শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উচ্চ আদালতে প্রথম ক্যামেরা

উচ্চ আদালতের এজলাস মানেই সুনসান নীরবতা। ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ। যেখানে শুধুই আইনজীবীদের আইনি যুক্তিতর্ক আর বিচারকদের রায় ও আদেশ। তবে, গতকাল সোমবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের প্রধান কক্ষে (প্রধান বিচারপতি এজলাস) উপস্থিত বিচারপতি, আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীরা ব্যতিক্রম ঘটনার সাক্ষী হলেন। সংস্কার, আধুনিকীকরণের পর নতুন সাজে সজ্জিত এই এজলাসে আবার বিচারকাজ শুরু করার আগে গতকাল হয় বিশেষ অধিবেশন। সর্বোচ্চ আদালতে বিচারকাজের বাইরে এক ঘণ্টার বিশেষ এই অধিবেশন নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন আইনজীবীরা। এজলাস কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের শুধু ওই সময়ে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশাধিকারের মতো বিরল ব্যতিক্রম ঘটনাও ছিল। আইনজীবীদের অনেকেই মোবাইলে ছবি তোলে বিশেষ এই দিনের স্মৃতি ধরে রাখেন।

বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া এই অধিবেশনের সময় বেঞ্চের বামদিকের আসনে ছিলেন অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন, বিচারপতি মো. রুহুল আমিন, বিচারপতি মো. তাফাজ্জল ইসলাম, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এ ছাড়া এজলাসের বেঞ্চের সামনের সারিতে ছিলেন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিরা। তাদের পেছনে আসন গ্রহণ করেছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতি। আর ব্যতিক্রম এ ঘটনার সাক্ষী হতে উপস্থিত ছিলেন অসংখ্য আইনজীবী ও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে আসা গণমাধ্যমকর্মী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নান্দনিক ও ভিন্ন সাজে সাজানো হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই এজলাস। ছাদ থেকে ঝোলানো হয়েছে সৌন্দর্যম-িত ও আলোয় পূর্ণ আটটি ঝাড়বাতি। চতুর্দিকে দেয়াল জুড়ে স্টিলের অপরূপ নকশার কারুকাজ। বিশেষ প্রয়োজনে ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম চালাতে এজলাসের বিভিন্ন দেয়ালে স্থাপন করা হয়েছে চারটি বড় টিভি মনিটর। এ ছাড়া স্থাপন করা হয়েছে আটটি সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা। আইনজীবী ও বিচারপ্রত্যাশীদের বসার সুবিধার্থে এজলাসে রাখা হয়েছে কাঠের সুদৃশ্য  আসনের ব্যবস্থা।বিকেল ৪টায় অধিবেশন শুরুর কথা থাকলেও এর আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় এজলাস কক্ষটি। অধিবেশনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। তিনি বিশেষ এই আয়োজনের জন্য প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘দুর্নীতি আমাদের অর্জন ও অগ্রগতিকে নস্যাৎ করছে। এই দুর্নীতি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো বিচার বিভাগেও ডানা মেলার চেষ্টা করছে। কার্যকর মনিটরিং, বিচার বিভাগের আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে রক্ষা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে শুধু আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। তাই বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রয়োগের পরিধি বাড়াতে হবে।’ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন তার বক্তব্যে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে আইন ও নীতিমালার তৈরি নিয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান তার বক্তব্যে দেশের আদালত ব্যবস্থা ও উচ্চ আদালতের ইতিহাস তুলে ধরেন। এ ছাড়া অধস্তন আদালতগুলোর অবকাঠামোগত সমস্যাসহ জনাকীর্ণ আদালতে বিশেষ করে প্রচন্ড গরমে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রত্যাশীদের অস্বস্তি ও আইনজীবীদের অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগীয় পরিকল্পনার একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে দেশের আদালতগুলোর ভৌত অবকাঠামোর সংস্কার, সংরক্ষণ এবং উন্নয়ন। আজ দেশের শীর্ষ আদালতের এজলাস কক্ষ সু-সজ্জিত হয়ে উঠেছে। আমি বিশ্বাস করি, এই আয়োজন নতুন দিনের সূচনা মাত্র।’ প্রধান বিচারপতি দেশের অধস্তন আদালতগুলোয় স্বচ্ছন্দ বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনার স্বার্থে স্থাপনাগুলোর আধুনিকায়ন এবং উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুবিবেচনা ও সুদৃষ্টি কামনা করেন। বক্তব্যের শেষদিকে প্রধান বিচারপতি এই এজলাস সংস্কার ও আধুনিকীকরণে সরকার, গণপূর্ত অধিদপ্তর, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, নির্মাণশ্রমিক ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

