শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঈদ-বোনাসের অর্ধেক টাকা গাড়ি ভাড়াতেই চলে গেল!

ঈদ-বোনাসের অর্ধেক টাকা গাড়ি ভাড়াতেই চলে গেল!

ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করতে ঈদযাত্রার শেষ দিনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থল থেকে জন্মস্থানে ফিরছে ঘরমুখী মানুষ। কিন্তু তাদের এই আনন্দে ‘হরিষে বিষাদ’ বাড়তি ভাড়ার ফাঁদ।

ঢাকায় অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ অর্থ সংকটের কারণে এ সময় ভালো মানের যাত্রীবাহী বাস বা ট্রেনে বাড়ি ফিরতে পারেন না। কারণ প্রতি ঈদেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। তাছাড়া নিম্ন আয়ের সাধারণ অনেকে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে অভ্যস্ত নন। তারা অল্প টাকা খরচ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদ, ছোট-বড় ট্রাক, বিশেষ করে যেগুলো রাজধানীতে গরু রেখে ফিরে যায়, এমনকি ট্রেনের ছাদে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন। এতো চেষ্টার পরেও তাদেরও গুনতে হয় বাড়তি ভাড়া।

বুধবার (২৮ জুন) সকালে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের মুলিবাড়ী, কড্ডার মোড়, নলকা ও হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় কর্মস্থল থেকে ঘরে ফেরা মানুষের অধিকাংশ যাত্রীই কয়েকগুণ ভাড়া দিতে হয়েছে বলে জানান। একই সঙ্গে এসকল এলাকা থেকে অটোরিকশায় ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে প্রায় তিনগুণ।

গাজীপুরের চন্দ্রার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকা থেকে সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়ে একটি লোকাল বাসে এসেছেন গার্মেন্টকর্মী আলামিন, রফিক ও শেফালী। তাদের কাছ থেকে ৮০০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

আলামিন বলেন, চন্দ্রা থেকে কড্ডার মোড়ে মূল ভাড়া ৩৫০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে ৪৫০/৫০০ টাকা নিলে তাও ভালো হতো। কিন্তু বাধ্য হয়ে ৮০০ টাকা ভাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে। কড্ডার মোড়ে এসে সিএনজি ভাড়াও ২০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। আমার বোনাসের অর্ধেক টাকা গাড়ি ভাড়াতেই চলে গেল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

ঢাকা থেকে পিকআপে আসছিলেন বগুড়ার ধুনট এলাকার নাজমুল বলেন, বাস না পেয়ে পিকআপেও ৮০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়েছে তাকে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পিপুলবাড়ীয়া এলাকার শিহাব ও রুবেল ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে পিকআপযোগে এসেছেন বলে জানান। আবার কড্ডা থেকে অটোরিকশায় পিপুলবাড়ীয়া পর্যন্ত ১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যার পূর্বের ভাড়া ছিল ৬০ টাকা।

ঈদের শেষ দিনে বাড়ি গার্মেন্টকর্মী মনিরুল, আলম, সোহাগ, কাকলী, রুবিনাসহ বেশ কয়েকজন বলেন, তিন থেকে চারগুণ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে তাদের বাড়িতে যেতে হচ্ছে। বাড়ি ফেরার সঙ্গে যানবাহনের লোকজন মানুষদের জিম্মি করে টাকা নিচ্ছেন। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও বাড়িতে আসতে পেড়ে ভালোই লাগছে।

এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন বাস ও ট্রাকচালকের প্রশ্ন করা হলে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ট্রাকচালক বক্কার হোসেন, কেফাত আলী, ছামিদুল, সোহান খান ও চঞ্চল বলেন, ফিরতি পথে খালি গাড়ি যেতে হয়। তাই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। একই কথা বলেন পিকআপ ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকেরাও।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল কবীর এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, রাত থেকে মহাসড়কে গাড়ির চাপ অনেকটা বেড়েছে। ঈদের শেষ দিন হওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে গাড়ি কয়েকগুণ বেশি চলাচল করছে। তবে কোথাও কোনো ধীরগতি বা যানজটের মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। যানজট নিরসনে আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।

সিরাজগঞ্জের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) সালেকুজ্জামান খান সালেক বলেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে যানবাহন বেড়েই চলছে। তবে মহাসড়কে চাপ থাকলেও কোনো যানজট বা ধীরগতি নেই। আশা করছি উত্তরবঙ্গের ঘরে ফেরা মানুষের গত ঈদের মতো এবারের ঈদযাত্রাও নির্বিঘ্ন হবে। তিনি আরও জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড়ে সেতুর ওপর ও মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণে যানজট শুরু হয়। এ কারণে সেতুর পূর্ব পাড়ে যানবাহনের ধীরগতি ছিল। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, এবারের ঈদযাত্রা যানজটমুক্ত ও মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে জেলা পুলিশ, জেলা ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় ১ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যা মোতায়েন থাকবে টানা ঈদুল আজহার তৃতীয় দিন পর্যন্ত। তিনি আরো বলেন, রাত থেকে মহাসড়কে গাড়ির চাপ অনেকটা বেড়েছে। যানবাহন ও ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি কমাতে ও সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

মূল ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন, ঈদের শেষ দিন হওয়াতে মূল ভাড়ার চেয়ে একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন ঢাকা জেলার বাস-মালিক সমিতির নেতাকর্মীরা। তাদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানা যাবে বলে তিনি জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ঈদ-বোনাসের অর্ধেক টাকা গাড়ি ভাড়াতেই চলে গেল!

