বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র ফরিদপুর, আহত অন্তত ২৫

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ৭ নভেম্বর বিপ্লবী ও সংহতি দিবসে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হন।

শুক্রবার(৭ নভেম্বর) বিকেল ৫ টার দিকে উপজেলা সদরের ওয়াবদা মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।এ সময় উপজেলা বিএনপির একাংশের কার্যালয়ে ভাঙচুরসহ আগুন দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ১৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় আশপাশের ১০ থেকে ১২ টি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। একপর্যায়ে এক ঘন্টার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। তবে এখনও দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

আহতরা হলেন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মিনাজুর রহমান লিপন, লিয়াকত মোল্লা, রফিকুল ইসলাম, টিটু, জব্বার, ইমদাদুল হক, লাভলু প্রমুখ। আহতদের বোয়ালমারী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষকদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এ ছাড়া সম্প্রতি বিএনপির মনোনয়ন ও উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে ৭ নভেম্বর বিপ্লবী ও সংহতি দিবস উপলক্ষে দুই পক্ষ পৃথক সমাবেশ র্যালির আয়োজন করে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বোয়ালমারীর ওয়াবদা মোড়ে হারুন শফিং কমপ্লেক্সে অবস্থিত উপজেলা বিএনপির একাংশের কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচির আয়োজন করেন শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু ও তার সমর্থকেরা। অপরদিকে চৌরাস্তা এলাকায় একই কর্মসূচির আয়োজন করে নাসিরুল ইসলাম ও তার সমর্থকেরা। বিকেলে দুই পক্ষের লোকজন বোয়ালমারী বাজারে জড়ো হচ্ছিল। উভয় পক্ষের শত শত মানুষ যাওয়া আসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ সময় বিক্ষুব্ধরা আশেপাশের অন্তত ৮ থেকে ১০ টি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। তারা অন্তত পনেরোটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রায় এক ঘণ্টা সময় ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চলে। এ সময় ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন অনেকে এবং অন্যরা দ্রুত সরে যান।খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নেভাতে আসলে বিক্ষুব্ধদের মুখে পড়ে ফিরে যায়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক ও নবগঠিত কমিটির সহসভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু বলেন, ‘নাসির গ্রুপ সমর্থিত নেতাকর্মীরা বহিরাগত লোকজন এনে আমাদের নেতাকর্মী ও অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে।’

বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির নব গঠিত কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঝুনু মিয়ার সমর্থকরা উস্কানি দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ভাড়া করে এনে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের লোকজন দিয়ে ঝুনু গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীদের আহত করেন।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লা আল মাসুম জানান, হাসপাতালে সাতজন আহত অবস্থায় আসেন। এর মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এরকম বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে ধারণা ছিল না।‘

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র ফরিদপুর, আহত অন্তত ২৫

প্রকাশিত সময় : ১০:৩৯:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ৭ নভেম্বর বিপ্লবী ও সংহতি দিবসে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হন।

শুক্রবার(৭ নভেম্বর) বিকেল ৫ টার দিকে উপজেলা সদরের ওয়াবদা মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।এ সময় উপজেলা বিএনপির একাংশের কার্যালয়ে ভাঙচুরসহ আগুন দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ১৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় আশপাশের ১০ থেকে ১২ টি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। একপর্যায়ে এক ঘন্টার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। তবে এখনও দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

আহতরা হলেন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মিনাজুর রহমান লিপন, লিয়াকত মোল্লা, রফিকুল ইসলাম, টিটু, জব্বার, ইমদাদুল হক, লাভলু প্রমুখ। আহতদের বোয়ালমারী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষকদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এ ছাড়া সম্প্রতি বিএনপির মনোনয়ন ও উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে ৭ নভেম্বর বিপ্লবী ও সংহতি দিবস উপলক্ষে দুই পক্ষ পৃথক সমাবেশ র্যালির আয়োজন করে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বোয়ালমারীর ওয়াবদা মোড়ে হারুন শফিং কমপ্লেক্সে অবস্থিত উপজেলা বিএনপির একাংশের কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচির আয়োজন করেন শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু ও তার সমর্থকেরা। অপরদিকে চৌরাস্তা এলাকায় একই কর্মসূচির আয়োজন করে নাসিরুল ইসলাম ও তার সমর্থকেরা। বিকেলে দুই পক্ষের লোকজন বোয়ালমারী বাজারে জড়ো হচ্ছিল। উভয় পক্ষের শত শত মানুষ যাওয়া আসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ সময় বিক্ষুব্ধরা আশেপাশের অন্তত ৮ থেকে ১০ টি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। তারা অন্তত পনেরোটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রায় এক ঘণ্টা সময় ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চলে। এ সময় ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন অনেকে এবং অন্যরা দ্রুত সরে যান।খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নেভাতে আসলে বিক্ষুব্ধদের মুখে পড়ে ফিরে যায়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক ও নবগঠিত কমিটির সহসভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু বলেন, ‘নাসির গ্রুপ সমর্থিত নেতাকর্মীরা বহিরাগত লোকজন এনে আমাদের নেতাকর্মী ও অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে।’

বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির নব গঠিত কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঝুনু মিয়ার সমর্থকরা উস্কানি দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ভাড়া করে এনে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের লোকজন দিয়ে ঝুনু গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীদের আহত করেন।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লা আল মাসুম জানান, হাসপাতালে সাতজন আহত অবস্থায় আসেন। এর মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এরকম বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে ধারণা ছিল না।‘