মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতের ১০ বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বহিষ্কার

‘জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটির (জেপিসি) বৈঠক চলাকালীন সময়ে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে ভারতে একসঙ্গে ১০ সংসদ সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বহিষ্কৃতরা হলেন-কল্যাণ ব্যানার্জি (তৃণমূল কংগ্রেস), মোহাম্মদ জাভেদ (কংগ্রেস), এ রাজা (ডিএমকে), আসাদুদ্দিন ওয়াইসি (এআইএমআইএম), নাসির হোসেন (কংগ্রেস), মোহিবুল্লাহ (সমাজবাদী পার্টি), এম আব্দুল্লাহ (ডিএমকে), অরবিন্দ সাবন্ত (শিবসেনা, উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী), নাদিমুল হক (তৃণমূল) ও ইমরান মাসুদ (কংগ্রেস)।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ওয়াকফ আমেন্ডমেন্ট বিল-২০২৪ নিয়ে আলোচনার জন্য জেপিসির বৈঠক ডাকা হয়েছিল দিল্লির সংসদ ভবনের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে। সেই বৈঠকেই বিশৃঙ্খলার অভিযোগে বিরোধীদলের ১০ সাংসদকে একদিনের জন্য বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শুক্রবার সকাল ১১টায় বৈঠক শুরুর পর থেকেই হট্টগোল শুরু হয়। খসড়ায় প্রস্তাবিত পরিবর্তন নিয়ে খুঁটিয়ে দেখার জন্য তাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন বিরোধীদলের সদস্যরা।

ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের ধর্মীয় নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুকের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের মতামত শোনার কথা ছিল জিপিসির যৌথ কমিটির। কিন্তু বিরোধী সংসদ সদস্যদের অভিযোগ যে, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে বিজেপি সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিলের রিপোর্ট তাড়াতাড়ি পেশ করার জন্য জোর দিচ্ছে। এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ তৈরি হয় এবং একসময় ওই বৈঠক মুলতবি করে দিতে বাধ্য হয়। এরপর পুনরায় বৈঠক শুরু হওয়ার পর মিরওয়াইজ উমর ফারুকের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল বৈঠকে উপস্থিত হলেও বৈঠক চালানোর উপযুক্ত পরিবেশ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দুই সংসদ সদস্য কল্যাণ ব্যানার্জি এবং নাসির হোসেনের অভিযোগ এই কমিটি এবং তাদের কার্যক্রম একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে।

পরে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জী বিরোধী কণ্ঠকে দমিয়ে রাখার অভিযোগ তুলে কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পালের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‍“আমরা বারবার ৩০ এবং ৩১ জানুয়ারি জেপিসির সভা করার জন্য অনুরোধ করেছি, কিন্তু আমাদের সেই অনুরোধ উপেক্ষা করা হয়েছে। গতরাতে আমরা যখন দিল্লিতে নামলাম, বৈঠকের বিষয়বস্তু পাল্টে গেল। প্রাথমিকভাবে, আমাদের জানানো হয়েছিল যে প্রতিটি ধারা অনুসারে সভাটি চলবে। কিন্তু ভিতরে যা ঘটছে তা একটি অঘোষিত জরুরি অবস্থার মতো। দিল্লি নির্বাচনের কারণে তারা তাড়াহুড়ো করছে- এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। চেয়ারম্যান কারো কথা শোনেন না, মনে হয় ‘জমিদারি’। তারা বিরোধীদলের সদস্যদের প্রতি কোনো সম্মান দেখায় না। এই জেপিসি কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়েছে।”

যদিও, সংসদীয় গণতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপ ও গণ্ডগোল তৈরির জন্য বিরোধীদের নিন্দা করেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তিনিই প্রথম বিরোধী সংসদ সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে যা প্যানেল দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল।

‘ওয়াকফ আমেন্ডমেন্ট বিল-২০২৪’ সম্পর্কিত জেপিসির বৈঠক নিয়ে এর আগেও একাধিকবার বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। গত বছরের অক্টোবর মাসেই জেপিসি বৈঠকে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি এবং বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গাঙ্গুলীর মধ্যে বচসা বাঁধে। এরপরই রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে কাঁচের বোতল ভেঙে কমিটির চেয়ারম্যানের দিকে ছুড়ে মেরেছিলেন কল্যাণ ব্যানার্জি। ওই ঘটনায় হাতে আঘাত পেয়েছিলেন কল্যাণ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ভারতের ১০ বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বহিষ্কার

