শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সায়েদাবাদ-কমলাপুরে ভিড়, চাপ নেই সদরঘাটে

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়ছেন নগরবাসী। বৃষ্টি, যানজট ও বাড়তি ভাড়ার ভোগান্তি কোনো কিছুই আটকাতে পারছে না ঘরমুখো মানুষকে। মঙ্গলবার (২৭ জুন) ভোর থেকেই রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, গাবতলী ও সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে মানুষের ঢল দেখা গেছে। তবে সড়ক ও রেলপথে ঘরমুখো মানুষের ভিড় থাকলেও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে আগের মতো যাত্রীদের চাপ দেখা যায় নি। রাজধানীর একটি সুপারশপে কর্মরত আশিকুর রহমান ঈদ করতে যাচ্ছেন সিরাজগঞ্জে। ৩৫০ টাকার টিকিট ৭০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে ডাবল ভাড়া নিচ্ছে এই পরিবহনটি। তারপরও বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে পারব, এটাই বড় কথা। গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে স্বামী-দুই সন্তানসহ বগুড়া যাবেন সাদিয়া খোন্দকার। তিনি বলেন, সকাল ৬টায় বাসা থেকে বের হয়েছি, ৮টায় গাড়ি। শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত আসতে ৪০ মিনিট লেগেছে। সবাই মিলেমিশে ঈদ করতে পারব, এই খুশিতে বৃষ্টি, যানজটেও ভোগান্তি মনে হচ্ছে না। নোয়াখালীগামী আমানুর বলেন, আজকে অনেকে বাড়ি ফিরছেন। সেজন্য টার্মিনালে অনেক ভিড়। বাস ভাড়া অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি। বরিশালের বাকেরগঞ্জে যাবেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মচারী মো. জালাল উদ্দিন হাওলাদার। বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করে তিনি বলেন, ভোর ৪টায় আমি বাসস্ট্যান্ডে এসেছি। ইলিশ পরিবহনে বরিশাল পর্যন্ত যাবো। অন্য সময় ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হলেও এখন ৬০০ টাকা নিয়েছে। পটুয়াখালীর শিয়ালদি যাবেন আবুল কালাম। তিনি বলেন, ধানমন্ডিতে চাকরি করি। একা মানুষ যাচ্ছি, আগে টিকিট কাটিনি। তেঁতুলিয়া পরিবহনের টিকিট কাটলাম। ডাবল ভাড়া নিলো। অন্য সময় ভাড়া ৫০০ টাকা হলেও আজ এক হাজার টাকা নিয়েছে। সায়েদাবাদে বিভিন্ন বাস কোম্পানির টিকিট বিক্রি করা শফিকুল ইসলাম বলেন, সব গাড়ির টিকিটের দাম বাড়ানো হয়েছে। কোনো কোনো টিকিটের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। বাস কোম্পানিগুলো বাড়ালে আমরা কী করবো। এদিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। সড়কে যানজটের ভয়ে অনেকে ট্রেনে বাড়ি ফিরছেন। তবে মঙ্গলবার সকালে কয়েকটি ট্রেন বিলম্বে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, দিনের শুরুর প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেস প্রায় দুই ঘণ্টা বিলম্বে রাজশাহীর উদ্দেশে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে গেছে। নীলসাগর এক্সপ্রেসের ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ২ ঘণ্টা ৯ মিনিট বিলম্বে ছেড়ে যায় সকাল ৮টা ১৭ মিনিটে। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৮টা ১৫ মিনিট ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ছাড়ে ৯টা ১০ মিনিটে। ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রী সোহরাব হেসেন বলেন, পরিবার নিয়ে ভোরে বাসা থেকে এসেছি। এসে দেখি প্লাটফর্মে কোনো ট্রেনই নেই। এভাবে দীর্ঘসময় পার করার পর ট্রেন এসেছে। তারপর অপরিষ্কার ট্রেনেই আমাদের উঠতে হয়েছে। পরিবার নিয়ে এমন অপেক্ষা খুবই ভোগান্তির। অন্যদিকে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। যাত্রীদের চাপ না থাকায় লঞ্চের কর্মচারীদেরও নেই ব্যস্ততা। বরিশাল যাবেন মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, সকাল ৮টায় ঘাটে আসলাম। সকালে বরিশালের কোনো লঞ্চ ছাড়বে না শুনলাম। বরিশালের কোনো যাত্রী নেই। বিকেলের দিকে নাকি ছাড়বে লঞ্চ। বিআইডব্লিউটিএর নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দর কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে ২০টি লঞ্চ। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চল থেকে সদরঘাট টার্মিনালে এসেছে ৩৯টি লঞ্চ। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যাবেন প্রায় ৮০ লাখ মানুষ। সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরি বলেন, ২২ জুন থেকে ঈদযাত্রা শুরু হলেও ২৬-২৭ জুন থেকে প্রতিদিন রাজধানী ছাড়বেন গড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ হারে মানুষ। প্রসঙ্গত, ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামী বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার (২৮, ২৯ ও ৩০ জুন) ছুটি নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকার একদিন ছুটি বাড়িয়ে মঙ্গলবারও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর ১ জুলাই শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তাই এবার ২৭ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত টানা পাঁচ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

