বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একটি রুটির জন্য

একখণ্ড রুটির জন্য লড়ছে তারা; একটি শিশুর মুখে এক মুঠো খাবার দিতেও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে খোলা মাঠে ঘণ্টার ঘণ্টার পর দাঁড়াতে হচ্ছে তারা।

গাজা থেকে বার্তা সংস্থা রয়র্টার্সের তোলা এমন কিছু ছবি সোমবার (২৮ অক্টোবর) আলজাজিরা প্রকাশ করেছে, যেখানে ছুড়ে দেওয়া একটি রুটির প্যাকেট ধরতে সর্বশক্তি দিয়ে হাত বাড়াতে দেখা যাচ্ছে বয়স্ক নারীদের; পুরুষরাও আছে সে ময়দানে।

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দলে দলে মানুষ হত্যা করে চলেছে ইসরায়েল; গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আলজাজিরা বলেছে, এই সংখ্যা সোমবার পর্যন্ত ৪৩ হাজার ২০ জনে দাঁড়িয়েছে।

ইসরায়েলের এক বছরের বেশি সময় ধরে চালানো গণহত্যা অভিযানে আহতের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে সোমবার পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১ লাখ এক হাজার ১১০ জনে।

এই হতাহতের মধ্যে সবশেষ ৪৮ ঘণ্টায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ২৭৭ জন আহত হয়েছেন, বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

চলতি বছরের মার্চের ৪ তারিখে গাজার রাফা এলাকার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নেওয়া কিছু শিশুর ছবিসহ খবর প্রকাশ করেছিল রয়টার্স।

সেখানে গাজাতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে ক্ষুধায় ফিলিস্তিনিদের, বিশেষ করে শিশুদের মৃত্যুর তথ্য দিয়ে বিশ্বকে হুঁশিয়ার করেছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এইচআরডব্লিউ।

 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এইচআরডব্লিউ তখনই বলেছিল, ক্ষুধাকে অস্ত্র বানিয়েছে ইসরায়েল। চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে রেখে স্থল ও আকাশ অভিযান চালানোয় ক্ষতবিক্ষত উপত্যকায় বাস করা গাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে।

২০ অক্টোবর আলজাজিরাতে ক্ষুধার জ্বালায় ভোগা অপুষ্ট ফিলিস্তিনি নবজাতকদের নিয়ে লিখেছেন মার্ক স্কিয়ালিয়া, যিনি মানবাধিকার নিয়ে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা করেন এবং অ্যামি অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন।

গাজার এক মা নুর আল-হুরানি ও তার পাঁচ মাস আগে ভূমিষ্ঠ পুত্র আবদেল আজিজের বিপন্ন জীবন লিখেছেন মার্ক স্কিয়ালিয়া।  জুন মাসে জন্ম নেওয়া আজিজ পৃথিবী এসেই ক্ষুধার কষ্টে ধুকছে; এখন তার ওজন জন্মের সময়ের চেয়েও কম।

হাত-পাগুলো সরু পাটকাঠির মতো হয়ে গেছে; আজিজের চোখগুলো কোঠর থেকে যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে; সেই চোখে বিপন্ন বিস্ময় যেন; যেন প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে- কবে তার পেটে দানাপানি পড়বে আর তার শরীর বড় হবে?

সম্প্রতি আজিজের নাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না জানিয়ে মার্ক স্কিয়ালিয়া লিখেছেন, সেই ৭ অক্টোবর ইসরায়েল যেদিন গাজায় হামলা শুরু করেছিল, সেই ঘটনাই ছিল ফিলিস্তিনিদের অনাহারি হওয়ার আয়োজন।

গাজায় ইসরায়েলের প্রথম বোমাটি পড়ার দিন আজিজ তখন তার মা নুর আল-হুরানির গর্ভে ছয় মাসের সম্ভাব্য সন্তান। ক্ষুধা নিয়েই আজিজকে গর্ভে ধারণ করে তাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারলেও তার মা তার মুখে তুলে দিতে পারেননি খাবার।

আজিজের মতো হাজারও নবজাতক ও শিশুরা ধুকছে, কেউ শরণার্থী শিবিরে, কেউবা অস্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। আর আকাশ থেকে অবিরত বোমা ফেলছে ইসরায়েল; তাতে আজিজ মরছে, নাকি তার মা; তা নিয়ে কারও কোনো মাথা ব্যথা আছে বলে কার্যত দেখা যায় না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

