শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সমুদ্র পথে গাজায় পৌঁছেছে ত্রাণের প্রথম চালান

গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে আসা প্রথম জাহাজটি উপকূলের কাছে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে। ত্রাণ সহায়তার জন্য উপকূলে নির্মিত জেটিতে জাহাজ থেকে পণ্যগুলো আনলোড করা শুরু হয়েছে। এর আগে ২০০ টন খাদ্য নিয়ে ওপেন আর্মস নামের স্প্যানিশ একটি জাহাজ সাইপ্রাস থেকে ছেড়ে গাজা উপকূলে পৌছায়।

জাতিসংঘ বলতে গাজায় মানবিক বিপর্যয় এখন চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছে এবং সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। খবর বিবিসির।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ওপেন আর্মস নামের জাহাজটি থেকে একটি ক্রেনের মাধ্যমে উপকূলে বার্জে নামানো হচ্ছে। পেরে এগুলো বিতরণের জন্য গাজার অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হবে। জানা গেছে সমুদ্র পথে গাজায় ত্রাণ সহায়তা কার্যকরভাবে পৌঁছানো সম্ভব কিনা সেটির একটি ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে এর মাধ্যমে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সহায়তায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিইসিকে) মানবিক ত্রাণ সহায়তা হিসেবে গাজায় চাল, ময়দা, লেবু, টিনজাত শাকসবজি এবং টিনজান প্রোটিন জাতীয় খাবার সমুদ্রপথে প্রথমবারের মতো পাঠিয়েছে।

কাজায় কোন কার্যকরী বন্দর না থাকার কারণে ডব্লিইসিকের পক্ষ থেকে একটি দল উপকূলের কাছে একটি জেটি নির্মাণ শুরু করে। এটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরই ত্রাণ সহায়তার প্রথম চালানটি আসলো। এ জেটি ব্যবহার করেই গাজায় ভবিষ্যতে ত্রাণ ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা পাঠানো হবে।

ডব্লিইসিকের প্রতিষ্ঠাতা ও সেলিব্রেটি শেফ জোসে আন্দ্রেস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেয়া এক বার্তায় লিখেছেন, ‘মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে বার্জ থেকে সব খাদ্য ১২টি লরিতে তোলা হয়েছে। অবশেষে আমরা এ অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে পাঠানো প্রথম ত্রাণের চালানটি সফলভাবে গাজায় পৌঁছানো গেছে। ভবিষ্যতে সমুদ্রপথে গাজায় এভাবে কয়েক মিলিয়ন টন সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হবে।’

একটি বিবৃতিতে ইসরায়েল বলেছে, ‘ওপেন আর্মস জাহাজ এবং এর কার্গো তাদের পক্ষ থেকে সাইপ্রাসে পরিদর্শন করা হয়েছে, এবং ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সেনাদেরকে উপকূল সুরক্ষিত রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে।’

ওপেন আর্মস নামের দাতব্য কাজ পরিচালনাকারী এ জাহাজটি মঙ্গলবার লাকানার একটি বন্দর থেকে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। প্রত্যাশিতভাবেই তারা সহায়তা পৌছাতে সক্ষম হয়। সহায়তার পণ্যগুলো আনলোডের জন্য কর্মীরা রাতভর কাজ করেছে।

যদি তাদের এ প্রচেষ্টাকে সফল বলে ধরে নেয় হয় তবে গাজায় আরো আন্তর্জাতিক সহায়তার পথ প্রসারিত হবে। গাজায় সরাসরি জাহাজ চলাচলের পথ উন্মুক্ত হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আলাদাভাবে ত্রাণ সরবরাহ আরো গতিশীল করতে ভাসমান একটি ডক নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এটি নির্মিত হলে গাজায় প্রতিদিন ২ মিলিয়ন খাদ্য সহায় পাঠানো সম্ভব হবে। তবে যখন একটি সামরিক জাহাজ ডকটি নির্মাণের জন্য সরঞ্জাম নিয়ে যাচ্ছিলো তখন এটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই।

