বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাকরি হারালেন ‘মানবিক পুলিশ’ শওকত

চাকরিচ্যুত করা হয়েছে মানবিক পুলিশ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া পুলিশ কনস্টেবল শওকত হোসেনকে। গত ১৬ এপ্রিল সিএমপির বন্দর বিভাগের উপ-কমিশনার শাকিলা সুলতানা তার চাকরিচ্যুতির আদেশে স্বাক্ষর করেন।

সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের দপ্তরে এ আদেশ পাঠানো হয়েছে।

ওই আদেশে বলা হয়, ‘৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত (শওকত হোসেন) শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় এবং বেওয়ারিশ মানুষ নিয়া মানবিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয় এমন বক্তব্য লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।’

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা শওকত হোসেন ২০০৫ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ঢাকা থেকে বদলি হয়ে রাঙামাটিতে যান। সেখান থেকে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে। চাকরির পাশাপাশি তিনি তিন বছরের ডিপ্লোমা এবং দুই বছরের প্যারা মেডিকেল কোর্স সম্পন্ন করেন।

২০১১ সাল থেকে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর অসহায়, দুস্থ ও বেওয়ারিশ মানুষদের নিভৃতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেন। হাসপাতালের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পর তিনি মহানগরীতে ঘুরে ঘুরে স্বজনহারা, নাম-পরিচয়হীন অসুস্থ মানুষদের সেবা দিতেন, ওষুধপথ্য জোগাড় করে দিতেন। ধীরে ধীরে তার সঙ্গে একাধিক কনস্টেবল স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে এ কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন।

দীর্ঘদিন নিভৃতে কাজ করে যাওয়া শওকত হোসেন ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর পুলিশের কল্যাণ সভায় রাস্তায় পড়ে থাকা অসহায় মানুষদের সেবা দেওয়ার বিষয়টি তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের সামনে উপস্থাপন করেন। তখন শওকত হোসেনের মানবিকতার বক্তব্য শুনে কমিশনার ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ‘মানবিক পুলিশ ইউনিট’গঠন করেন। বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সিএমপিই সর্বপ্রথম এমন উদ্যোগ চালু করে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে।-পূর্বপশ্চিমবিডি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

চাকরি হারালেন ‘মানবিক পুলিশ’ শওকত

প্রকাশিত সময় : ১২:২৫:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৩

চাকরিচ্যুত করা হয়েছে মানবিক পুলিশ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া পুলিশ কনস্টেবল শওকত হোসেনকে। গত ১৬ এপ্রিল সিএমপির বন্দর বিভাগের উপ-কমিশনার শাকিলা সুলতানা তার চাকরিচ্যুতির আদেশে স্বাক্ষর করেন।

সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের দপ্তরে এ আদেশ পাঠানো হয়েছে।

ওই আদেশে বলা হয়, ‘৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত (শওকত হোসেন) শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় এবং বেওয়ারিশ মানুষ নিয়া মানবিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয় এমন বক্তব্য লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।’

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা শওকত হোসেন ২০০৫ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ঢাকা থেকে বদলি হয়ে রাঙামাটিতে যান। সেখান থেকে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে। চাকরির পাশাপাশি তিনি তিন বছরের ডিপ্লোমা এবং দুই বছরের প্যারা মেডিকেল কোর্স সম্পন্ন করেন।

২০১১ সাল থেকে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর অসহায়, দুস্থ ও বেওয়ারিশ মানুষদের নিভৃতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেন। হাসপাতালের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পর তিনি মহানগরীতে ঘুরে ঘুরে স্বজনহারা, নাম-পরিচয়হীন অসুস্থ মানুষদের সেবা দিতেন, ওষুধপথ্য জোগাড় করে দিতেন। ধীরে ধীরে তার সঙ্গে একাধিক কনস্টেবল স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে এ কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন।

দীর্ঘদিন নিভৃতে কাজ করে যাওয়া শওকত হোসেন ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর পুলিশের কল্যাণ সভায় রাস্তায় পড়ে থাকা অসহায় মানুষদের সেবা দেওয়ার বিষয়টি তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের সামনে উপস্থাপন করেন। তখন শওকত হোসেনের মানবিকতার বক্তব্য শুনে কমিশনার ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ‘মানবিক পুলিশ ইউনিট’গঠন করেন। বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সিএমপিই সর্বপ্রথম এমন উদ্যোগ চালু করে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে।-পূর্বপশ্চিমবিডি