মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এলো আষাঢ়

আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ। রাজধানীতে বিরাজ করছে মেঘ মেঘ আবহ। কোথাওবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সকাল থেকেই আকাশ গুরুগম্ভীর। যেনো আষাঢ়েরই রূপ। বাংলার প্রকৃতিতে আলাদা বৈশিষ্টময় বর্ষা ঋতুর আজ যাত্রা শুরু হলো।

বলা হয়, গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর রুদ্র প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। তৃষ্ণাকাতর জগত্সংসার। গ্রীষ্মের রুক্ষ খরতাপে ওষ্ঠাগত প্রাণ-মন সিক্ত করতে বর্ষা যে খুবই আকাঙ্ক্ষার। জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড খরতাপে রুক্ষ প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠবে বর্ষার বর্ষণের মৃদঙ্গ-ছোঁয়ায়, এটাই যে সকল বাঙালির চাওয়া।

পুষ্প-বৃক্ষে-পত্রপল্লবে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে নতুন সুরের বার্তা নিয়ে এসেছে বর্ষা। রবিঠাকুরের ভাষায় ‘ঐ আসে ঐ ঘন গৌরবে নবযৌবন বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা…’

আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রঙিন হয়ে পুকুর-বিলে ফোটে শাপলা-পদ্ম। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। তাই বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না।

‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’—এই বর্ষার অঙ্গশোভা। কেতকীর মন মাতানো সুবাস, জুঁই, কামিনী, বেলি, রজনিগন্ধা, দোলনচাঁপা আর কদমফুলের চোখ জুড়ানো শোভা অনুষঙ্গ হয়ে আছে আষাঢ়ের। জীবনানন্দ দাশ আষাঢ়কে বলেছেন, ‘ধ্যানমগ্ন বাউল-সুখের বাঁশি’।

বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চারকারী। বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের সৌন্দর্য্য যে দেখেছে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে না থেকে পারেনি। এর বর্ণনায় পল্লীকবি জসীমউদদীন লিখেছেন- ‘বনের ঝিয়ারি কদম্বশাখে নিঝঝুম নিরালায়, / ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে, অস্ফুট কলিকায়।’

বৃষ্টি হলে গ্রামের নদী নালা পুকুরে জল জমে থৈ থৈ করে। নদীর তীর উপচে কখনও বা ধেয়ে আসে বন্যা। তখন গ্রামের সাধারণ লোকজনের কষ্টের শেষ থাকে না। তারপরও গ্রীষ্মের তাপদাহ এড়িয়ে বর্ষায় বারিধারায় শান্তি খুঁজে পায় মানুষ। বর্ষা আনন্দ-বেদনার সারথী। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে বর্ষা আনে জীবনেরই বারতা। বর্ষাকে সুস্বাগতম।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু, ঝুলন্ত  লাশ উদ্ধার

এলো আষাঢ়

প্রকাশিত সময় : ১১:০২:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪

আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ। রাজধানীতে বিরাজ করছে মেঘ মেঘ আবহ। কোথাওবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সকাল থেকেই আকাশ গুরুগম্ভীর। যেনো আষাঢ়েরই রূপ। বাংলার প্রকৃতিতে আলাদা বৈশিষ্টময় বর্ষা ঋতুর আজ যাত্রা শুরু হলো।

বলা হয়, গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর রুদ্র প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। তৃষ্ণাকাতর জগত্সংসার। গ্রীষ্মের রুক্ষ খরতাপে ওষ্ঠাগত প্রাণ-মন সিক্ত করতে বর্ষা যে খুবই আকাঙ্ক্ষার। জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড খরতাপে রুক্ষ প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠবে বর্ষার বর্ষণের মৃদঙ্গ-ছোঁয়ায়, এটাই যে সকল বাঙালির চাওয়া।

পুষ্প-বৃক্ষে-পত্রপল্লবে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে নতুন সুরের বার্তা নিয়ে এসেছে বর্ষা। রবিঠাকুরের ভাষায় ‘ঐ আসে ঐ ঘন গৌরবে নবযৌবন বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা…’

আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রঙিন হয়ে পুকুর-বিলে ফোটে শাপলা-পদ্ম। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। তাই বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না।

‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’—এই বর্ষার অঙ্গশোভা। কেতকীর মন মাতানো সুবাস, জুঁই, কামিনী, বেলি, রজনিগন্ধা, দোলনচাঁপা আর কদমফুলের চোখ জুড়ানো শোভা অনুষঙ্গ হয়ে আছে আষাঢ়ের। জীবনানন্দ দাশ আষাঢ়কে বলেছেন, ‘ধ্যানমগ্ন বাউল-সুখের বাঁশি’।

বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চারকারী। বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের সৌন্দর্য্য যে দেখেছে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে না থেকে পারেনি। এর বর্ণনায় পল্লীকবি জসীমউদদীন লিখেছেন- ‘বনের ঝিয়ারি কদম্বশাখে নিঝঝুম নিরালায়, / ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে, অস্ফুট কলিকায়।’

বৃষ্টি হলে গ্রামের নদী নালা পুকুরে জল জমে থৈ থৈ করে। নদীর তীর উপচে কখনও বা ধেয়ে আসে বন্যা। তখন গ্রামের সাধারণ লোকজনের কষ্টের শেষ থাকে না। তারপরও গ্রীষ্মের তাপদাহ এড়িয়ে বর্ষায় বারিধারায় শান্তি খুঁজে পায় মানুষ। বর্ষা আনন্দ-বেদনার সারথী। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে বর্ষা আনে জীবনেরই বারতা। বর্ষাকে সুস্বাগতম।