রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আফগান নারীদের আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ছে

আফগানিস্তানে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গতকাল মঙ্গলবার নিরপত্তা পরিষদকে জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থার প্রধান জানান, আফগান নারীদের ওপর দিন দিন নিপীড়নের হার বেড়েই চলেছে। অনেক সময় তাদের পুরুষ আত্মীয়দের দ্বারাও নিপীড়নের শিকার হন তারা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়। ২০২১ সালে ক্ষমতা দখল করে সরকার গঠন করে তালেবান। এরপর থেকেই নারী অধিকার খর্ব করতে শুরু করে তারা। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও এনজিওতে কাজ করা বন্ধ করে নারীদের। এখন প্রাথমিক শিক্ষা পেতেও সংগ্রাম করতে হচ্ছে দেশটির নারীদের। এ ছাড়া পার্ক ও অন্যান্য পাবলিক জায়গাগুলোতে নারীদের যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে তালেবান সরকার। ইউএন উইমেন এর পরিচালক সিমা বাহুস বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছেন যে তারা অন্ধকারে থাকা বন্দি। কোনো ভবিষ্যত ছাড়া বদ্ধ ঘরে দিন কাটাচ্ছেন তারা। নিরাপত্তা পরিষদকে এই পরিবর্তনের পেছনে তিনটি কারণ তুলে ধরেন সিমা। তিনি বলেন, প্রথমত দেশটিতে নারীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা একদমই হারিয়ে গেছে। শুধুমাত্র জাতীয় কিংবা প্রাদেশিক পর্যায়েই নয় সমাজ ও পরিবারেও তাদের অবস্থান নিচে নেমে গেছে। নিজ ঘরেও তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। সিমা বলেন, মূলত দারিদ্র, নারীদের আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ হওয়া এবং তালেবানের আরোপিত কট্টর পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার কারণে এমনটা হয়েছে। দ্বিতীয়ত নারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বেড়েই চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন সিমা। তিনি বলেন, তালেবানের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের অবস্থান নিচে নেমে গেছে। বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তৃতীয়ত আফগান নারীদের মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। সামাজিক ও আর্থিক পরিস্থিতির কারণে তাদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশটিতে স্বাবলম্বী নারীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। ৯০ শতাংশ নারী এখন মানসিকভাবে খারাপ আছে এবং অনেকে আত্মহত্যা করার কথাও ভাবছেন। এই নারীদের সহায়তায় নতুন কোনো পথ বের করার আহ্বান জানিয়েছেন সিমা। তিনি বলেন, অনলাইন হোক কিংবা অন্যকোনোভাবে তাদের অর্থ সহায়তা করা যেতে পারে কিংবা নিরাপদে তাদের স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আফগানিস্তানে নিযুক্ত জাতিসংঘ মিশনের প্রধান রোজা ওটুনবায়েভা বলেন, জাতিসংঘের ৩২০ কোটি ডলার সহায়তার মাত্র ২৮ শতাংশ যোগাড় হয়েছে। তহবিল না থাকায় অনেক প্রকল্প বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে জাতিসংঘ। তিনি বলেন, ১ কোটি ৫২ লাখ আফগান এখন খাদ্য সংকটে রয়েছে এবং যেকোনো সময় দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

আফগান নারীদের আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ছে

প্রকাশিত সময় : ১০:৩৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আফগানিস্তানে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গতকাল মঙ্গলবার নিরপত্তা পরিষদকে জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থার প্রধান জানান, আফগান নারীদের ওপর দিন দিন নিপীড়নের হার বেড়েই চলেছে। অনেক সময় তাদের পুরুষ আত্মীয়দের দ্বারাও নিপীড়নের শিকার হন তারা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়। ২০২১ সালে ক্ষমতা দখল করে সরকার গঠন করে তালেবান। এরপর থেকেই নারী অধিকার খর্ব করতে শুরু করে তারা। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও এনজিওতে কাজ করা বন্ধ করে নারীদের। এখন প্রাথমিক শিক্ষা পেতেও সংগ্রাম করতে হচ্ছে দেশটির নারীদের। এ ছাড়া পার্ক ও অন্যান্য পাবলিক জায়গাগুলোতে নারীদের যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে তালেবান সরকার। ইউএন উইমেন এর পরিচালক সিমা বাহুস বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছেন যে তারা অন্ধকারে থাকা বন্দি। কোনো ভবিষ্যত ছাড়া বদ্ধ ঘরে দিন কাটাচ্ছেন তারা। নিরাপত্তা পরিষদকে এই পরিবর্তনের পেছনে তিনটি কারণ তুলে ধরেন সিমা। তিনি বলেন, প্রথমত দেশটিতে নারীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা একদমই হারিয়ে গেছে। শুধুমাত্র জাতীয় কিংবা প্রাদেশিক পর্যায়েই নয় সমাজ ও পরিবারেও তাদের অবস্থান নিচে নেমে গেছে। নিজ ঘরেও তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। সিমা বলেন, মূলত দারিদ্র, নারীদের আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ হওয়া এবং তালেবানের আরোপিত কট্টর পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার কারণে এমনটা হয়েছে। দ্বিতীয়ত নারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বেড়েই চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন সিমা। তিনি বলেন, তালেবানের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের অবস্থান নিচে নেমে গেছে। বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তৃতীয়ত আফগান নারীদের মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। সামাজিক ও আর্থিক পরিস্থিতির কারণে তাদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশটিতে স্বাবলম্বী নারীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। ৯০ শতাংশ নারী এখন মানসিকভাবে খারাপ আছে এবং অনেকে আত্মহত্যা করার কথাও ভাবছেন। এই নারীদের সহায়তায় নতুন কোনো পথ বের করার আহ্বান জানিয়েছেন সিমা। তিনি বলেন, অনলাইন হোক কিংবা অন্যকোনোভাবে তাদের অর্থ সহায়তা করা যেতে পারে কিংবা নিরাপদে তাদের স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আফগানিস্তানে নিযুক্ত জাতিসংঘ মিশনের প্রধান রোজা ওটুনবায়েভা বলেন, জাতিসংঘের ৩২০ কোটি ডলার সহায়তার মাত্র ২৮ শতাংশ যোগাড় হয়েছে। তহবিল না থাকায় অনেক প্রকল্প বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে জাতিসংঘ। তিনি বলেন, ১ কোটি ৫২ লাখ আফগান এখন খাদ্য সংকটে রয়েছে এবং যেকোনো সময় দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে।