মাথাব্যথার সমস্যা অনেকেরই আছে। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, প্রবল মাথা ব্যথা হওয়ার সমস্যা নারীদেরই বেশি হয়। পুরুষদের যে হয় না, এমনটা নয়। কিন্তু নারীদেরই এই সমস্যা বেশি হয়।
নারীদের মাথাব্যথা বেশি হয় কেন?
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এর কারণ জানা গেছে। ইউএসএ-র ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়া (ইউভিএ)-র স্কুল অফ মেডিসিনে হওয়া এক গবেষণা বলছে, এর জন্য স্ত্রী-হরমোন প্রোজেস্টেরন দায়ী। ইঁদুরের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালিয়ে ওই গবেষণায় আরও জানা গেছে, শরীরের প্রোজেস্টেরন রিসেপ্টরকে যদি কোনো ওষুধ দিয়ে ব্লক করে দেওয়া যায়, তাহলেই মাইগ্রেন অ্যাটাকের আশঙ্কা কমানো যায় পুরোপুরি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি ৫ জন নারীর মধ্যে একজনেরই মাইগ্রেন ক্লাস্টার হেডেকের সমস্যা রয়েছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা প্রতি ২০ জনে এক-দুই জনের। আবার প্রতি চার জন মাইগ্রেন রোগীর মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তিন জন নারী। কিন্তু কেন নারীদের এ সমস্যা বেশি হয় সেই কারণ এতদিন অজানা ছিল। ইউভিএ-র গবেষণায় সেটিই জানা গেল।
প্রকল্পটির মুখ্য গবেষক, ইউভিএ ব্রেন ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা, স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কাপুর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নারীদের কেন মাইগ্রেন বেশি হয়, সেটা খুঁজতে গিয়েই বোঝা যায়, সমস্যাটা স্ত্রী-হরমোন প্রোজেস্টেরনের। সেটাকে ‘ক্রস-চেক’ করতে গিয়ে ব্লক করা হয় ইঁদুরের প্রোজেস্টেরন রিসেপ্টরকে। নিউরোলজিক্যালি তাতে দেখা যায়, কমে যাচ্ছে মাইগ্রেনের এপিসোড।
চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশই এই গবেষণাকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। পেইন ম্যানেজমেন্টের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গৌতম দাসের মতে, ‘এই গবেষণা যুগান্তকারী। কেবল নারীদের মাইগ্রেন প্রবণতার কথাই এই গবেষণা বলে না, সেটা কমানোর পথও দেখায়।’ তবে তার মতে, প্রোজেস্টেরন রিসেপ্টর ব্লক করে মাইগ্রেন সারানোর যে উপায় এই গবেষণা দেখিয়েছে, তা নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা দরকার। দেখা দরকার, সেই থেরাপি অন্য কোনো পার্শ্ব বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিচ্ছে কিনা অথবা কোনো স্ত্রীরোগ কিংবা ক্যানসারের আশঙ্কাকে উসকে দিচ্ছে কিনা।
অনেকাংশে একমত পেইন ম্যানেজমেন্টের আর এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেবাঞ্জলি রায়। তিনি বলেন, ‘এই গবেষণায় মূলত রজঃস্বলা নারীদের উপরই ফোকাস রাখা হয়েছে। তাই প্রোজেস্টেরনের মতো একটি স্টেরয়েড গোত্রের স্ত্রী-হরমোনের ভূমিকা দেখা গিয়েছে। একইভাবে ইস্ট্রোজেন নামের স্ত্রী-হরমোনের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা উচিত।’
তার মতে, মেনোপজের পরে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করলে কেন মাথা ধরার সমস্যার উন্নতি হয়, এবার তা বোঝা গেল ভালো ভাবে।
তবে চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু এমন অ্যানাটমিক্যাল বা ফিজিয়োলজিক্যাল ফ্যাক্টরের কারণেই যে নারীদের মাথাব্যথার সমস্যা বেশি দেখা যায়, তা-ই নয়। বরং এর নেপথ্যে রয়েছে তাদের কিছু সামাজিক আচরণ ও অভ্যাস। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অলোকেশ কোলে বলেন, ‘নারীদের মধ্যে বেশিক্ষণ খালি পেটে থাকা ও খিদে চেপে রাখার একটা প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনেকটা কমে গিয়ে মাইগ্রেনের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয়।’
আর এক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাসের মতে, ‘নারীদের মধ্যে বাসি খাবার খাওয়ার প্রবণতাও বেশি দেখা যায়। আর বাসি খাবারে টাইরামিন নামের এক ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। পনির ও ছানার তৈরি খাবারে এটা আরও বাড়ে। আর স্টাইরিন এমন একটি রাসায়নিক যা পেটে গেলে রক্তবাহিকায় এমন কিছু পরিবর্তন ঘটায় যা মাইগ্রেনের সহায়ক।’

রিপোর্টারের নাম 
























