সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাবির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. পিএম সফিকুল ইসলামকে (৭০) গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া দিনভর আটকে রেখে ৭ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকালে নগরীর সাধুর মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মেহেদী মাসুদ শনিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওসি বলেন, ‘পিএম সফিকুল ইসলামকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আমাদের থানায় তার নামে কোন মামলা নেই। এখন বাগমারা থানায় তার নামে কোন মামলা আছে কি না সেটি আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’ আটকে রেখে চাঁদা দাবি ও পুলিশের ওপর আক্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়েছে। এটা হয়েই থাকে। সফিকুল ইসলামের কাছে চাঁদা দাবির বিষয়টি আমরা জানি না। তবে খতিয়ে দেখা হবে।’
গণপিটুনির শিকার পিএম শফিকুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে সম্প্রতি অবসরে গেছেন। তিনি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান। এছাড়া রাজশাহীর বাগমারা আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে বেশ কয়েকবার প্রার্থীতা ঘোষণা করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক পিএম শফিকুল ইসলাম নগরীর সাধুর মোড়ের একটি বাড়িতে অবস্থান করছেন খবর পেয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ওই বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় তাকে মারধর করে আটকে রাখা হয় একটি মাঠের মধ্যে। খবর পেয়ে বিকাল ৫টার দিকে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশের ওপর চড়াও হন কেউ কেউ। পুলিশকে আক্রমণও করা হয়। ওই সময়ের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে, ‘আওয়ামী লীগের পুলিশ’ বলে পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়।
পুলিশ নিয়ে যাওয়ার সময় পিএম সফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্দোলনের সময় আমি শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ছিলাম। আমি কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত নই। আমার নামে কোন মামলাও নেই।’ তিনি জানান, স্থানীয় এক বিএনপি নেতা ও পাড়ার ছেলেরা তাকে আটকে রেখেছিলেন। তার কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল।
সৈকত নামে রাজশাহী নগরীর সেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ধরে রেখেছি সাধুর মোড়ে, মিডিয়া আসলে পুলিশের হাতে তুলে দেব।’
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক অধ্যাপককে আওয়ামী বিরোধী বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে উদ্ধার করেছে। তাকে বোয়ালিয়া থানায় রাখা হয়েছে। তার বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা এলাকায় হওয়ার কারণে সেখানকার থানায় খোঁজ নেওয়া হচ্ছে সেখানে তার নামে কোনো অভিযোগ রয়েছে কি না। আরএমপিতে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’
উল্লেখ্য, অধ্যাপক পিএম সফিকুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অবসরের পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এবং রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্বের কমিটিতে সহ-সভাপতি ছিলেন। সর্বশেষ তিনি নেত্রকোনা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। রাবির আওয়ামী লীগ ও  প্রগতিশীলপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল প্যানেলেরও সক্রিয় শিক্ষক নেতা হিসেবে ছিলেন তিনি।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

মৌলভীবাজারে দুর্বৃত্তের হামলায় দুই সহোদর খুন

রাবির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ

প্রকাশিত সময় : ১১:০২:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. পিএম সফিকুল ইসলামকে (৭০) গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া দিনভর আটকে রেখে ৭ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকালে নগরীর সাধুর মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মেহেদী মাসুদ শনিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওসি বলেন, ‘পিএম সফিকুল ইসলামকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আমাদের থানায় তার নামে কোন মামলা নেই। এখন বাগমারা থানায় তার নামে কোন মামলা আছে কি না সেটি আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’ আটকে রেখে চাঁদা দাবি ও পুলিশের ওপর আক্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়েছে। এটা হয়েই থাকে। সফিকুল ইসলামের কাছে চাঁদা দাবির বিষয়টি আমরা জানি না। তবে খতিয়ে দেখা হবে।’
গণপিটুনির শিকার পিএম শফিকুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে সম্প্রতি অবসরে গেছেন। তিনি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান। এছাড়া রাজশাহীর বাগমারা আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে বেশ কয়েকবার প্রার্থীতা ঘোষণা করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক পিএম শফিকুল ইসলাম নগরীর সাধুর মোড়ের একটি বাড়িতে অবস্থান করছেন খবর পেয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ওই বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় তাকে মারধর করে আটকে রাখা হয় একটি মাঠের মধ্যে। খবর পেয়ে বিকাল ৫টার দিকে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশের ওপর চড়াও হন কেউ কেউ। পুলিশকে আক্রমণও করা হয়। ওই সময়ের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে, ‘আওয়ামী লীগের পুলিশ’ বলে পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়।
পুলিশ নিয়ে যাওয়ার সময় পিএম সফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্দোলনের সময় আমি শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ছিলাম। আমি কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত নই। আমার নামে কোন মামলাও নেই।’ তিনি জানান, স্থানীয় এক বিএনপি নেতা ও পাড়ার ছেলেরা তাকে আটকে রেখেছিলেন। তার কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল।
সৈকত নামে রাজশাহী নগরীর সেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ধরে রেখেছি সাধুর মোড়ে, মিডিয়া আসলে পুলিশের হাতে তুলে দেব।’
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক অধ্যাপককে আওয়ামী বিরোধী বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে উদ্ধার করেছে। তাকে বোয়ালিয়া থানায় রাখা হয়েছে। তার বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা এলাকায় হওয়ার কারণে সেখানকার থানায় খোঁজ নেওয়া হচ্ছে সেখানে তার নামে কোনো অভিযোগ রয়েছে কি না। আরএমপিতে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’
উল্লেখ্য, অধ্যাপক পিএম সফিকুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অবসরের পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এবং রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্বের কমিটিতে সহ-সভাপতি ছিলেন। সর্বশেষ তিনি নেত্রকোনা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। রাবির আওয়ামী লীগ ও  প্রগতিশীলপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল প্যানেলেরও সক্রিয় শিক্ষক নেতা হিসেবে ছিলেন তিনি।