মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা, ব্যস্ততা বেড়েছে জেলেপল্লীতে

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ইলিশ শিকার সরকারি নিষেধাজ্ঞা আজ সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে।

গত ৪ অক্টোবর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়।

ভোলা জেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে যাওয়ার জন্য প্রায় ৩ লাখ জেলে শেষ সময়ে জাল বুনন, ট্রলার মেরামত ও পুরাতন জাল রিপু করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

অন্যদিকে জেলার ৭ উপজেলায় মা ইলিশ শিকার নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন ১ লাখ ৩২ হাজার জেলে পরিবারের জন্য ২০ কেজি করে মোট ২ হাজার ৬৪০ মেট্রিকটন চাল ভিজিএফর বিতরণ করা হয়েছে। যার ফলে অধিকাংশ জেলেই আইন মান্য করে মাছ ধরা থেকে বিরত রেখেছে নিজেদের। তারপরেও যারা আইন ভঙ্গ করছে স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।

ভোলা সদরের ইলিশা ফেরিঘাট, তুলাতলী, ভোলার খাল, ইলিশা বিশ্বরোডসহ মেঘনা পাড়ের বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলেদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। নদীর কুল ঘেঁষে বাঁধের উপর রাখা হয়েছে সারি সারি নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার।

কেউ পুরোনো জালকে নতুন করে রিপু করছে। কেউবা নতুন জাল বুনতে ব্যস্ত। আবার কেউ নৌকা-ট্রলার মেরামত করছে। কেউ নৌ-যানের নিচের অংশে পুডিং ও আলকাতরা লাগাচ্ছেন।

সব মিলিয়ে একটা কাজের সময় বিরাজ করছে পল্লীগুলোতে। শিশু থেকে শুরু করে কেউ বসে নেই। সম্মিলিতভাবে পরিবারের সবাই কাজে হাত লাগাচ্ছে। এসব পরিবারগুলো স্বপ্ন দেখছে ইলিশের প্রাচুর্যতায় তাদের অভাব দূর হবে।

জেলে রহিম ও রুবেল জানান, এখন নদীতে মাছ ধরা বন্ধ, নৌকা-ট্রলার নিয়ে নদীতে যাওয়া হচ্ছে না। ধার দেনা করে দিন পার করছি। সামনে আসছে মাছ ধরার সময়, তাই নৌকা মেরামত করছি। আগে থেকে নৌকা তৈরি করতে না পারলে তখন সময় পাবো না। মাছ শিকারে যাওয়ার জন্য নৌকা মেরামত ও রং দেয়ার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন  জেলে মনির ও  মিজান।

তারা জানান, এ বছর ভরা মৌসুমে তেমন মাছ ধরা পড়েনি। আশা করি নিষেধাজ্ঞার পর ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে। তখন মাছ ধরেই ঋণ পরিশোধ করতে পারবো। কাল থেকে মাছ শিকারে সব জেলে নদীতে নেমে পড়বেন বলে জানান তারা।

জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম মেম্বার জানান, সরকারের মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমের ফলে নদীতে ইলিশের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এ বছর অধিকাংশ জেলেই আইন মান্য করেছে। বর্তমানে জেলেদের নৌকা-ট্রলার-জালসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ইলিশ শিকারের জন্য প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে। আশা করছেন সামনের দিনগুলোতে ব্যাপক ইলিশ পাবেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজাহারুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল থেকে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে এ বছর নির্বিঘ্নে মা ইলিশ তাদের ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। সরকারের ব্যাপক প্রচার প্রচারণার ফলে অধিকাংশ জেলেই ইলিশ শিকার থেকে বিরত ছিল। তারপরেও অসাধু যারা আইন ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু, ঝুলন্ত  লাশ উদ্ধার

মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা, ব্যস্ততা বেড়েছে জেলেপল্লীতে

প্রকাশিত সময় : ০৫:৪০:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অক্টোবর ২০২১

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ইলিশ শিকার সরকারি নিষেধাজ্ঞা আজ সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে।

গত ৪ অক্টোবর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়।

ভোলা জেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে যাওয়ার জন্য প্রায় ৩ লাখ জেলে শেষ সময়ে জাল বুনন, ট্রলার মেরামত ও পুরাতন জাল রিপু করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

অন্যদিকে জেলার ৭ উপজেলায় মা ইলিশ শিকার নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন ১ লাখ ৩২ হাজার জেলে পরিবারের জন্য ২০ কেজি করে মোট ২ হাজার ৬৪০ মেট্রিকটন চাল ভিজিএফর বিতরণ করা হয়েছে। যার ফলে অধিকাংশ জেলেই আইন মান্য করে মাছ ধরা থেকে বিরত রেখেছে নিজেদের। তারপরেও যারা আইন ভঙ্গ করছে স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।

ভোলা সদরের ইলিশা ফেরিঘাট, তুলাতলী, ভোলার খাল, ইলিশা বিশ্বরোডসহ মেঘনা পাড়ের বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলেদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। নদীর কুল ঘেঁষে বাঁধের উপর রাখা হয়েছে সারি সারি নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার।

কেউ পুরোনো জালকে নতুন করে রিপু করছে। কেউবা নতুন জাল বুনতে ব্যস্ত। আবার কেউ নৌকা-ট্রলার মেরামত করছে। কেউ নৌ-যানের নিচের অংশে পুডিং ও আলকাতরা লাগাচ্ছেন।

সব মিলিয়ে একটা কাজের সময় বিরাজ করছে পল্লীগুলোতে। শিশু থেকে শুরু করে কেউ বসে নেই। সম্মিলিতভাবে পরিবারের সবাই কাজে হাত লাগাচ্ছে। এসব পরিবারগুলো স্বপ্ন দেখছে ইলিশের প্রাচুর্যতায় তাদের অভাব দূর হবে।

জেলে রহিম ও রুবেল জানান, এখন নদীতে মাছ ধরা বন্ধ, নৌকা-ট্রলার নিয়ে নদীতে যাওয়া হচ্ছে না। ধার দেনা করে দিন পার করছি। সামনে আসছে মাছ ধরার সময়, তাই নৌকা মেরামত করছি। আগে থেকে নৌকা তৈরি করতে না পারলে তখন সময় পাবো না। মাছ শিকারে যাওয়ার জন্য নৌকা মেরামত ও রং দেয়ার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন  জেলে মনির ও  মিজান।

তারা জানান, এ বছর ভরা মৌসুমে তেমন মাছ ধরা পড়েনি। আশা করি নিষেধাজ্ঞার পর ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে। তখন মাছ ধরেই ঋণ পরিশোধ করতে পারবো। কাল থেকে মাছ শিকারে সব জেলে নদীতে নেমে পড়বেন বলে জানান তারা।

জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম মেম্বার জানান, সরকারের মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমের ফলে নদীতে ইলিশের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এ বছর অধিকাংশ জেলেই আইন মান্য করেছে। বর্তমানে জেলেদের নৌকা-ট্রলার-জালসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ইলিশ শিকারের জন্য প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে। আশা করছেন সামনের দিনগুলোতে ব্যাপক ইলিশ পাবেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজাহারুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল থেকে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে এ বছর নির্বিঘ্নে মা ইলিশ তাদের ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। সরকারের ব্যাপক প্রচার প্রচারণার ফলে অধিকাংশ জেলেই ইলিশ শিকার থেকে বিরত ছিল। তারপরেও অসাধু যারা আইন ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।