শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাভারে বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ, পুলিশ-শ্রমিকের সংঘর্ষে আহত ২০

সাভারে বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষুদ্ধ পোশাক শ্রমিকের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছে।

শনিবার (১২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে সাভারের উলাইল এলাকায় অবস্থিত প্রাইড গ্রুপের এইচ আর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও ফ্যাশন নিট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে দুটি কারখানার শ্রমিকরা সড়কের অবস্থান নিলে পুলিশ সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটে। শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আহত এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের না জানিয়ে কারাখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর কারণ জানতে আমরা কারখানার সামনে অবস্থান করছিলাম। পুলিশ আমাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আমরা সরতে না চাইলে পুলিশ মারধর শুরু করে। পুলিশ শ্রমিকদের লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। এসময় আমিসহ অন্তত ২০-২৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছি।

জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর ওসি আলতাফ হোসেন বলেন, শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান করে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়েছিল। এই কারণে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শ্রমিকরা চলে গেছে,’ বলেন জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

শ্রমিকদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে কারখানাটি থেকে সুতাসহ বেশ কিছু কাঁচামাল অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। এ কারণে শ্রমিকদের ভেতরে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক কাজ করছিল। এর মধ্যেই কারখানাটি গতকাল কর্মীদের বেতন দিয়ে আজ এক দিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এ নিয়ে শ্রমিকরা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। এতে ২০-২৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিমাসের ১০-১২ তারিখে শ্রমিকদের বেতন দিয়ে থাকি। গতাকালকে স্টাফদের বেতন দেয়া হয়েছে। কিছু সমস্যার কারনে শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করেই শনিবার কারখানাটি একদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে বিক্ষোভ করার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। কিছু শ্রমিক সংগঠনের নেতারা কারখানার সামনে মাইক নিয়ে এসে শ্রমিকদেরকে উসকানি দিয়ে সড়ক অবরোধ করাতে চাইলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কিন্তু আমাদের কর্তৃপক্ষের সাথে কোন ঝামেলাই হয়নি। আগামীকালকেই শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে দিবো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

সাভারে বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ, পুলিশ-শ্রমিকের সংঘর্ষে আহত ২০

প্রকাশিত সময় : ০৮:৫১:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অগাস্ট ২০২৩

সাভারে বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষুদ্ধ পোশাক শ্রমিকের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছে।

শনিবার (১২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে সাভারের উলাইল এলাকায় অবস্থিত প্রাইড গ্রুপের এইচ আর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও ফ্যাশন নিট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে দুটি কারখানার শ্রমিকরা সড়কের অবস্থান নিলে পুলিশ সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটে। শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আহত এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের না জানিয়ে কারাখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর কারণ জানতে আমরা কারখানার সামনে অবস্থান করছিলাম। পুলিশ আমাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আমরা সরতে না চাইলে পুলিশ মারধর শুরু করে। পুলিশ শ্রমিকদের লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। এসময় আমিসহ অন্তত ২০-২৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছি।

জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর ওসি আলতাফ হোসেন বলেন, শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান করে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়েছিল। এই কারণে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শ্রমিকরা চলে গেছে,’ বলেন জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

শ্রমিকদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে কারখানাটি থেকে সুতাসহ বেশ কিছু কাঁচামাল অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। এ কারণে শ্রমিকদের ভেতরে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক কাজ করছিল। এর মধ্যেই কারখানাটি গতকাল কর্মীদের বেতন দিয়ে আজ এক দিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এ নিয়ে শ্রমিকরা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। এতে ২০-২৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিমাসের ১০-১২ তারিখে শ্রমিকদের বেতন দিয়ে থাকি। গতাকালকে স্টাফদের বেতন দেয়া হয়েছে। কিছু সমস্যার কারনে শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করেই শনিবার কারখানাটি একদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে বিক্ষোভ করার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। কিছু শ্রমিক সংগঠনের নেতারা কারখানার সামনে মাইক নিয়ে এসে শ্রমিকদেরকে উসকানি দিয়ে সড়ক অবরোধ করাতে চাইলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কিন্তু আমাদের কর্তৃপক্ষের সাথে কোন ঝামেলাই হয়নি। আগামীকালকেই শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে দিবো।