সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিশুদের ভালোবাসতেন বঙ্গবন্ধু

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশকে ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন দেশের মানুষকে। এমনকি প্রতি ছিলেন দুর্বল। শিশুদের খুব ভালোবাসতেন তিনি। তার একাধিক নিদর্শন তিনি রেখেছেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বিভিন্ন কার্যক্রমে এমন চিত্র দেখা গেছে।

শিশুরাও বঙ্গবন্ধুকে আপন করে নিত। তাই মহান নেতার জন্মদিনকে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু। পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়রা খাতুনের চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে তৃতীয় সন্তান ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

ছোটবেলায় বঙ্গবন্ধুর ডাকনাম ছিল ‘খোকা’। আচরণে তিনি খোকাদের মতোই সহজ সরল, নিষ্পাপ ও জেদী ছিলেন। শিশুদের মতোই মানুষকে ভালোবাসতেন, সবাইকে সহজেই বিশ্বাস করতেন।

শিশুদের প্রতি তার ভালোবাসা স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চকে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ ঘোষণা করা হয়।

ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন ভীষণ দয়ালু। টাকার অভাবে কোনো ছেলে বইপত্র কিনতে না পারলে নিজের বইপত্র দিয়ে দিতেন। এমনকি একদিন এক ছেলেকে ছেঁড়া কাপড় পরে থাকতে দেখে নিজের পরনের কাপড় খুলে দিয়েছিলেন তিনি। এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে তার জীবনে।

এছাড়া দেশ ও জনগণের বিভিন্ন কাজে বঙ্গবন্ধু যখন গ্রামেগঞ্জে যেতেন, তখন চলার পথে শিশুদের দেখলে গাড়ি থামিয়ে তাদের সঙ্গে গল্প করতেন। খোঁজ-খবর নিতেন। দুস্থ ও গরিব শিশুদের দেখলে কাছে টানতেন। কখনো কখনো নিজের গাড়িতে উঠিয়ে অফিসে বা নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতেন। এরপর কাপড়-চোপড়সহ নানা উপহার দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটাতেন।

১৯৭২ সালের ঘটনা। সকালে বঙ্গবন্ধু হাঁটতে বের হয়েছেন। সঙ্গে ছিলেন বড় ছেলে শেখ কামাল। তিনি দেখলেন, একটি ছোট ছেলে বইয়ের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। কাছে ডাকার পর ছেলেটি জানায়, তার পা ব্যথা করছে। বঙ্গবন্ধু নিজে ছেলেটির জুতা খুলে দেখেন, জুতার মধ্যে পেরেকের সুঁচালো মাথা বের হয়ে আছে, ছেলেটির পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তখনই ছেলেটির চিকিৎসার জন্য তার দেহরক্ষী পুলিশকে নির্দেশ দিলেন বঙ্গবন্ধু, তার হাতে কিছু টাকাও দিলেন। পরম মমতায় তাকে কোলে নিয়ে আদর করলেন।

শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৫৬ সালের ৫ অক্টোবর দেশের ঐতিহ্যবাহী শিশু সংগঠন ‘কচি-কাঁচার মেলা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষা, সংস্কৃতিচর্চা, খেলাধুলার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, দেশ ও মানুষকে ভালোবাসার মানসিকতা বিকাশে শিশুরা সুনাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠার প্রেরণা পাচ্ছে। দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছে।

জাতির পিতা বুঝেছিলেন, দেশের আগামী দিনের নাগরিক আজকের শিশুরাই জাতিকে নেতৃত্ব দেবে। সুতরাং তাদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিশু মনে দেশপ্রেমের আগুন জ্বালাতে না পারলে তারা সুষ্ঠু নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে না।

শিশুরাই আগামী প্রজন্ম। তারা গড়ে উঠুক কল্যাণকামী ও সৌন্দর্যমূলক জীবনবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যদিয়ে। এ স্বপ্ন আমাদের চেতনায় জাগিয়ে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর কাছে তার শিশুপুত্র রাসেল ছিল বাংলাদেশের সব শিশুর প্রতীক। তিনি অনুধাবন করেছেন, শিশুর কাছে জাত-পাত, ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই। স্বাধীন বাংলাদেশকে গড়তে হলে শিশুদেরও গড়তে হবে। ওদের ভেতরে দেশপ্রেম জাগাতে হবে।

তাই তো সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে শিশুদের অগ্রগতির বিশেষ বিধান প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে শিশুদের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাসহ মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা, সুযোগের সমতা, অধিকার ও কর্তব্য এবং জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শিশু উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেন।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার অন্যতম শক্তি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। যারা আজকের শিশু-কিশোর। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণ এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ভেতর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৎডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলছেন। সেই বাংলাদেশের আগামী নেতৃত্ব আজকের শিশু-কিশোরদের কাছে।

বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘শিশু হও, শিশুর মতো হও। শিশুর মতো হাসতে শেখো। দুনিয়ার ভালোবাসা পাবে।’-এবিএন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

শিশুদের ভালোবাসতেন বঙ্গবন্ধু

প্রকাশিত সময় : ১১:৪৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশকে ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন দেশের মানুষকে। এমনকি প্রতি ছিলেন দুর্বল। শিশুদের খুব ভালোবাসতেন তিনি। তার একাধিক নিদর্শন তিনি রেখেছেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বিভিন্ন কার্যক্রমে এমন চিত্র দেখা গেছে।

শিশুরাও বঙ্গবন্ধুকে আপন করে নিত। তাই মহান নেতার জন্মদিনকে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু। পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়রা খাতুনের চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে তৃতীয় সন্তান ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

ছোটবেলায় বঙ্গবন্ধুর ডাকনাম ছিল ‘খোকা’। আচরণে তিনি খোকাদের মতোই সহজ সরল, নিষ্পাপ ও জেদী ছিলেন। শিশুদের মতোই মানুষকে ভালোবাসতেন, সবাইকে সহজেই বিশ্বাস করতেন।

শিশুদের প্রতি তার ভালোবাসা স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চকে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ ঘোষণা করা হয়।

ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন ভীষণ দয়ালু। টাকার অভাবে কোনো ছেলে বইপত্র কিনতে না পারলে নিজের বইপত্র দিয়ে দিতেন। এমনকি একদিন এক ছেলেকে ছেঁড়া কাপড় পরে থাকতে দেখে নিজের পরনের কাপড় খুলে দিয়েছিলেন তিনি। এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে তার জীবনে।

এছাড়া দেশ ও জনগণের বিভিন্ন কাজে বঙ্গবন্ধু যখন গ্রামেগঞ্জে যেতেন, তখন চলার পথে শিশুদের দেখলে গাড়ি থামিয়ে তাদের সঙ্গে গল্প করতেন। খোঁজ-খবর নিতেন। দুস্থ ও গরিব শিশুদের দেখলে কাছে টানতেন। কখনো কখনো নিজের গাড়িতে উঠিয়ে অফিসে বা নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতেন। এরপর কাপড়-চোপড়সহ নানা উপহার দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটাতেন।

১৯৭২ সালের ঘটনা। সকালে বঙ্গবন্ধু হাঁটতে বের হয়েছেন। সঙ্গে ছিলেন বড় ছেলে শেখ কামাল। তিনি দেখলেন, একটি ছোট ছেলে বইয়ের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। কাছে ডাকার পর ছেলেটি জানায়, তার পা ব্যথা করছে। বঙ্গবন্ধু নিজে ছেলেটির জুতা খুলে দেখেন, জুতার মধ্যে পেরেকের সুঁচালো মাথা বের হয়ে আছে, ছেলেটির পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তখনই ছেলেটির চিকিৎসার জন্য তার দেহরক্ষী পুলিশকে নির্দেশ দিলেন বঙ্গবন্ধু, তার হাতে কিছু টাকাও দিলেন। পরম মমতায় তাকে কোলে নিয়ে আদর করলেন।

শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৫৬ সালের ৫ অক্টোবর দেশের ঐতিহ্যবাহী শিশু সংগঠন ‘কচি-কাঁচার মেলা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষা, সংস্কৃতিচর্চা, খেলাধুলার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, দেশ ও মানুষকে ভালোবাসার মানসিকতা বিকাশে শিশুরা সুনাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠার প্রেরণা পাচ্ছে। দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছে।

জাতির পিতা বুঝেছিলেন, দেশের আগামী দিনের নাগরিক আজকের শিশুরাই জাতিকে নেতৃত্ব দেবে। সুতরাং তাদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিশু মনে দেশপ্রেমের আগুন জ্বালাতে না পারলে তারা সুষ্ঠু নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে না।

শিশুরাই আগামী প্রজন্ম। তারা গড়ে উঠুক কল্যাণকামী ও সৌন্দর্যমূলক জীবনবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যদিয়ে। এ স্বপ্ন আমাদের চেতনায় জাগিয়ে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর কাছে তার শিশুপুত্র রাসেল ছিল বাংলাদেশের সব শিশুর প্রতীক। তিনি অনুধাবন করেছেন, শিশুর কাছে জাত-পাত, ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই। স্বাধীন বাংলাদেশকে গড়তে হলে শিশুদেরও গড়তে হবে। ওদের ভেতরে দেশপ্রেম জাগাতে হবে।

তাই তো সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে শিশুদের অগ্রগতির বিশেষ বিধান প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে শিশুদের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাসহ মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা, সুযোগের সমতা, অধিকার ও কর্তব্য এবং জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শিশু উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেন।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার অন্যতম শক্তি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। যারা আজকের শিশু-কিশোর। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণ এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ভেতর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৎডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলছেন। সেই বাংলাদেশের আগামী নেতৃত্ব আজকের শিশু-কিশোরদের কাছে।

বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘শিশু হও, শিশুর মতো হও। শিশুর মতো হাসতে শেখো। দুনিয়ার ভালোবাসা পাবে।’-এবিএন