সামরিক অভিযান এবং সামাজিক শৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে গাজায় ত্রাণ বিতরণ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। গাজার নিজস্ব খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খামার, বেকারি এবং কারখানাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

এই অঞ্চলে খাবার ও অন্যান্য সহায়তা পৌঁছানোর সবচেয়ে কার্যকরী উপায় সড়কপথ হলেও ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে গাজায় ত্রাণ নিয়ে পৌঁছোতে পারছেনা সাহায্য সংস্থাগুলো। এর আগে সড়কপথে ত্রাণের কনভয়গুলো বেশ কয়েকবার লুটপাটের শিকার হলে সড়কপথে ত্রাণ কর্মসূচী সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। গত সপ্তাহে আকাশ থেকে প্যারাসুটের মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ ফেলার চেষ্টা করা হয়। এসময় প্যারাসুট বিপর্যয়ে ৫ জন নিহত হলে সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়।

এদিকে জাতিসংঘ সতর্ক করে জানিয়েছে জরুরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে গাজায় দুর্ভিক্ষ প্রায় অনিবার্য। ইইউ-এর পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল ইসরায়েলকে মানবসৃষ্ট বিপর্যয় তৈরি করার এবং যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে অনাহারকে ব্যবহার করার অভিযোগ করেছেন।

তবে ইসরায়েল এ ধরনে অভিযোগ বারবারই অস্বীকার করে আসছে। তারা বলেছে, গাজার দক্ষিণে দুটি ক্রসিং ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানের জন্য খোলা রয়েছে। বরং সাহায্য সংস্থাগুলো তাদের লজিস্টিক ঘাটতির কারণে গাজার অভ্যন্তরে পৌছাতে পারছে না।

শুক্রবার গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা চলছে, তবে ইসরায়েল হামাসের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে।

হামাস বলেছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এটিকে অবাস্তব বলেছেন।

উল্লেখ্য গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা চালায় হামাস। এসময় প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে হামাস। প্রায় ২৫৩ জনকে জিম্মি করে তারা গাজার অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করে। নেমে আসে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৩১ হাজারের বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে গাজায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

সমুদ্র পথে গাজায় পৌঁছেছে ত্রাণের প্রথম চালান

প্রকাশিত সময় : ১১:১৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪

গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে আসা প্রথম জাহাজটি উপকূলের কাছে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে। ত্রাণ সহায়তার জন্য উপকূলে নির্মিত জেটিতে জাহাজ থেকে পণ্যগুলো আনলোড করা শুরু হয়েছে। এর আগে ২০০ টন খাদ্য নিয়ে ওপেন আর্মস নামের স্প্যানিশ একটি জাহাজ সাইপ্রাস থেকে ছেড়ে গাজা উপকূলে পৌছায়।

জাতিসংঘ বলতে গাজায় মানবিক বিপর্যয় এখন চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছে এবং সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। খবর বিবিসির।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ওপেন আর্মস নামের জাহাজটি থেকে একটি ক্রেনের মাধ্যমে উপকূলে বার্জে নামানো হচ্ছে। পেরে এগুলো বিতরণের জন্য গাজার অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হবে। জানা গেছে সমুদ্র পথে গাজায় ত্রাণ সহায়তা কার্যকরভাবে পৌঁছানো সম্ভব কিনা সেটির একটি ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে এর মাধ্যমে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সহায়তায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিইসিকে) মানবিক ত্রাণ সহায়তা হিসেবে গাজায় চাল, ময়দা, লেবু, টিনজাত শাকসবজি এবং টিনজান প্রোটিন জাতীয় খাবার সমুদ্রপথে প্রথমবারের মতো পাঠিয়েছে।

কাজায় কোন কার্যকরী বন্দর না থাকার কারণে ডব্লিইসিকের পক্ষ থেকে একটি দল উপকূলের কাছে একটি জেটি নির্মাণ শুরু করে। এটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরই ত্রাণ সহায়তার প্রথম চালানটি আসলো। এ জেটি ব্যবহার করেই গাজায় ভবিষ্যতে ত্রাণ ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা পাঠানো হবে।

