শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডির ৩৮ বছর আজ

আজ রোববার (১৫ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ট্রাডেজির ৩৮ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৮৫ সালের এই দিনে হলের তৎকালীন অনুদ্বৈপায়ন ভবনের টেলিভিশন কক্ষের ছাদ ধসে মারা যান ৪০ জন। আহত হন অনেকে। সেই থেকে প্রতিবছর এই দিনটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর বিভীষিকাময় রাত প্রত্যক্ষ করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তখন চিত্তবিনোদনের জন্য ছিল দেশের একমাত্র চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। প্রতি মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় প্রচারিত হতো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘শুকতারা’। এটি দেখতে সেদিন প্রায় ৪০০ ছাত্র-কর্মচারী-অতিথিতে ভরে ওঠে জগন্নাথ হলের তৎকালীন অনুদ্বৈপায়ন ভবনের টিভি রুম। ভবনটির সংস্কার কাজ চলছিল। সেদিন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে ঢাকার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যায়।

১৫ অক্টোবর রাত পৌনে ৯টার দিকে হঠাৎ ভবনটির ছাদ ধসে পড়ে। যারা ভেতরে জায়গা না পেয়ে দরজা বা জানালার ধারে বসে নাটক দেখছিলেন, তারা বের হতে পারলেও অধিকাংশ ছাত্র সেদিন চাপা পড়ে। তাদের আর্তচিৎকারে জগন্নাথ হলে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন অন্যান্য ভবনের ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক, ছাত্র, কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ। উদ্ধারকৃতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

 

ঘটনাস্থলেই জগন্নাথ হলের ৩৮ জন ছাত্র-কর্মচারী-অতিথির মৃত্যু হয়। তাদের উদ্ধার ও সেবা করতে গিয়ে আরও দুইজন মারা যান। তাদের মধ্যে ছিলেন ২৬ জন ছাত্র, ১৩ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ও অতিথি। আহত হন শতাধিক। তাদের অনেকেই পঙ্গু হয়ে যান চিরতরে।

নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর শোক দিবস পালন করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। নিহতদের স্মৃতিরক্ষায় পরবর্তী সময়ে নির্মিত হয় ‘অক্টোবর স্মৃতিভবন। এর নিচতলায় একটি ছোট জাদুঘর আছে। সেদিন ব্যবহৃত টিভি এবং মৃত্যুবরণ করা বেশ কয়েকজনের ছবি রয়েছে এতে। এছাড়া ভবনটির সামনে নিহতদের স্মরণে তাদের নামসংবলিত একটি নামফলক স্থাপন করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যায়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোববার দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস পালিত হবে। ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সংঘটিত মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় যে সব ছাত্র, কর্মচারী ও অতিথি নিহত হয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রতি বছর এই দিবসটি পালন করা হয়।

শোক দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭টায় জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ ও নীরবতা পালন করবেন। পরে উপাচার্যের সভাপতিত্বে সকাল ৮টায় জগন্নাথ হল অক্টোবর স্মৃতি ভবনের টিভি কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডির ৩৮ বছর আজ

প্রকাশিত সময় : ১০:২১:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৩

আজ রোববার (১৫ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ট্রাডেজির ৩৮ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৮৫ সালের এই দিনে হলের তৎকালীন অনুদ্বৈপায়ন ভবনের টেলিভিশন কক্ষের ছাদ ধসে মারা যান ৪০ জন। আহত হন অনেকে। সেই থেকে প্রতিবছর এই দিনটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর বিভীষিকাময় রাত প্রত্যক্ষ করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তখন চিত্তবিনোদনের জন্য ছিল দেশের একমাত্র চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। প্রতি মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় প্রচারিত হতো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘শুকতারা’। এটি দেখতে সেদিন প্রায় ৪০০ ছাত্র-কর্মচারী-অতিথিতে ভরে ওঠে জগন্নাথ হলের তৎকালীন অনুদ্বৈপায়ন ভবনের টিভি রুম। ভবনটির সংস্কার কাজ চলছিল। সেদিন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে ঢাকার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যায়।

১৫ অক্টোবর রাত পৌনে ৯টার দিকে হঠাৎ ভবনটির ছাদ ধসে পড়ে। যারা ভেতরে জায়গা না পেয়ে দরজা বা জানালার ধারে বসে নাটক দেখছিলেন, তারা বের হতে পারলেও অধিকাংশ ছাত্র সেদিন চাপা পড়ে। তাদের আর্তচিৎকারে জগন্নাথ হলে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন অন্যান্য ভবনের ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক, ছাত্র, কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ। উদ্ধারকৃতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

 

ঘটনাস্থলেই জগন্নাথ হলের ৩৮ জন ছাত্র-কর্মচারী-অতিথির মৃত্যু হয়। তাদের উদ্ধার ও সেবা করতে গিয়ে আরও দুইজন মারা যান। তাদের মধ্যে ছিলেন ২৬ জন ছাত্র, ১৩ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ও অতিথি। আহত হন শতাধিক। তাদের অনেকেই পঙ্গু হয়ে যান চিরতরে।

নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর শোক দিবস পালন করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। নিহতদের স্মৃতিরক্ষায় পরবর্তী সময়ে নির্মিত হয় ‘অক্টোবর স্মৃতিভবন। এর নিচতলায় একটি ছোট জাদুঘর আছে। সেদিন ব্যবহৃত টিভি এবং মৃত্যুবরণ করা বেশ কয়েকজনের ছবি রয়েছে এতে। এছাড়া ভবনটির সামনে নিহতদের স্মরণে তাদের নামসংবলিত একটি নামফলক স্থাপন করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যায়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোববার দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস পালিত হবে। ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সংঘটিত মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় যে সব ছাত্র, কর্মচারী ও অতিথি নিহত হয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রতি বছর এই দিবসটি পালন করা হয়।

শোক দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭টায় জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ ও নীরবতা পালন করবেন। পরে উপাচার্যের সভাপতিত্বে সকাল ৮টায় জগন্নাথ হল অক্টোবর স্মৃতি ভবনের টিভি কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।