বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নাটোরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ: একজনের মৃত্যুদণ্ড, আরেকজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

নাটোরের লালপুরে স্কুলছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের দায়ে মো. সুমন আলী (২৬) নামে এক যুবকের মৃত্যুদণ্ড ও মো. রফিকুল ইসলাম নামে (৪৫) অপর সহযোগীকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা ভিকটিম প্রাপ্ত হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। আজ রোববার (১৩ আগস্ট) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মুহাম্মদ আব্দুর রহিম এই আদেশ দেন। এ সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে আসামিদের কড়া পাহারায় নাটোর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সুমন আলী জেলার লালপুর উপজেলার পোকন্দা গ্রামের মো. আব্দুল হামিদের ছেলে এবং আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ জেলার তারাশ উপজেলার ধানকুন্টি গ্রামের আফসার আলীর ছেলে। নাটোর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত ২০১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে লালপুর উপজেলার পোকন্দা গ্রামের ১০ম শ্রেণিপড়ুয়া ওই স্কুলছাত্রী (১৫) বাড়িতে বসে পড়ালেখা করছিলেন। এ সময় আসামি মো. সুমন আলী একটি মাইক্রোবাস নিয়ে বাড়ির সামনে হাজির হন। এরপর সুমন ও তার সঙ্গে থাকা লোকজন বাড়িতে ঢুকে জোর করে ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার ধানকুন্টি গ্রামের রফিকুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে যান। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা বেলাল শিকদার বাদী হয়ে মো. সুমনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে লালপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা লালপুর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করেন। পরে ওই ছাত্রী আদালতে জবানবন্দি দেন। একই সঙ্গে ডাক্তারি পরীক্ষায় তাকে নির্যাতনসহ ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে একই বছরের ১০মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছয়জন আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেন। আদালত এ মামলার অভিযোগ গঠনের সময় আসামি মো. সুমন ও রফিকুল ইসলাম ছাড়া বাকি আসামিদের অব্যাহতি প্রদান করেন। এছাড়া মামলায় মোট ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। মামলার দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আদালত আসামি মো. সুমনকে অপহরণ ও ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অন্যদিকে ধর্ষণে সহযোগিতার দায়ে রফিকুল ইসলামকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর উভয়ের জরিমানার টাকা ভিকটিমকে দেওয়ার আদেশ দেন বিচারক। তিনি আরও বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক এক স্কুলছাত্রীকে প্রকাশ্যে অপহরণ করে বাড়িতে আটকে রেখে ধর্ষণ করার ঘটনা ঘটেছিল। সাক্ষ্য প্রমাণে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন আদালত। এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

‘প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ায় স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়েছিলাম’

নাটোরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ: একজনের মৃত্যুদণ্ড, আরেকজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

প্রকাশিত সময় : ০৯:৪০:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৩

নাটোরের লালপুরে স্কুলছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের দায়ে মো. সুমন আলী (২৬) নামে এক যুবকের মৃত্যুদণ্ড ও মো. রফিকুল ইসলাম নামে (৪৫) অপর সহযোগীকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা ভিকটিম প্রাপ্ত হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। আজ রোববার (১৩ আগস্ট) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মুহাম্মদ আব্দুর রহিম এই আদেশ দেন। এ সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে আসামিদের কড়া পাহারায় নাটোর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সুমন আলী জেলার লালপুর উপজেলার পোকন্দা গ্রামের মো. আব্দুল হামিদের ছেলে এবং আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ জেলার তারাশ উপজেলার ধানকুন্টি গ্রামের আফসার আলীর ছেলে। নাটোর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত ২০১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে লালপুর উপজেলার পোকন্দা গ্রামের ১০ম শ্রেণিপড়ুয়া ওই স্কুলছাত্রী (১৫) বাড়িতে বসে পড়ালেখা করছিলেন। এ সময় আসামি মো. সুমন আলী একটি মাইক্রোবাস নিয়ে বাড়ির সামনে হাজির হন। এরপর সুমন ও তার সঙ্গে থাকা লোকজন বাড়িতে ঢুকে জোর করে ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার ধানকুন্টি গ্রামের রফিকুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে যান। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা বেলাল শিকদার বাদী হয়ে মো. সুমনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে লালপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা লালপুর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করেন। পরে ওই ছাত্রী আদালতে জবানবন্দি দেন। একই সঙ্গে ডাক্তারি পরীক্ষায় তাকে নির্যাতনসহ ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে একই বছরের ১০মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছয়জন আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেন। আদালত এ মামলার অভিযোগ গঠনের সময় আসামি মো. সুমন ও রফিকুল ইসলাম ছাড়া বাকি আসামিদের অব্যাহতি প্রদান করেন। এছাড়া মামলায় মোট ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। মামলার দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আদালত আসামি মো. সুমনকে অপহরণ ও ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অন্যদিকে ধর্ষণে সহযোগিতার দায়ে রফিকুল ইসলামকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর উভয়ের জরিমানার টাকা ভিকটিমকে দেওয়ার আদেশ দেন বিচারক। তিনি আরও বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক এক স্কুলছাত্রীকে প্রকাশ্যে অপহরণ করে বাড়িতে আটকে রেখে ধর্ষণ করার ঘটনা ঘটেছিল। সাক্ষ্য প্রমাণে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন আদালত। এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।