ডব্লিইসিকের প্রতিষ্ঠাতা ও সেলিব্রেটি শেফ জোসে আন্দ্রেস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেয়া এক বার্তায় লিখেছেন, ‘মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে বার্জ থেকে সব খাদ্য ১২টি লরিতে তোলা হয়েছে। অবশেষে আমরা এ অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে পাঠানো প্রথম ত্রাণের চালানটি সফলভাবে গাজায় পৌঁছানো গেছে। ভবিষ্যতে সমুদ্রপথে গাজায় এভাবে কয়েক মিলিয়ন টন সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হবে।’

একটি বিবৃতিতে ইসরায়েল বলেছে, ‘ওপেন আর্মস জাহাজ এবং এর কার্গো তাদের পক্ষ থেকে সাইপ্রাসে পরিদর্শন করা হয়েছে, এবং ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সেনাদেরকে উপকূল সুরক্ষিত রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে।’

ওপেন আর্মস নামের দাতব্য কাজ পরিচালনাকারী এ জাহাজটি মঙ্গলবার লাকানার একটি বন্দর থেকে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। প্রত্যাশিতভাবেই তারা সহায়তা পৌছাতে সক্ষম হয়। সহায়তার পণ্যগুলো আনলোডের জন্য কর্মীরা রাতভর কাজ করেছে।

যদি তাদের এ প্রচেষ্টাকে সফল বলে ধরে নেয় হয় তবে গাজায় আরো আন্তর্জাতিক সহায়তার পথ প্রসারিত হবে। গাজায় সরাসরি জাহাজ চলাচলের পথ উন্মুক্ত হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আলাদাভাবে ত্রাণ সরবরাহ আরো গতিশীল করতে ভাসমান একটি ডক নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এটি নির্মিত হলে গাজায় প্রতিদিন ২ মিলিয়ন খাদ্য সহায় পাঠানো সম্ভব হবে। তবে যখন একটি সামরিক জাহাজ ডকটি নির্মাণের জন্য সরঞ্জাম নিয়ে যাচ্ছিলো তখন এটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই।

সামরিক অভিযান এবং সামাজিক শৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে গাজায় ত্রাণ বিতরণ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। গাজার নিজস্ব খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খামার, বেকারি এবং কারখানাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

এই অঞ্চলে খাবার ও অন্যান্য সহায়তা পৌঁছানোর সবচেয়ে কার্যকরী উপায় সড়কপথ হলেও ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে গাজায় ত্রাণ নিয়ে পৌঁছোতে পারছেনা সাহায্য সংস্থাগুলো। এর আগে সড়কপথে ত্রাণের কনভয়গুলো বেশ কয়েকবার লুটপাটের শিকার হলে সড়কপথে ত্রাণ কর্মসূচী সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। গত সপ্তাহে আকাশ থেকে প্যারাসুটের মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ ফেলার চেষ্টা করা হয়। এসময় প্যারাসুট বিপর্যয়ে ৫ জন নিহত হলে সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়।

এদিকে জাতিসংঘ সতর্ক করে জানিয়েছে জরুরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে গাজায় দুর্ভিক্ষ প্রায় অনিবার্য। ইইউ-এর পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল ইসরায়েলকে মানবসৃষ্ট বিপর্যয় তৈরি করার এবং যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে অনাহারকে ব্যবহার করার অভিযোগ করেছেন।

তবে ইসরায়েল এ ধরনে অভিযোগ বারবারই অস্বীকার করে আসছে। তারা বলেছে, গাজার দক্ষিণে দুটি ক্রসিং ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানের জন্য খোলা রয়েছে। বরং সাহায্য সংস্থাগুলো তাদের লজিস্টিক ঘাটতির কারণে গাজার অভ্যন্তরে পৌছাতে পারছে না।

শুক্রবার গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা চলছে, তবে ইসরায়েল হামাসের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে।

হামাস বলেছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এটিকে অবাস্তব বলেছেন।

উল্লেখ্য গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা চালায় হামাস। এসময় প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে হামাস। প্রায় ২৫৩ জনকে জিম্মি করে তারা গাজার অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করে। নেমে আসে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৩১ হাজারের বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে গাজায়।