মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অবশেষে বরিশালে মেয়র ও প্রশাসনের মধ্যে সমঝোতা

বরিশালে ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতির অবসান হলো অবশেষে। রবিবার (২২ আগস্ট) রাতে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সরকারি কর্মকর্তারা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে এ পরিস্থিতির অবসান হয়। বিবদমান দুই পক্ষই মামলা প্রত্যাহারে রাজি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ দিন রাতে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদলের আহ্বানে তার সরকারি বাসভবনে উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে বিরাজমান পরিস্থিতি সমাধানে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সমঝোতা বৈঠকে অংশ নেয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বৈঠকে অংশ নেয়া একজন রাজনৈতিক নেতা বলেন, রাত ৯ টার দিকে শুরু হওয়া সমঝোতা বৈঠক চলে প্রায় ১১টা পর্যন্ত। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বুধবার রাতের টনার রেশ আর সামনে আগাবে না। গ্রেপ্তার হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জামিনেরও বিরোধীতা করা হবে না। প্রশাসনও তাদের মনোভাব থেকে নিজেদের সংযত করবেন। গ্রেপ্তার অভিযানও বন্ধ রাখা হবে।

মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, প্রক্রিয়াগতভাবে মামলার ফয়সালা হবে। আশা করি প্রশাসনের মামলা দুটি প্রত্যাহার হবে। আমাদের তরফ থেকে দায়ের করা মামলার বিষয়ে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।

বৈঠকের পর মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে বরিশাল চেম্বার এবং সিটি কাউন্সিলরদের আহ্বান করা সোমবার অনুষ্ঠিতব্য সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে।

সভায় অংশ নেয়া আরেক রাজনৈতিক নেতা বলেন, বরিশালের মঙ্গলের জন্য যা যা করা দরকার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে তা করেছি।

বৈঠকে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুছ, মহানগর আ.লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর, সহ-সভাপতি ও প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল ইসলাম লিটু, প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন ডিআইজি এস এম আখতারুজ্জামান, মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. সাহাব উদ্দীন খান, জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার এবং র‌্যাব ৮ এর অধিনায়ক।

তবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এ বৈঠক ও সমঝোতার বিষয়ে বিবৃতি দেওয় হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের বিবৃতি

তবে দলীয় কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত কোন মন্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।

এর আগে দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংকালে সমঝোতার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। রবিবার সচিবালয়ে নিজ কক্ষে তিনি এ মন্তব্য করেন। এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, বরিশালের ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝি থেকে হয়েছে। এটা এখন নিরসনের পথে। উভয় পক্ষ নিজেদের অবস্থান থেকে নিরসনের চেষ্টা করছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, বর্জ্য অপসারণের বিষয়ে অভিযোগের পরও তারা কিন্তু কাজ করেছে। প্রতিবাদ মিটিং-মিছিল ছিল, সেটা তো বন্ধ হয়েছে। হয়তো প্রশাসন ও মেয়র পরস্পরের মধ্যে কিছু আলোচনা হয়েছে। তারা হয়তো একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে এসেছে। মেয়র তো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। স্বাভাবিকভাবেই তিনি একজন দায়িত্বশীল মানুষ। তারা বুঝেছে, এটা নিজেদের মধ্যে একটা মিস-আন্ডারস্ট্যান্ডিং। এটা কারও জন্যই শুভকর না। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে ভুল বোঝাবুঝিই হয়েছে। আপনারা কি অন্য কিছু মনে করেন নাকি? সব ঘটনা ভুল বোঝাবুঝি থেকেই হয়।

বরিশালের ঘটনায় মেয়রকে প্রধান আসামি করে মামলা দেয়ার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, মামলা করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

প্রসঙ্গত, পোস্টার-ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অর্ধ-শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু, ঝুলন্ত  লাশ উদ্ধার

অবশেষে বরিশালে মেয়র ও প্রশাসনের মধ্যে সমঝোতা

প্রকাশিত সময় : ০৯:৩৯:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ অগাস্ট ২০২১

বরিশালে ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতির অবসান হলো অবশেষে। রবিবার (২২ আগস্ট) রাতে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সরকারি কর্মকর্তারা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে এ পরিস্থিতির অবসান হয়। বিবদমান দুই পক্ষই মামলা প্রত্যাহারে রাজি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ দিন রাতে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদলের আহ্বানে তার সরকারি বাসভবনে উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে বিরাজমান পরিস্থিতি সমাধানে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সমঝোতা বৈঠকে অংশ নেয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বৈঠকে অংশ নেয়া একজন রাজনৈতিক নেতা বলেন, রাত ৯ টার দিকে শুরু হওয়া সমঝোতা বৈঠক চলে প্রায় ১১টা পর্যন্ত। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বুধবার রাতের টনার রেশ আর সামনে আগাবে না। গ্রেপ্তার হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জামিনেরও বিরোধীতা করা হবে না। প্রশাসনও তাদের মনোভাব থেকে নিজেদের সংযত করবেন। গ্রেপ্তার অভিযানও বন্ধ রাখা হবে।

মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, প্রক্রিয়াগতভাবে মামলার ফয়সালা হবে। আশা করি প্রশাসনের মামলা দুটি প্রত্যাহার হবে। আমাদের তরফ থেকে দায়ের করা মামলার বিষয়ে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।

বৈঠকের পর মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে বরিশাল চেম্বার এবং সিটি কাউন্সিলরদের আহ্বান করা সোমবার অনুষ্ঠিতব্য সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে।

সভায় অংশ নেয়া আরেক রাজনৈতিক নেতা বলেন, বরিশালের মঙ্গলের জন্য যা যা করা দরকার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে তা করেছি।

বৈঠকে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুছ, মহানগর আ.লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর, সহ-সভাপতি ও প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল ইসলাম লিটু, প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন ডিআইজি এস এম আখতারুজ্জামান, মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. সাহাব উদ্দীন খান, জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার এবং র‌্যাব ৮ এর অধিনায়ক।

তবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এ বৈঠক ও সমঝোতার বিষয়ে বিবৃতি দেওয় হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের বিবৃতি

তবে দলীয় কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত কোন মন্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।

এর আগে দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংকালে সমঝোতার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। রবিবার সচিবালয়ে নিজ কক্ষে তিনি এ মন্তব্য করেন। এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, বরিশালের ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝি থেকে হয়েছে। এটা এখন নিরসনের পথে। উভয় পক্ষ নিজেদের অবস্থান থেকে নিরসনের চেষ্টা করছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, বর্জ্য অপসারণের বিষয়ে অভিযোগের পরও তারা কিন্তু কাজ করেছে। প্রতিবাদ মিটিং-মিছিল ছিল, সেটা তো বন্ধ হয়েছে। হয়তো প্রশাসন ও মেয়র পরস্পরের মধ্যে কিছু আলোচনা হয়েছে। তারা হয়তো একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে এসেছে। মেয়র তো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। স্বাভাবিকভাবেই তিনি একজন দায়িত্বশীল মানুষ। তারা বুঝেছে, এটা নিজেদের মধ্যে একটা মিস-আন্ডারস্ট্যান্ডিং। এটা কারও জন্যই শুভকর না। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে ভুল বোঝাবুঝিই হয়েছে। আপনারা কি অন্য কিছু মনে করেন নাকি? সব ঘটনা ভুল বোঝাবুঝি থেকেই হয়।

বরিশালের ঘটনায় মেয়রকে প্রধান আসামি করে মামলা দেয়ার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, মামলা করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

প্রসঙ্গত, পোস্টার-ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অর্ধ-শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়।