উচ্চ আদালতে প্রথম ক্যামেরা

প্রকাশিত সময় : ১০:২৫:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪

উচ্চ আদালতের এজলাস মানেই সুনসান নীরবতা। ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ। যেখানে শুধুই আইনজীবীদের আইনি যুক্তিতর্ক আর বিচারকদের রায় ও আদেশ। তবে, গতকাল সোমবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের প্রধান কক্ষে (প্রধান বিচারপতি এজলাস) উপস্থিত বিচারপতি, আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীরা ব্যতিক্রম ঘটনার সাক্ষী হলেন। সংস্কার, আধুনিকীকরণের পর নতুন সাজে সজ্জিত এই এজলাসে আবার বিচারকাজ শুরু করার আগে গতকাল হয় বিশেষ অধিবেশন। সর্বোচ্চ আদালতে বিচারকাজের বাইরে এক ঘণ্টার বিশেষ এই অধিবেশন নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন আইনজীবীরা। এজলাস কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের শুধু ওই সময়ে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশাধিকারের মতো বিরল ব্যতিক্রম ঘটনাও ছিল। আইনজীবীদের অনেকেই মোবাইলে ছবি তোলে বিশেষ এই দিনের স্মৃতি ধরে রাখেন।

বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া এই অধিবেশনের সময় বেঞ্চের বামদিকের আসনে ছিলেন অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন, বিচারপতি মো. রুহুল আমিন, বিচারপতি মো. তাফাজ্জল ইসলাম, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এ ছাড়া এজলাসের বেঞ্চের সামনের সারিতে ছিলেন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিরা। তাদের পেছনে আসন গ্রহণ করেছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতি। আর ব্যতিক্রম এ ঘটনার সাক্ষী হতে উপস্থিত ছিলেন অসংখ্য আইনজীবী ও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে আসা গণমাধ্যমকর্মী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নান্দনিক ও ভিন্ন সাজে সাজানো হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই এজলাস। ছাদ থেকে ঝোলানো হয়েছে সৌন্দর্যম-িত ও আলোয় পূর্ণ আটটি ঝাড়বাতি। চতুর্দিকে দেয়াল জুড়ে স্টিলের অপরূপ নকশার কারুকাজ। বিশেষ প্রয়োজনে ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম চালাতে এজলাসের বিভিন্ন দেয়ালে স্থাপন করা হয়েছে চারটি বড় টিভি মনিটর। এ ছাড়া স্থাপন করা হয়েছে আটটি সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা। আইনজীবী ও বিচারপ্রত্যাশীদের বসার সুবিধার্থে এজলাসে রাখা হয়েছে কাঠের সুদৃশ্য  আসনের ব্যবস্থা।বিকেল ৪টায় অধিবেশন শুরুর কথা থাকলেও এর আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় এজলাস কক্ষটি। অধিবেশনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। তিনি বিশেষ এই আয়োজনের জন্য প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘দুর্নীতি আমাদের অর্জন ও অগ্রগতিকে নস্যাৎ করছে। এই দুর্নীতি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো বিচার বিভাগেও ডানা মেলার চেষ্টা করছে। কার্যকর মনিটরিং, বিচার বিভাগের আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে রক্ষা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে শুধু আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। তাই বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রয়োগের পরিধি বাড়াতে হবে।’ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন তার বক্তব্যে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে আইন ও নীতিমালার তৈরি নিয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান তার বক্তব্যে দেশের আদালত ব্যবস্থা ও উচ্চ আদালতের ইতিহাস তুলে ধরেন। এ ছাড়া অধস্তন আদালতগুলোর অবকাঠামোগত সমস্যাসহ জনাকীর্ণ আদালতে বিশেষ করে প্রচন্ড গরমে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রত্যাশীদের অস্বস্তি ও আইনজীবীদের অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগীয় পরিকল্পনার একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে দেশের আদালতগুলোর ভৌত অবকাঠামোর সংস্কার, সংরক্ষণ এবং উন্নয়ন। আজ দেশের শীর্ষ আদালতের এজলাস কক্ষ সু-সজ্জিত হয়ে উঠেছে। আমি বিশ্বাস করি, এই আয়োজন নতুন দিনের সূচনা মাত্র।’ প্রধান বিচারপতি দেশের অধস্তন আদালতগুলোয় স্বচ্ছন্দ বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনার স্বার্থে স্থাপনাগুলোর আধুনিকায়ন এবং উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুবিবেচনা ও সুদৃষ্টি কামনা করেন। বক্তব্যের শেষদিকে প্রধান বিচারপতি এই এজলাস সংস্কার ও আধুনিকীকরণে সরকার, গণপূর্ত অধিদপ্তর, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, নির্মাণশ্রমিক ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।