সায়েদাবাদ-কমলাপুরে ভিড়, চাপ নেই সদরঘাটে

প্রকাশিত সময় : ১২:২৪:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়ছেন নগরবাসী। বৃষ্টি, যানজট ও বাড়তি ভাড়ার ভোগান্তি কোনো কিছুই আটকাতে পারছে না ঘরমুখো মানুষকে। মঙ্গলবার (২৭ জুন) ভোর থেকেই রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, গাবতলী ও সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে মানুষের ঢল দেখা গেছে। তবে সড়ক ও রেলপথে ঘরমুখো মানুষের ভিড় থাকলেও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে আগের মতো যাত্রীদের চাপ দেখা যায় নি। রাজধানীর একটি সুপারশপে কর্মরত আশিকুর রহমান ঈদ করতে যাচ্ছেন সিরাজগঞ্জে। ৩৫০ টাকার টিকিট ৭০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে ডাবল ভাড়া নিচ্ছে এই পরিবহনটি। তারপরও বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে পারব, এটাই বড় কথা। গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে স্বামী-দুই সন্তানসহ বগুড়া যাবেন সাদিয়া খোন্দকার। তিনি বলেন, সকাল ৬টায় বাসা থেকে বের হয়েছি, ৮টায় গাড়ি। শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত আসতে ৪০ মিনিট লেগেছে। সবাই মিলেমিশে ঈদ করতে পারব, এই খুশিতে বৃষ্টি, যানজটেও ভোগান্তি মনে হচ্ছে না। নোয়াখালীগামী আমানুর বলেন, আজকে অনেকে বাড়ি ফিরছেন। সেজন্য টার্মিনালে অনেক ভিড়। বাস ভাড়া অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি। বরিশালের বাকেরগঞ্জে যাবেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মচারী মো. জালাল উদ্দিন হাওলাদার। বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করে তিনি বলেন, ভোর ৪টায় আমি বাসস্ট্যান্ডে এসেছি। ইলিশ পরিবহনে বরিশাল পর্যন্ত যাবো। অন্য সময় ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হলেও এখন ৬০০ টাকা নিয়েছে। পটুয়াখালীর শিয়ালদি যাবেন আবুল কালাম। তিনি বলেন, ধানমন্ডিতে চাকরি করি। একা মানুষ যাচ্ছি, আগে টিকিট কাটিনি। তেঁতুলিয়া পরিবহনের টিকিট কাটলাম। ডাবল ভাড়া নিলো। অন্য সময় ভাড়া ৫০০ টাকা হলেও আজ এক হাজার টাকা নিয়েছে। সায়েদাবাদে বিভিন্ন বাস কোম্পানির টিকিট বিক্রি করা শফিকুল ইসলাম বলেন, সব গাড়ির টিকিটের দাম বাড়ানো হয়েছে। কোনো কোনো টিকিটের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। বাস কোম্পানিগুলো বাড়ালে আমরা কী করবো। এদিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। সড়কে যানজটের ভয়ে অনেকে ট্রেনে বাড়ি ফিরছেন। তবে মঙ্গলবার সকালে কয়েকটি ট্রেন বিলম্বে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, দিনের শুরুর প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেস প্রায় দুই ঘণ্টা বিলম্বে রাজশাহীর উদ্দেশে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে গেছে। নীলসাগর এক্সপ্রেসের ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ২ ঘণ্টা ৯ মিনিট বিলম্বে ছেড়ে যায় সকাল ৮টা ১৭ মিনিটে। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৮টা ১৫ মিনিট ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ছাড়ে ৯টা ১০ মিনিটে। ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রী সোহরাব হেসেন বলেন, পরিবার নিয়ে ভোরে বাসা থেকে এসেছি। এসে দেখি প্লাটফর্মে কোনো ট্রেনই নেই। এভাবে দীর্ঘসময় পার করার পর ট্রেন এসেছে। তারপর অপরিষ্কার ট্রেনেই আমাদের উঠতে হয়েছে। পরিবার নিয়ে এমন অপেক্ষা খুবই ভোগান্তির। অন্যদিকে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। যাত্রীদের চাপ না থাকায় লঞ্চের কর্মচারীদেরও নেই ব্যস্ততা। বরিশাল যাবেন মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, সকাল ৮টায় ঘাটে আসলাম। সকালে বরিশালের কোনো লঞ্চ ছাড়বে না শুনলাম। বরিশালের কোনো যাত্রী নেই। বিকেলের দিকে নাকি ছাড়বে লঞ্চ। বিআইডব্লিউটিএর নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দর কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে ২০টি লঞ্চ। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চল থেকে সদরঘাট টার্মিনালে এসেছে ৩৯টি লঞ্চ। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যাবেন প্রায় ৮০ লাখ মানুষ। সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরি বলেন, ২২ জুন থেকে ঈদযাত্রা শুরু হলেও ২৬-২৭ জুন থেকে প্রতিদিন রাজধানী ছাড়বেন গড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ হারে মানুষ। প্রসঙ্গত, ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামী বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার (২৮, ২৯ ও ৩০ জুন) ছুটি নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকার একদিন ছুটি বাড়িয়ে মঙ্গলবারও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর ১ জুলাই শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তাই এবার ২৭ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত টানা পাঁচ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।