাসের উষ্ণতম বছর ঘোষণা করেছিল। যুক্তরাজ্যে গত ডিসেম্বর মাস স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ ছিল। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ হেরেরা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘আমরা এটিকে ইউরোপীয় ইতিহাসের সবচেয়ে চরম ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করতে পারি।’ এই রেকর্ড তাপমাত্রার কারণ কী, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। ব্রিটিশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ অ্যালেক্স বার্কিল গার্ডিয়ানকে বলেছেন, একটি বিশাল অঞ্চলজুড়ে তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ রকম আগে কখনো ঘটেনি। এ নিয়ে তিনি একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। বার্কিল জানান, আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে উষ্ণ বাতাস তৈরি হয়েছিল, যা ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি এমন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে ডেনমার্ক, চেক প্রজাতন্ত্রের পাশাপাশি প্রায় পুরো জার্মানিতেও জানুয়ারিতে তাপমাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তবে আবহাওয়াবিদ স্কট ডানকান উল্লেখ করেছেন, শুধু উষ্ণ বাতাসই বিস্ময়করভাবে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ না-ও হতে পারে। তবে জলবায়ু বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করে বলেছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ আরও প্রকটভাবে এবং আরও চরম হয়ে উঠতে চলেছে। শিল্প বিপ্লবের আগের সময়ের চেয়ে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ইতিমধ্যেই প্রায় ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। অবিলম্বে কার্বন নিঃসরণ না কমালে এই গড় তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকবে এবং ভয়ানক সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসবে।