রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘আমি ভুল কিছু করিনি, আমার অধিকার আছে’

ভারতের উত্তাল মণিপুর প্রদেশের অভিনেত্রী সোমা লাইশ্রাম বলেছেন, তিনি কোনো ভুল করেননি, তার কথা বলার অধিকার রয়েছে। সম্প্রতি এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে তাকে অভিনয় ও জনসমক্ষে বক্তব্য দেওয়া থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। সে প্রেক্ষিতে আজ বুধবার একথা বলেন ভারতীয় অভিনেত্রী।

মণিপুরে ১০০ এরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন সোমা। সম্প্রতি একটি সুন্দরীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন তিনি। মণিপুরের সুশীল সমাজ জানায়, মণিপুরে যেখানে সহিংসতা চলছে, এই অবস্থায় তার সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া মানায় না।

তবে সোমার দাবি, তিনি যেখানে খুশি কথা বলতে পারেন। এটা তার অধিকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি এই নিষেধাজ্ঞার তীব্র বিরোধিতা করি। একজন শিল্পী হিসেবে আমার যেখানে খুশি সেখানে কথা বলার অধিকার আছে। যখন প্রয়োজন তখন আমি আওয়াজ তুলবোই। আমি আমার জন্মভূমির বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কাজ করিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে যখন মণিপুরের প্রতিনিধিত্ব করতে বলা হয়েছিল তখন আমার মাথায় কাজ করেছে যে আমি আমার প্রদেশকে সমর্থন করছি। সহিংসতার বাইরও যে মণিপুরে কিছু আছে সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেছি।’

সোমার ওপরে এই নিষেধাজ্ঞা সংশ্লিষ্ট মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মণিপুরে ফিল্ম ফোরামের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, তাকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি দুঃখজনক।

চলতি বছরের মে মাস থেকেই মণিপুর রাজ্য উত্তাল। এখন পর্যন্ত এই সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে ১৭৫ জন।মণিপুরের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় হিন্দু মেইতেই জনগোষ্ঠীর। এদের অনেকেই বৈষ্ণব। রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ তারাই। অন্যদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করেন যেসব নাগা এবং কুকি উপজাতির মানুষ, তাদের একটা বড় অংশ খ্রিস্টান। এরকম ৩৩ টি উপজাতি গোষ্ঠীর বসবাস রাজ্যের ৯০ শতাংশ পাহাড়ি অঞ্চলে।

গত কয়েক বছর ধরেই মেইতেইরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন যে তাদের তপশিলি উপজাতি (এসটি) হিসাবে শ্রেণীভুক্ত করার জন্য। ভারতে যে সব সম্প্রদায় ঐতিহাসিকভাবে সমান সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে – তাদেরকে এসটি শ্রেণীভুক্ত করে তাদের জন্য সরকারি চাকরি, কলেজে ভর্তি ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির আসন সংরক্ষণ করা হয়।এরপর মে মাসে মণিপুর হাই কোর্ট রাজ্য সরকারকে মেইতেই সম্প্রদায়ের দাবি বিবেচনার নির্দেশ দেয়। কিন্তু রাজ্যের অন্য উপজাতিগুলোর মধ্যে এতে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় যে মেইতেইদেরকে এসটি মর্যাদা দেওয়া হলে তাদের চাকরির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। এর পরেই সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। আর তা এখনো চলছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

‘আমি ভুল কিছু করিনি, আমার অধিকার আছে’

প্রকাশিত সময় : ০৫:১৮:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ভারতের উত্তাল মণিপুর প্রদেশের অভিনেত্রী সোমা লাইশ্রাম বলেছেন, তিনি কোনো ভুল করেননি, তার কথা বলার অধিকার রয়েছে। সম্প্রতি এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে তাকে অভিনয় ও জনসমক্ষে বক্তব্য দেওয়া থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। সে প্রেক্ষিতে আজ বুধবার একথা বলেন ভারতীয় অভিনেত্রী।

মণিপুরে ১০০ এরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন সোমা। সম্প্রতি একটি সুন্দরীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন তিনি। মণিপুরের সুশীল সমাজ জানায়, মণিপুরে যেখানে সহিংসতা চলছে, এই অবস্থায় তার সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া মানায় না।

তবে সোমার দাবি, তিনি যেখানে খুশি কথা বলতে পারেন। এটা তার অধিকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি এই নিষেধাজ্ঞার তীব্র বিরোধিতা করি। একজন শিল্পী হিসেবে আমার যেখানে খুশি সেখানে কথা বলার অধিকার আছে। যখন প্রয়োজন তখন আমি আওয়াজ তুলবোই। আমি আমার জন্মভূমির বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কাজ করিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে যখন মণিপুরের প্রতিনিধিত্ব করতে বলা হয়েছিল তখন আমার মাথায় কাজ করেছে যে আমি আমার প্রদেশকে সমর্থন করছি। সহিংসতার বাইরও যে মণিপুরে কিছু আছে সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেছি।’

সোমার ওপরে এই নিষেধাজ্ঞা সংশ্লিষ্ট মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মণিপুরে ফিল্ম ফোরামের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, তাকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি দুঃখজনক।

চলতি বছরের মে মাস থেকেই মণিপুর রাজ্য উত্তাল। এখন পর্যন্ত এই সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে ১৭৫ জন।মণিপুরের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় হিন্দু মেইতেই জনগোষ্ঠীর। এদের অনেকেই বৈষ্ণব। রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ তারাই। অন্যদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করেন যেসব নাগা এবং কুকি উপজাতির মানুষ, তাদের একটা বড় অংশ খ্রিস্টান। এরকম ৩৩ টি উপজাতি গোষ্ঠীর বসবাস রাজ্যের ৯০ শতাংশ পাহাড়ি অঞ্চলে।

গত কয়েক বছর ধরেই মেইতেইরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন যে তাদের তপশিলি উপজাতি (এসটি) হিসাবে শ্রেণীভুক্ত করার জন্য। ভারতে যে সব সম্প্রদায় ঐতিহাসিকভাবে সমান সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে – তাদেরকে এসটি শ্রেণীভুক্ত করে তাদের জন্য সরকারি চাকরি, কলেজে ভর্তি ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির আসন সংরক্ষণ করা হয়।এরপর মে মাসে মণিপুর হাই কোর্ট রাজ্য সরকারকে মেইতেই সম্প্রদায়ের দাবি বিবেচনার নির্দেশ দেয়। কিন্তু রাজ্যের অন্য উপজাতিগুলোর মধ্যে এতে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় যে মেইতেইদেরকে এসটি মর্যাদা দেওয়া হলে তাদের চাকরির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। এর পরেই সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। আর তা এখনো চলছে।