বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাইডেনের গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ‘সম্মত’ ইসরায়েল

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক উপদেষ্টা নিশ্চিত করেছেন, দেশটি গাজার যুদ্ধ অবসানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উত্থাপন করা চুক্তি মেনে নিয়েছে। তবে তিনি একে ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন এটির আরও অনেক সংশোধন প্রয়োজন।

ব্রিটেনের সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুর প্রধান পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা ওফির ফালক জানান, বাইডেনের প্রস্তাব হচ্ছে ‘এমন এক চুক্তি যার সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি—এটি ভালো কোনো চুক্তি নয়। কিন্তু আমরা মনেপ্রাণে চাই জিম্মিরা মুক্তি পাক।তিনি বলেন, এখনো অনেক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেওয়া বাকি আছে। ইসরায়েলি শর্তগুলোর মধ্যে আছে জিম্মিদের মুক্তি ও গণহত্যাকারী জঙ্গি সংগঠন হামাসকে নির্মূল করা। এখনো তা বদলায়নি।

বাইডেন শুরুতে ইসরায়েলি হামলায় নিরঙ্কুশ সমর্থন জানিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অসংখ্য বেসামরিক মানুষ নিহতের ঘটনায় প্রকাশ্যে দেশটির সমালোচনা করেছেন তিনি।  যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে নেতানিয়াহুর সরকারের দেয়া তিন ধাপের একটি পরিকল্পনা শুক্রবার উপস্থাপন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

বাইডেন জানান, প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতি দেওয়া হবে এবং হামাসের হাতে বন্দি কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এরপর উভয় পক্ষ দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ীভাবে লড়াই বন্ধ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করবে। এই ধাপের অংশ হিসেবে বাকি জিম্মিরা মুক্তি পাবেন।

ফালক আবারও নেতানিয়াহুর অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, আমাদের সব লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হবে না।

জোট সরকারকে ধরে রাখতে চাপের মুখে আছেন নেতানিয়াহু। তার দুই কট্টর ডানপন্থী অংশীদার হুমকি দিয়েছেন, হামাসকে রেহাই দেওয়া হবে- এমন কোনো চুক্তিতে সম্মতি দিলে তারা সরকার ছেড়ে যাবেন। মধ্যমপন্থী অংশীদার সাবেক সেনা-জেনারেল বেনি গ্যান্টজ চান এই চুক্তি বিবেচনা করা হোক।

বাইডেনের এই উদ্যোগকে প্রাথমিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে হামাস। তাদের দাবিগুলো হলো- গাজায় স্থায়ীভাবে আগ্রাসন বন্ধের নিশ্চয়তা, ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, ফিলিস্তিনিদের অবাধে চলাফেরা করার অনুমতি এবং পুনর্নির্মাণ কাজের জন্য ত্রাণ সহায়তা।

তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এ ধরনের শর্ত নাকচ করেছেন। তারা বলছেন, এটা কার্যত ৭ অক্টোবরের আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়ার সমতুল্য। সেসময় ইসরায়েল ধ্বংসের চেতনায় বলিয়ান হামাস গাজা শাসন করছিল। সেদিন যোদ্ধারা ইসরায়েলি সীমান্তের বেড়া পেরিয়ে এসে অতর্কিত হামলা চালালে যুদ্ধের সূচনা হয়।

ইসরায়েলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় ১,২০০ মানুষ নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫০ জন।

এর প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল পাল্টা হামলা শুরুর করে। যার জেরে দরিদ্র ও উপকূলীয় ভূখণ্ডটিতে ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। ইসরায়েলের দাবি, তাদের ২৯০ সেনা এই যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বাইডেনের গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ‘সম্মত’ ইসরায়েল

প্রকাশিত সময় : ০৮:৩৪:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক উপদেষ্টা নিশ্চিত করেছেন, দেশটি গাজার যুদ্ধ অবসানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উত্থাপন করা চুক্তি মেনে নিয়েছে। তবে তিনি একে ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন এটির আরও অনেক সংশোধন প্রয়োজন।

ব্রিটেনের সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুর প্রধান পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা ওফির ফালক জানান, বাইডেনের প্রস্তাব হচ্ছে ‘এমন এক চুক্তি যার সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি—এটি ভালো কোনো চুক্তি নয়। কিন্তু আমরা মনেপ্রাণে চাই জিম্মিরা মুক্তি পাক।তিনি বলেন, এখনো অনেক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেওয়া বাকি আছে। ইসরায়েলি শর্তগুলোর মধ্যে আছে জিম্মিদের মুক্তি ও গণহত্যাকারী জঙ্গি সংগঠন হামাসকে নির্মূল করা। এখনো তা বদলায়নি।

বাইডেন শুরুতে ইসরায়েলি হামলায় নিরঙ্কুশ সমর্থন জানিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অসংখ্য বেসামরিক মানুষ নিহতের ঘটনায় প্রকাশ্যে দেশটির সমালোচনা করেছেন তিনি।  যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে নেতানিয়াহুর সরকারের দেয়া তিন ধাপের একটি পরিকল্পনা শুক্রবার উপস্থাপন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

বাইডেন জানান, প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতি দেওয়া হবে এবং হামাসের হাতে বন্দি কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এরপর উভয় পক্ষ দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ীভাবে লড়াই বন্ধ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করবে। এই ধাপের অংশ হিসেবে বাকি জিম্মিরা মুক্তি পাবেন।

ফালক আবারও নেতানিয়াহুর অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, আমাদের সব লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হবে না।

জোট সরকারকে ধরে রাখতে চাপের মুখে আছেন নেতানিয়াহু। তার দুই কট্টর ডানপন্থী অংশীদার হুমকি দিয়েছেন, হামাসকে রেহাই দেওয়া হবে- এমন কোনো চুক্তিতে সম্মতি দিলে তারা সরকার ছেড়ে যাবেন। মধ্যমপন্থী অংশীদার সাবেক সেনা-জেনারেল বেনি গ্যান্টজ চান এই চুক্তি বিবেচনা করা হোক।

বাইডেনের এই উদ্যোগকে প্রাথমিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে হামাস। তাদের দাবিগুলো হলো- গাজায় স্থায়ীভাবে আগ্রাসন বন্ধের নিশ্চয়তা, ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, ফিলিস্তিনিদের অবাধে চলাফেরা করার অনুমতি এবং পুনর্নির্মাণ কাজের জন্য ত্রাণ সহায়তা।

তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এ ধরনের শর্ত নাকচ করেছেন। তারা বলছেন, এটা কার্যত ৭ অক্টোবরের আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়ার সমতুল্য। সেসময় ইসরায়েল ধ্বংসের চেতনায় বলিয়ান হামাস গাজা শাসন করছিল। সেদিন যোদ্ধারা ইসরায়েলি সীমান্তের বেড়া পেরিয়ে এসে অতর্কিত হামলা চালালে যুদ্ধের সূচনা হয়।

ইসরায়েলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় ১,২০০ মানুষ নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫০ জন।

এর প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল পাল্টা হামলা শুরুর করে। যার জেরে দরিদ্র ও উপকূলীয় ভূখণ্ডটিতে ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। ইসরায়েলের দাবি, তাদের ২৯০ সেনা এই যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে।