মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লেপের কাভার সব সময় লাল কাপড়ে হয় কেন?

চলছে শীতকাল। এই শীতের মৌসুমে বাঙালির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত লেপ-তোশক। শীতের আগমন মানেই লেপ-তোশকের বাজারে সরগরম প্রস্তুতি। রঙবাহারি ব্ল্যাঙ্কেটের চল যতই বাড়ুক না কেন, বাঙালির শীতে লেপের রয়েছে একটা আলাদা কদর। তাই শীত পড়ার আগেই লেপ-তোশকের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে দেখা যায়। এ সময় লেপ-তোশকের কারিগর ও ব্যবসায়ীরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শীত আসার আগেই দোকান ছেয়ে যায় লাল আভায়। আর এই লেপ মানেই যেন তুলায় মোড়ানো লাল কাপড়।

লেপ-তোশক বিছানার একটি অংশ, যা বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত ও নেপালে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাধারণত লেপের আবরণ সিল্ক বা মখমলের হয়ে থাকলেও, এর ভেতরে রয়েছে তুলা, যা খুব ঠান্ডা আবহাওয়াতেও প্রচুর পরিমাণে উষ্ণতা পাওয়া যায়।

অনেকের ধারণা, লাল কাপড়ে লেপ মোড়ানোর কারণ শুধু ইতিহাস বা ঐতিহ্য নয়; ব্যবসার খাতিরেই ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়ে থাকে। দূর থেকে ক্রেতার নজর কাড়তে লাল কাপড় ব্যবহার একটি কৌশলমাত্র।

আসলে কি তাই? লাল রঙ সহজে ধুলা ও ময়লা বা দাগ ঢেকে দেয়। ফলে লেপ দীর্ঘদিনও অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার দেখায়। এটি একটি বড় ব্যবহারিক সুবিধা। সে কারণে সাধারণত লেপে লাল কাপড় ব্যবহৃত হয়। তবে যে যাই বলুক না কেন— লাল লেপ কেবল শীতকালীন উষ্ণতার প্রতীক নয়; এটি একটি বাঙালির সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের গল্পেরও অংশ।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, ইতিহাস কী বলে— লেপে কেন লাল কাপড়ই ব্যবহার করা হয়?

সাধারণত লেপের কাভারের রঙ লাল হওয়ার পেছনে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস। বাংলায় লেপের প্রাচীনত্ব খুঁজে পাওয়া যায় মুর্শিদকুলি খাঁর আমল থেকে, যিনি ছিলেন বাংলার প্রথম নবাব। সেই সময় মুর্শিদাবাদ কারুকার্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। লম্বা আঁশের কার্পাস তুলাকে বীজ ছাড়িয়ে লাল রঙে চুবিয়ে শুকিয়ে নরম সিল্ক বা মখমলের কাভারে ভরা হতো। সেই থেকে লাল রঙের ঐতিহ্য রূপ নিয়েছে।

শুধু তাই নয়, লেপে সুগন্ধির জন্য আতরও ব্যবহার করা হতো, যা একসময় লেপকে শুধু উষ্ণ রাখাই হতো না, বরং তার মর্যাদা ও সৌন্দর্যও বাড়িয়ে তোলা হতো। সেই সময় বিহারসহ অবিভক্ত বাংলার নবাবরাও এ রীতিটি অনুসরণ করতেন।

নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর মেয়ের জামাই নবাব সুজাউদ্দিন মখমলের পরিবর্তে সিল্ক কাপড় ব্যবহার শুরু করেছিলেন। কিন্তু রঙের কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। লালই থেকে গেছে।

সময়ের বিবর্তনে মখমল ও সিল্কের কাপড় সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয়বহুল হলেও পরবর্তী সময় সাধারণ কাপড়ের ব্যবহারও শুরু হয়। তবু লেপের রঙ লালই থেকে যায়, যা আজও বাংলাদেশের শীতকালীন লেপের একটি ঐতিহ্যবাহী বৈশিষ্ট্য হিসেবে সমাদৃত।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু, ঝুলন্ত  লাশ উদ্ধার

লেপের কাভার সব সময় লাল কাপড়ে হয় কেন?