প্রকাশিত সময় : ০৩:৩৯:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ জুন ২০২৩

ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করতে ঈদযাত্রার শেষ দিনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থল থেকে জন্মস্থানে ফিরছে ঘরমুখী মানুষ। কিন্তু তাদের এই আনন্দে ‘হরিষে বিষাদ’ বাড়তি ভাড়ার ফাঁদ।

ঢাকায় অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ অর্থ সংকটের কারণে এ সময় ভালো মানের যাত্রীবাহী বাস বা ট্রেনে বাড়ি ফিরতে পারেন না। কারণ প্রতি ঈদেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। তাছাড়া নিম্ন আয়ের সাধারণ অনেকে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে অভ্যস্ত নন। তারা অল্প টাকা খরচ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদ, ছোট-বড় ট্রাক, বিশেষ করে যেগুলো রাজধানীতে গরু রেখে ফিরে যায়, এমনকি ট্রেনের ছাদে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন। এতো চেষ্টার পরেও তাদেরও গুনতে হয় বাড়তি ভাড়া।

বুধবার (২৮ জুন) সকালে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের মুলিবাড়ী, কড্ডার মোড়, নলকা ও হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় কর্মস্থল থেকে ঘরে ফেরা মানুষের অধিকাংশ যাত্রীই কয়েকগুণ ভাড়া দিতে হয়েছে বলে জানান। একই সঙ্গে এসকল এলাকা থেকে অটোরিকশায় ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে প্রায় তিনগুণ।

গাজীপুরের চন্দ্রার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকা থেকে সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়ে একটি লোকাল বাসে এসেছেন গার্মেন্টকর্মী আলামিন, রফিক ও শেফালী। তাদের কাছ থেকে ৮০০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

আলামিন বলেন, চন্দ্রা থেকে কড্ডার মোড়ে মূল ভাড়া ৩৫০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে ৪৫০/৫০০ টাকা নিলে তাও ভালো হতো। কিন্তু বাধ্য হয়ে ৮০০ টাকা ভাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে। কড্ডার মোড়ে এসে সিএনজি ভাড়াও ২০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। আমার বোনাসের অর্ধেক টাকা গাড়ি ভাড়াতেই চলে গেল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

ঢাকা থেকে পিকআপে আসছিলেন বগুড়ার ধুনট এলাকার নাজমুল বলেন, বাস না পেয়ে পিকআপেও ৮০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়েছে তাকে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পিপুলবাড়ীয়া এলাকার শিহাব ও রুবেল ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে পিকআপযোগে এসেছেন বলে জানান। আবার কড্ডা থেকে অটোরিকশায় পিপুলবাড়ীয়া পর্যন্ত ১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যার পূর্বের ভাড়া ছিল ৬০ টাকা।

ঈদের শেষ দিনে বাড়ি গার্মেন্টকর্মী মনিরুল, আলম, সোহাগ, কাকলী, রুবিনাসহ বেশ কয়েকজন বলেন, তিন থেকে চারগুণ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে তাদের বাড়িতে যেতে হচ্ছে। বাড়ি ফেরার সঙ্গে যানবাহনের লোকজন মানুষদের জিম্মি করে টাকা নিচ্ছেন। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও বাড়িতে আসতে পেড়ে ভালোই লাগছে।

এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন বাস ও ট্রাকচালকের প্রশ্ন করা হলে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ট্রাকচালক বক্কার হোসেন, কেফাত আলী, ছামিদুল, সোহান খান ও চঞ্চল বলেন, ফিরতি পথে খালি গাড়ি যেতে হয়। তাই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। একই কথা বলেন পিকআপ ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকেরাও।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল কবীর এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, রাত থেকে মহাসড়কে গাড়ির চাপ অনেকটা বেড়েছে। ঈদের শেষ দিন হওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে গাড়ি কয়েকগুণ বেশি চলাচল করছে। তবে কোথাও কোনো ধীরগতি বা যানজটের মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। যানজট নিরসনে আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।

সিরাজগঞ্জের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) সালেকুজ্জামান খান সালেক বলেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে যানবাহন বেড়েই চলছে। তবে মহাসড়কে চাপ থাকলেও কোনো যানজট বা ধীরগতি নেই। আশা করছি উত্তরবঙ্গের ঘরে ফেরা মানুষের গত ঈদের মতো এবারের ঈদযাত্রাও নির্বিঘ্ন হবে। তিনি আরও জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড়ে সেতুর ওপর ও মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণে যানজট শুরু হয়। এ কারণে সেতুর পূর্ব পাড়ে যানবাহনের ধীরগতি ছিল। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, এবারের ঈদযাত্রা যানজটমুক্ত ও মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে জেলা পুলিশ, জেলা ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় ১ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যা মোতায়েন থাকবে টানা ঈদুল আজহার তৃতীয় দিন পর্যন্ত। তিনি আরো বলেন, রাত থেকে মহাসড়কে গাড়ির চাপ অনেকটা বেড়েছে। যানবাহন ও ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি কমাতে ও সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

মূল ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন, ঈদের শেষ দিন হওয়াতে মূল ভাড়ার চেয়ে একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন ঢাকা জেলার বাস-মালিক সমিতির নেতাকর্মীরা। তাদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানা যাবে বলে তিনি জানান।