প্রকাশিত সময় : ১০:৪৯:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫

‘জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটির (জেপিসি) বৈঠক চলাকালীন সময়ে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে ভারতে একসঙ্গে ১০ সংসদ সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বহিষ্কৃতরা হলেন-কল্যাণ ব্যানার্জি (তৃণমূল কংগ্রেস), মোহাম্মদ জাভেদ (কংগ্রেস), এ রাজা (ডিএমকে), আসাদুদ্দিন ওয়াইসি (এআইএমআইএম), নাসির হোসেন (কংগ্রেস), মোহিবুল্লাহ (সমাজবাদী পার্টি), এম আব্দুল্লাহ (ডিএমকে), অরবিন্দ সাবন্ত (শিবসেনা, উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী), নাদিমুল হক (তৃণমূল) ও ইমরান মাসুদ (কংগ্রেস)।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ওয়াকফ আমেন্ডমেন্ট বিল-২০২৪ নিয়ে আলোচনার জন্য জেপিসির বৈঠক ডাকা হয়েছিল দিল্লির সংসদ ভবনের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে। সেই বৈঠকেই বিশৃঙ্খলার অভিযোগে বিরোধীদলের ১০ সাংসদকে একদিনের জন্য বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শুক্রবার সকাল ১১টায় বৈঠক শুরুর পর থেকেই হট্টগোল শুরু হয়। খসড়ায় প্রস্তাবিত পরিবর্তন নিয়ে খুঁটিয়ে দেখার জন্য তাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন বিরোধীদলের সদস্যরা।

ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের ধর্মীয় নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুকের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের মতামত শোনার কথা ছিল জিপিসির যৌথ কমিটির। কিন্তু বিরোধী সংসদ সদস্যদের অভিযোগ যে, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে বিজেপি সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিলের রিপোর্ট তাড়াতাড়ি পেশ করার জন্য জোর দিচ্ছে। এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ তৈরি হয় এবং একসময় ওই বৈঠক মুলতবি করে দিতে বাধ্য হয়। এরপর পুনরায় বৈঠক শুরু হওয়ার পর মিরওয়াইজ উমর ফারুকের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল বৈঠকে উপস্থিত হলেও বৈঠক চালানোর উপযুক্ত পরিবেশ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দুই সংসদ সদস্য কল্যাণ ব্যানার্জি এবং নাসির হোসেনের অভিযোগ এই কমিটি এবং তাদের কার্যক্রম একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে।

পরে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জী বিরোধী কণ্ঠকে দমিয়ে রাখার অভিযোগ তুলে কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পালের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‍“আমরা বারবার ৩০ এবং ৩১ জানুয়ারি জেপিসির সভা করার জন্য অনুরোধ করেছি, কিন্তু আমাদের সেই অনুরোধ উপেক্ষা করা হয়েছে। গতরাতে আমরা যখন দিল্লিতে নামলাম, বৈঠকের বিষয়বস্তু পাল্টে গেল। প্রাথমিকভাবে, আমাদের জানানো হয়েছিল যে প্রতিটি ধারা অনুসারে সভাটি চলবে। কিন্তু ভিতরে যা ঘটছে তা একটি অঘোষিত জরুরি অবস্থার মতো। দিল্লি নির্বাচনের কারণে তারা তাড়াহুড়ো করছে- এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। চেয়ারম্যান কারো কথা শোনেন না, মনে হয় ‘জমিদারি’। তারা বিরোধীদলের সদস্যদের প্রতি কোনো সম্মান দেখায় না। এই জেপিসি কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়েছে।”

যদিও, সংসদীয় গণতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপ ও গণ্ডগোল তৈরির জন্য বিরোধীদের নিন্দা করেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তিনিই প্রথম বিরোধী সংসদ সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে যা প্যানেল দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল।

‘ওয়াকফ আমেন্ডমেন্ট বিল-২০২৪’ সম্পর্কিত জেপিসির বৈঠক নিয়ে এর আগেও একাধিকবার বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। গত বছরের অক্টোবর মাসেই জেপিসি বৈঠকে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি এবং বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গাঙ্গুলীর মধ্যে বচসা বাঁধে। এরপরই রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে কাঁচের বোতল ভেঙে কমিটির চেয়ারম্যানের দিকে ছুড়ে মেরেছিলেন কল্যাণ ব্যানার্জি। ওই ঘটনায় হাতে আঘাত পেয়েছিলেন কল্যাণ।