একটি রুটির জন্য

প্রকাশিত সময় : ০৯:০৭:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

একখণ্ড রুটির জন্য লড়ছে তারা; একটি শিশুর মুখে এক মুঠো খাবার দিতেও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে খোলা মাঠে ঘণ্টার ঘণ্টার পর দাঁড়াতে হচ্ছে তারা।

গাজা থেকে বার্তা সংস্থা রয়র্টার্সের তোলা এমন কিছু ছবি সোমবার (২৮ অক্টোবর) আলজাজিরা প্রকাশ করেছে, যেখানে ছুড়ে দেওয়া একটি রুটির প্যাকেট ধরতে সর্বশক্তি দিয়ে হাত বাড়াতে দেখা যাচ্ছে বয়স্ক নারীদের; পুরুষরাও আছে সে ময়দানে।

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দলে দলে মানুষ হত্যা করে চলেছে ইসরায়েল; গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আলজাজিরা বলেছে, এই সংখ্যা সোমবার পর্যন্ত ৪৩ হাজার ২০ জনে দাঁড়িয়েছে।

ইসরায়েলের এক বছরের বেশি সময় ধরে চালানো গণহত্যা অভিযানে আহতের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে সোমবার পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১ লাখ এক হাজার ১১০ জনে।

এই হতাহতের মধ্যে সবশেষ ৪৮ ঘণ্টায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ২৭৭ জন আহত হয়েছেন, বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

চলতি বছরের মার্চের ৪ তারিখে গাজার রাফা এলাকার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নেওয়া কিছু শিশুর ছবিসহ খবর প্রকাশ করেছিল রয়টার্স।

সেখানে গাজাতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে ক্ষুধায় ফিলিস্তিনিদের, বিশেষ করে শিশুদের মৃত্যুর তথ্য দিয়ে বিশ্বকে হুঁশিয়ার করেছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এইচআরডব্লিউ।

 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এইচআরডব্লিউ তখনই বলেছিল, ক্ষুধাকে অস্ত্র বানিয়েছে ইসরায়েল। চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে রেখে স্থল ও আকাশ অভিযান চালানোয় ক্ষতবিক্ষত উপত্যকায় বাস করা গাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে।

২০ অক্টোবর আলজাজিরাতে ক্ষুধার জ্বালায় ভোগা অপুষ্ট ফিলিস্তিনি নবজাতকদের নিয়ে লিখেছেন মার্ক স্কিয়ালিয়া, যিনি মানবাধিকার নিয়ে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা করেন এবং অ্যামি অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন।

গাজার এক মা নুর আল-হুরানি ও তার পাঁচ মাস আগে ভূমিষ্ঠ পুত্র আবদেল আজিজের বিপন্ন জীবন লিখেছেন মার্ক স্কিয়ালিয়া।  জুন মাসে জন্ম নেওয়া আজিজ পৃথিবী এসেই ক্ষুধার কষ্টে ধুকছে; এখন তার ওজন জন্মের সময়ের চেয়েও কম।

হাত-পাগুলো সরু পাটকাঠির মতো হয়ে গেছে; আজিজের চোখগুলো কোঠর থেকে যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে; সেই চোখে বিপন্ন বিস্ময় যেন; যেন প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে- কবে তার পেটে দানাপানি পড়বে আর তার শরীর বড় হবে?

সম্প্রতি আজিজের নাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না জানিয়ে মার্ক স্কিয়ালিয়া লিখেছেন, সেই ৭ অক্টোবর ইসরায়েল যেদিন গাজায় হামলা শুরু করেছিল, সেই ঘটনাই ছিল ফিলিস্তিনিদের অনাহারি হওয়ার আয়োজন।

গাজায় ইসরায়েলের প্রথম বোমাটি পড়ার দিন আজিজ তখন তার মা নুর আল-হুরানির গর্ভে ছয় মাসের সম্ভাব্য সন্তান। ক্ষুধা নিয়েই আজিজকে গর্ভে ধারণ করে তাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারলেও তার মা তার মুখে তুলে দিতে পারেননি খাবার।

আজিজের মতো হাজারও নবজাতক ও শিশুরা ধুকছে, কেউ শরণার্থী শিবিরে, কেউবা অস্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। আর আকাশ থেকে অবিরত বোমা ফেলছে ইসরায়েল; তাতে আজিজ মরছে, নাকি তার মা; তা নিয়ে কারও কোনো মাথা ব্যথা আছে বলে কার্যত দেখা যায় না।