প্রকাশিত সময় : ১০:৫৫:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৫

চলছে শীতকাল। এই শীতের মৌসুমে বাঙালির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত লেপ-তোশক। শীতের আগমন মানেই লেপ-তোশকের বাজারে সরগরম প্রস্তুতি। রঙবাহারি ব্ল্যাঙ্কেটের চল যতই বাড়ুক না কেন, বাঙালির শীতে লেপের রয়েছে একটা আলাদা কদর। তাই শীত পড়ার আগেই লেপ-তোশকের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে দেখা যায়। এ সময় লেপ-তোশকের কারিগর ও ব্যবসায়ীরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শীত আসার আগেই দোকান ছেয়ে যায় লাল আভায়। আর এই লেপ মানেই যেন তুলায় মোড়ানো লাল কাপড়।

লেপ-তোশক বিছানার একটি অংশ, যা বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত ও নেপালে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাধারণত লেপের আবরণ সিল্ক বা মখমলের হয়ে থাকলেও, এর ভেতরে রয়েছে তুলা, যা খুব ঠান্ডা আবহাওয়াতেও প্রচুর পরিমাণে উষ্ণতা পাওয়া যায়।

অনেকের ধারণা, লাল কাপড়ে লেপ মোড়ানোর কারণ শুধু ইতিহাস বা ঐতিহ্য নয়; ব্যবসার খাতিরেই ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়ে থাকে। দূর থেকে ক্রেতার নজর কাড়তে লাল কাপড় ব্যবহার একটি কৌশলমাত্র।

আসলে কি তাই? লাল রঙ সহজে ধুলা ও ময়লা বা দাগ ঢেকে দেয়। ফলে লেপ দীর্ঘদিনও অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার দেখায়। এটি একটি বড় ব্যবহারিক সুবিধা। সে কারণে সাধারণত লেপে লাল কাপড় ব্যবহৃত হয়। তবে যে যাই বলুক না কেন— লাল লেপ কেবল শীতকালীন উষ্ণতার প্রতীক নয়; এটি একটি বাঙালির সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের গল্পেরও অংশ।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, ইতিহাস কী বলে— লেপে কেন লাল কাপড়ই ব্যবহার করা হয়?

সাধারণত লেপের কাভারের রঙ লাল হওয়ার পেছনে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস। বাংলায় লেপের প্রাচীনত্ব খুঁজে পাওয়া যায় মুর্শিদকুলি খাঁর আমল থেকে, যিনি ছিলেন বাংলার প্রথম নবাব। সেই সময় মুর্শিদাবাদ কারুকার্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। লম্বা আঁশের কার্পাস তুলাকে বীজ ছাড়িয়ে লাল রঙে চুবিয়ে শুকিয়ে নরম সিল্ক বা মখমলের কাভারে ভরা হতো। সেই থেকে লাল রঙের ঐতিহ্য রূপ নিয়েছে।

শুধু তাই নয়, লেপে সুগন্ধির জন্য আতরও ব্যবহার করা হতো, যা একসময় লেপকে শুধু উষ্ণ রাখাই হতো না, বরং তার মর্যাদা ও সৌন্দর্যও বাড়িয়ে তোলা হতো। সেই সময় বিহারসহ অবিভক্ত বাংলার নবাবরাও এ রীতিটি অনুসরণ করতেন।

নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর মেয়ের জামাই নবাব সুজাউদ্দিন মখমলের পরিবর্তে সিল্ক কাপড় ব্যবহার শুরু করেছিলেন। কিন্তু রঙের কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। লালই থেকে গেছে।

সময়ের বিবর্তনে মখমল ও সিল্কের কাপড় সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয়বহুল হলেও পরবর্তী সময় সাধারণ কাপড়ের ব্যবহারও শুরু হয়। তবু লেপের রঙ লালই থেকে যায়, যা আজও বাংলাদেশের শীতকালীন লেপের একটি ঐতিহ্যবাহী বৈশিষ্ট্য হিসেবে সমাদৃত।