শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় ঘণ্টায় মরছে ৪ শিশু, অনাহারে ৩১ শিশুর মৃত্যু

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে ইসরায়েলের টানা ছয় মাস ধরে চলা এই হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া, অনাহার ও পানিশূন্যতায় ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় নিহত হচ্ছে ৪ শিশু।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) লাইভ আপডেটে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজায় অনাহার ও পানিশূন্যতার কারণে মারা যাওয়া শিশুর সংখ্যা বেড়ে এখন ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) জানিয়েছে।

গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের চিকিৎসকরা নানা আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছেন। তারা সতর্ক করে বলেছেন, অত্যন্ত সীমিত সরবরাহ দিয়েই হাসপাতালের ওয়ার্ডে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশু এবং ছোট শিশুদের চিকিৎসা করার চেষ্টা করছেন তারা।

এদিকে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) ফিলিস্তিনি শিশু দিবসের সম্মানে বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে বেশ কয়েকটি পোস্ট প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে একটি পোস্টে লেখা ছিল, ‘গাজায় ১ হাজাার শিশু তাদের হয় একটি বা না হয় উভয় পা হারিয়েছে। আরেকটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘গাজায় প্রতি ঘণ্টায় ৪ শিশু নিহত হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৩৩ হাজার ৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরো ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন আহত হয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এদিকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই ২৪ হাজারের বেশি।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বুধবার জানায়, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় ২ হাজার ৯২২টি গণহত্যা চালিয়েছে। আর এর জেরে গাজায় মোট ১৪ হাজার ৫০০ শিশু এবং ৯ হাজার ৫৬০ জন নারী নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরো ৭ হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন বা নিখোঁজ রয়েছেন।

এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েল ত্রাণ সরবরাহ করতে দিচ্ছে না। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ ও কর্মসংস্থানবিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এ কথা জানিয়েছে। এছাড়া ত্রাণকর্মী হত্যার ঘটনায় গাজায় ত্রাণসহায়তার পরিমাণ আরো কমতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) প্রতিষ্ঠাতা জোসে আন্দ্রেজ বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজায় সংগঠনটির ত্রাণকর্মীদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ঘটনাটি ‘ভুল’ ছিল না। এটা ‘পরিকল্পিত’ হামলা। কেননা, ত্রাণকর্মীদের একের পর এক গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। জোসে আন্দ্রেজ জানান, ডব্লিউসিকের ত্রাণকর্মীদের গতিবিধি আগে থেকেই ইসরায়েলি বাহিনীকে জানানো হয়েছিল।

গত সোমবার গাজার দেইর আল–বালাহ এলাকায় ডব্লিউসিকের ত্রাণকর্মীদের ওপর বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে প্রাণ যায় সাতজনের। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফিলিস্তিনি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার দ্বৈত নাগরিক এবং যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও পোল্যান্ডের নাগরিক রয়েছেন। এ হামলাকে ‘গুরুতর ভুল’ বলে দুঃখপ্রকাশ করেছে ইসরায়েল। দেশটির সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, হামলার ঘটনা ‘স্বাধীনভাবে’ তদন্ত করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

গাজায় ঘণ্টায় মরছে ৪ শিশু, অনাহারে ৩১ শিশুর মৃত্যু

প্রকাশিত সময় : ১০:২৩:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০২৪

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে ইসরায়েলের টানা ছয় মাস ধরে চলা এই হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া, অনাহার ও পানিশূন্যতায় ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় নিহত হচ্ছে ৪ শিশু।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) লাইভ আপডেটে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজায় অনাহার ও পানিশূন্যতার কারণে মারা যাওয়া শিশুর সংখ্যা বেড়ে এখন ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) জানিয়েছে।

গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের চিকিৎসকরা নানা আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছেন। তারা সতর্ক করে বলেছেন, অত্যন্ত সীমিত সরবরাহ দিয়েই হাসপাতালের ওয়ার্ডে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশু এবং ছোট শিশুদের চিকিৎসা করার চেষ্টা করছেন তারা।

এদিকে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) ফিলিস্তিনি শিশু দিবসের সম্মানে বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে বেশ কয়েকটি পোস্ট প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে একটি পোস্টে লেখা ছিল, ‘গাজায় ১ হাজাার শিশু তাদের হয় একটি বা না হয় উভয় পা হারিয়েছে। আরেকটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘গাজায় প্রতি ঘণ্টায় ৪ শিশু নিহত হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৩৩ হাজার ৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরো ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন আহত হয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এদিকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই ২৪ হাজারের বেশি।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বুধবার জানায়, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় ২ হাজার ৯২২টি গণহত্যা চালিয়েছে। আর এর জেরে গাজায় মোট ১৪ হাজার ৫০০ শিশু এবং ৯ হাজার ৫৬০ জন নারী নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরো ৭ হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন বা নিখোঁজ রয়েছেন।

এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েল ত্রাণ সরবরাহ করতে দিচ্ছে না। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ ও কর্মসংস্থানবিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এ কথা জানিয়েছে। এছাড়া ত্রাণকর্মী হত্যার ঘটনায় গাজায় ত্রাণসহায়তার পরিমাণ আরো কমতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) প্রতিষ্ঠাতা জোসে আন্দ্রেজ বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজায় সংগঠনটির ত্রাণকর্মীদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ঘটনাটি ‘ভুল’ ছিল না। এটা ‘পরিকল্পিত’ হামলা। কেননা, ত্রাণকর্মীদের একের পর এক গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। জোসে আন্দ্রেজ জানান, ডব্লিউসিকের ত্রাণকর্মীদের গতিবিধি আগে থেকেই ইসরায়েলি বাহিনীকে জানানো হয়েছিল।

গত সোমবার গাজার দেইর আল–বালাহ এলাকায় ডব্লিউসিকের ত্রাণকর্মীদের ওপর বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে প্রাণ যায় সাতজনের। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফিলিস্তিনি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার দ্বৈত নাগরিক এবং যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও পোল্যান্ডের নাগরিক রয়েছেন। এ হামলাকে ‘গুরুতর ভুল’ বলে দুঃখপ্রকাশ করেছে ইসরায়েল। দেশটির সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, হামলার ঘটনা ‘স্বাধীনভাবে’ তদন্ত করা হবে।